আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ঋণ নেওয়া প্রসঙ্গ নিয়ে দেশে বুদ্ধিবৃত্তিক অপচর্চা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব ড. আহমেদ কায়কাউস। তিনি বলেছেন, ‘আইএমএফ যখন এসেছে, তখন দেখা হয়েছে তাদের চারটি ক্ষেত্র থেকে বাংলাদেশ কী কী নিতে পারে। চারটি ক্ষেত্রে দেখা গেছে যে, সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলারের মতো নেওয়া সম্ভব। এর মধ্যে ব্যালেন্স অব পেমেন্ট হচ্ছে একটি, বাকি ছিল ক্লাইমেট ফান্ডে। সেটি শুধু আলোচনার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। এর জন্য আনুষ্ঠানিক যোগাযোগও কিন্তু হয়নি।’ গতকাল বনানীর ঢাকা গ্যালারিতে এডিটরস গিল্ড বাংলাদেশের আয়োজনে ‘বেসামাল বিশ্ব অর্থনীতি ও বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন।
এডিটরস গিল্ডের সভাপতি মোজাম্মেল বাবুর সভাপতিত্বে গোলটেবিল বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের অর্থনীতিবিদ ও নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন, বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ এবং এডিটরস গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের সম্পাদক ইনাম আহমেদ। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন অগ্রণী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ এবং গ্লোবাল টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রধান সম্পাদক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা প্রমুখ।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব বলেন, ‘আমি যদি দেখি, বাজারে কোথায় কোথায় আমার প্রোডাক্ট আছে সেটা কি অপরাধ? তাহলে বেইলআউট (চরম আর্থিক সংকট বা প্রায় দেউলিয়া অবস্থা) কেন? আমার দুঃখ লাগে, এই বছর বাংলাদেশের জন্য গর্বের। আমরা পদ্মা সেতু করেছি, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ হচ্ছে, এই সময়ে বেইলআউট হবে বলা মানেই হচ্ছে নিজের ওপর নিজের আত্মবিশ্বাস নেই। বিশ্বের অর্থনীতির উত্থান-পতনের সঙ্গে আমাদের একটা নিবিড় সম্পর্ক আছে। এই ধাক্কা হঠাৎ এসেছে। কারণ রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রে দেখা যায়, নেওয়ার সময় একটা যুদ্ধ চলে। আমরা বলি না কিন্তু সেখানে বেশি দামে নেয়। হয়তো অন্যভাবে কাজটা করতে চায়। সেই কারণে কিন্তু হঠাৎ করে ডলারের ওপর একটা চাপ পড়েছিল। সেটি তো এখন ধীরে ধীরে সংশোধনের দিকে চলে আসছে। এই আশঙ্কা আগে থেকেই যে থাকা লাগবে তা কিন্তু দরকার না।’জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এর পেছনে সরকারের যে দর্শন কাজ করেছে, তা হচ্ছে ডলারের ওপর চাপ হয়তো কন্টিনিউ করতে পারে। যার জন্য আমাদের কিছু ব্যবস্থা আগে থেকেই নিতে হবে। বাজেট ঘাটতি পূরণ হয় কোথা থেকে, হয় ট্যাক্স বাড়াতে হবে আর নইলে ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে হবে। ব্যাংক থেকে নিলে বেসরকারি খাতে কিন্তু প্রভাব পড়ে। সে রকম কিছু যাতে না হয়, সে জন্য আমরা আগে থেকেই কিছু সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিই। পশ্চিমবঙ্গে মাথাপিছু আয় ২ হাজার ১০০ ডলারের কাছাকাছি। বাংলাদেশে প্রায় ৩ হাজার ডলার। বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় সেখান থেকে বেশি হলে ডিজেলের মূল্য কম থাকবে কেন। তারা যদি কিনে চলতে পারে, তাহলে আমরা কেন পারব না। সেটা যে একদম অসহনীয় পর্যায়ে চলে যাবে না, সেটার একটা হিসাব আমরা করেছি।’
বাজারে বিভিন্ন পণ্যের ঘাটতি প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘বাজারে একটা ঘাটতি সবসময় থাকে। এখানে ডিমের সিন্ডিকেট কোথা থেকে আসল আমার জানা নেই। ৩ কোটি টন চাল উৎপাদন করা হয় বাংলাদেশে। অর্থনীতিতে আমরা একটি জিনিস বলি পারফেক্ট মার্কেট; সেটি পৃথিবীতে কোথাও নেই। আমাদের অনেক ভালো ভালো দিক আছে, সেগুলো দিয়ে শুরু করলে আমাদের কিন্তু সাহস বাড়বে। আমরা কিন্তু প্রথমে ভয় দিয়ে শুরু করি। আমাদের বাজেট নিয়েও অনেকে ঠাট্টা করে। ২০০৫ সাল থেকে কিন্তু আমাদের বাজেট ১০ গুণ বেড়েছে। সেই অর্থে কিন্তু সরকারি কর্মকর্তার সংখ্যা ১০ গুণ বাড়েনি।’