রবিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা
বিশ্ব নদী দিবস আজ

সোমেশ্বরীর বুকে হাজারো ক্ষত

নেত্রকোনা প্রতিনিধি

সোমেশ্বরীর বুকে হাজারো ক্ষত

প্রতি বছর বিশ্ব নদী দিবস পালিত হলেও প্রতিনিয়ত নদীর মৃত্যু ঘটিয়ে চলছে মানুষ। পরিবেশ রক্ষায় নদীর ভূমিকা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা থাকলেও কার্যকারিতা শুধু সিদ্ধান্তেই সীমাবদ্ধ। সারা দেশের মতো নেত্রকোনার অর্ধশতাধিক নদী একসময় জেলার উন্নয়নে ভূমিকা রাখলেও এখন অর্ধেকের চেয়েও বেশি নদী বিলুপ্ত। মৃতপ্রায় নদীগুলো। যেমন মেঘালয় পাহাড় দিয়ে নেমে আসা সিমস্যাং পাহাড়ি নদীটি বাংলাদেশের  ভিতরে সোমেশ্বরী নামে চলমান থাকলেও দিন দিন মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছে। তার বুকে এখন হাজারো ক্ষতচিহ্ন। নদীর বুকে প্রায় এক কিলোমিটার ধু-ধু বালুচর। পাহাড়ি সীমান্তে সুসং রাজার দুর্গাপুরে সোমেশ্বর পাঠকের নামে নামকরণ এই নদীটি প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর। নৈসর্গিক সৌন্দর্যের অপার লীলাভূমি হাতছানি দিয়ে ডাকে পর্যটক। স্বচ্ছ পানির কলকল ধ্বনি মুগ্ধ করত ভ্রমণপিপাসুদের। নদীতে ছিল মহাশোল নামক বিপন্ন প্রজাতির মাছসহ নানা রকমের মাছ। কিন্তু নদীর গর্ভে থাকা প্রাকৃতিক সম্পদের অপব্যবহারে নদীটি এখন প্রায় মৃত।

নদীর বুকে অস্ত্র ঠেকিয়ে অপরিকল্পিতভাবে তোলা হচ্ছে বালু-পাথর। ফলে নদী হারাচ্ছে গতিপথ। এবড়োখেবড়ো হয়ে গেছে নদীর বুক। নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ। ধ্বংস হয়েছে মাছসহ জলজ প্রাণী। এদিকে এর সৌন্দর্য দেখতে আসা দর্শনার্থী যেমন কমছে, তেমনি নদীপাড়ের মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে। নদীর ভিতরেই এক কিলোমিটার হেঁটে যেতে হয় নৌকার কাছে। দুর্ভোগের সীমা নেই মানুষের।

জেলার রাজস্ব শাখা সূত্রে জানা গেছে, নদীর ছয়টি বালুমহাল থেকে গত বছর ইজারা বাবদ ৫৩ কোটি ৮৪ লাখ ৭১ হাজার ৮৫০ টাকা রাজস্ব পেলেও চলতি বছর পাওয়া গেছে ৯৩ কোটি ১৭ লাখ ৬৩ হাজার ৭৫০ টাকা।

নদীর গর্ভে থাকা বালু আর পাথরের খনি দিয়ে সরকারের রাজস্ব আয়ের পাশাপাশি জীবিকা নির্বাহ করছে এ অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে একশ্রেণির লুটেরা অপরিকল্পিতভাবে অবৈধ পন্থায় বালু উত্তোলন করে রাতারাতি হচ্ছে অঢেল টাকার মালিক। লোভে পড়ে অবৈধ ও অপরিকল্পিতভাবে বালু-পাথর উত্তোলন করে একশ্রেণির পরিবেশ বিধ্বংসী পিশাচ আজ ধ্বংসের পথে দাঁড় করিয়েছে নদীটিকে।

নদী শাসনের মাধ্যমে এবং প্রশাসনের আন্তরিকতায় নদীটি বাঁচিয়ে পুরো এলাকা বাঁচানো যেতে পারে বলে এখনো দাবি স্থানীয়দের। এদিকে নদীগুলো আমাদের দেশের সম্পদ উল্লেখ করে নবাগত জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ জানান, চকচকে স্বচ্ছ পানির সোমেশ্বরী নদীটির প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা করা সবার দায়িত্ব। এ থেকে সরকারের রাজস্ব আয় যেমন হচ্ছে তেমন পরিবেশ রক্ষায় বিশাল ভূমিকা রাখছে এই নদীটি। কাজেই এর সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে এবং নদীটিকে বাঁচিয়ে রাখতে নানা চেষ্টার কথা জানান তিনি। সেই সঙ্গে বালু উত্তোলনে এরই মধ্যে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ইজারাদারদের।

সর্বশেষ খবর