দেশের চিনিকলগুলোর অবসরে যাওয়া শ্রমিক-কর্মচারী-কর্মকর্তারা বকেয়া পরিশোধের দাবিতে গতকাল বিক্ষোভ করেছেন। পঞ্চগড় চিনিকল, শ্যামপুর চিনিকল, সেতাবগঞ্জ চিনিকল, রংপুর চিনিকল, মোবারকগঞ্জ চিনিকল, নাটোর সুগার মিলস, ফরিদপুর চিনিকলের প্রধান ফটকের সামনে বিক্ষোভ, মানববন্ধন ও পরে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন- দীর্ঘদিনেও তাদের গ্র্যাচুইটি এবং প্রভিডেন্ট ফান্ডের পাওনা পরিশোধ করা হচ্ছে না। এ কারণে অনেক অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী বিনা চিকিৎসায় মারা গেছেন। তারা সন্তানদের পড়াশোনা করাতে পারছেন না। দুর্মূল্যের বাজারে না খেয়ে জীবনযাপন করছেন। প্রতিনিধিদের খবর-
পঞ্চগড় চিনিকল : পঞ্চগড় চিনিকলের অবসরে যাওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীরা গতকাল দুপুরে বিক্ষোভ সমাবেশ ও স্মারকলিপি প্রদান করেন। পঞ্চগড় চিনিকল অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক কর্মচারী ও কর্মকর্তা কল্যাণ সমিতির সভাপতি নাইবুল ইসলাম ও সম্পাদক শহীদুল্লাহ বলেন, ২০১৭ সাল থেকে অবসরে যাওয়া ২৭৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী গ্র্যাচুইটির টাকা পাচ্ছেন না। তারা মানবেতর জীবন যাপন করছেন। অনেকে মেয়ের বিয়ে দিতে পারছেন না। পড়াশোনার খরচ চালাতে পারছেন না। অনেকে অর্থাভাবে মৃত্যুবরণ করেছেন। অনেকে অসুস্থতায় ভুগছেন। প্রয়োজনীয় ওষুধ কিনতে পারছেন না। ২৭৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর গ্র্যাচুইটি বাবদ ১১ কোটি ৬০ লাখ টাকার প্রয়োজন। কিন্তু বরাদ্দের অভাবে এ টাকা প্রদান করতে পারছে না চিনিকল কর্তৃপক্ষ। ২০১৯-২০২০ মৌসুম থেকে চিনিকলটিকে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খুরশিদ জাহান মাফরুহা মানববন্ধনে এসে দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, বাজেট বরাদ্দ না পাওয়ায় বকেয়া পরিশোধ করা যাচ্ছে না।
শ্যামপুর চিনিকল : রংপুর জেলার শ্যামপুর চিনিকলের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে। চিনিকলের সামনে অবস্থান নেন আড়াই শতাধিক শ্রমিক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী। তারা জানান, ২০১৪ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত যারা অবসরে গেছেন তাদের গ্র্যাচুইটি এবং প্রভিডেন্ট ফান্ডের পাওনা পরিশোধ করা হচ্ছে না। উত্তরাঞ্চলে বন্ধ করা ছয়টি চিনিকলও অবিলম্বে চালুর দাবি জানানো হয়েছে কর্মসূচিতে। পরে তারা শ্যামপুর সুগার মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহসান হাবীবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে দ্রুত গ্র্যাচুইটি ও পিএফ ফান্ডের টাকা পরিশোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান।সেতাবগঞ্জ চিনিকল : দিনাজপুরে সেতাবগঞ্জ চিনিকলের মূল ফটকের সামনে প্রায় দুই শতাধিক অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক-কর্মচারী ও কর্মকর্তা পাওনার দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ, মানববন্ধন করে। পরে সেতাবগঞ্জ চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. হুমায়ুন কবিরকে না পেয়ে মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মো. ফয়জুল হকের কাছে দাবিনামার স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
রংপুর চিনিকল : গাইবান্ধার জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার মহিমাগঞ্জে রংপুর চিনিকলের প্রধান ফটকের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে। এজেএম শহীদুল আলমের সভাপতিত্বে বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তৃতা করেন তবিবর রহমান, শামসুল ইসলাম, নাজমুল হক প্রমুখ। বক্তারা গ্র্যাচুইটির সব অর্থ পরিশোধ, বকেয়া গ্র্যাচুইটির টাকা ক্ষতিপূরণসহ প্রদান ও সরকারি নির্দেশনা মতে অবসরপ্রাপ্তদের উৎসব ভাতা, বৈশাখী ভাতা ও চিকিৎসা ভাতা প্রদানের দাবি জানান।
মোবারকগঞ্জ চিনিকল : ঝিনাইদহ জেলার মোবারকগঞ্জ চিনিকলের মেইন গেটের সামনে বিক্ষোভ ও ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন পালন করা হয়। বক্তব্য রাখেন আব্দুল কাদের, মোস্তফা আব্দুল জলিল, আতিয়ার রহমান ও সোহেল আহমেদ প্রমুখ। মোস্তফা আব্দুল জলিল বলেন, মোবারকগঞ্জ চিনিকলে প্রায় ১৭৫ জন শ্রমিক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী অবসরোত্তর গ্র্যাচুইটি বাবদ প্রায় ১৬ কোটি ৮৫ লাখ টাকা পাবে। দীর্ঘদিন পার হলেও মিল কর্তৃপক্ষ টাকা নেই অজুহাতে পরিশোধ করছেন না।
নাটোর সুগার মিলস : নাটোর সুগার মিলসে বিক্ষোভ ও সমাবেশ হয়েছে। সকাল ৯ টার দিকে মিলের প্রধান ফটকের সামনে এই বিক্ষোভ সমাবেশ হয়। চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের কর্মচারী এবং কর্মকর্তা কল্যাণ সমিতির অধীনে দেশব্যাপী এই কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়। আলাউদ্দিন প্রামাণিকের সভাপতিত্বে এবং আবু রায়হান ভুলুর পরিচালনায় এই বিক্ষোভ সমাবেশ হয়। নাটোর সুগার মিলের ৩৮৫ জন কর্মচারী-কর্মকর্তার প্রায় ৪০০ কোটি টাকা বকেয়া পাওনা রয়েছে।
ফরিদপুর চিনিকল : ফরিদপুরের মধুখালীতে ফরিদপুর চিনিকলে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। সকাল ১০টায় ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের মধুখালী রেলগেট এলাকায় কর্মসূচি পালন করা হয়।
ফরিদপুর চিনিকলের ৩২১ জন শ্রমিক কর্মচারী ও কর্মকর্তার গ্র্যাচুইটি, সরকার ঘোষিত জাতীয় মজুরী কমিশন, মজুরী ও বেতন স্কেলের বকেয়াসহ ফরিদপুর চিনিকলের কাছে প্রায় ২৫ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। ৬/৭ বছর অবসর গ্রহণ করলেও পাওনা টাকা পাচ্ছে না। ৩২১টি পরিবার মানবেতর জীবনযাপন করছে।