মঙ্গলবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

বৈদেশিক ঋণের চাপ কমানোর পথ খুঁজছে সরকার

টাকার অবমূল্যায়নে ঋণের বোঝা বাড়ছে, ডলারের আধিপত্য কমানোর কোনো উদ্যোগই কাজে আসছে না

মানিক মুনতাসির

ঋণের চাপ কমানোর কৌশল খুঁজছে সরকার। ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমায় বৈদেশিক ঋণের চাপ বাড়ছে অব্যাহতভাবে। এদিকে ডলারের আধিপত্য কমানোর কোনো উদ্যোগই কাজে আসছে না। করোনা মহামারি শেষ হওয়ার আগেই শুরু হওয়া ডলার সংকট মেটাতে আমদানিতে বিভিন্ন ধরনের নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে সরকার। ফলে আমদানি কমলেও ডলারের সরবরাহ স্বাভাবিক হয়নি। এতে বৈদেশিক ঋণের চাপও বাড়ছে। ফলে বৈদেশিক ঋণের চাপ কমাতে নতুন কৌশল খুঁজছে সরকার। এ জন্য অপেক্ষাকৃত কম সুদের নমনীয় বৈদেশিক ঋণের উৎস খোঁজা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সম্ভাব্য ৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ নেবে কি না সে বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত নয়। এর চেয়ে সহজ শর্তের কোনো ঋণ পেলে সেটাকেই প্রাধান্য দেবে সরকার- এমনটাই জানিয়েছে অর্থ বিভাগ। এদিকে অর্থনীতিবিদদের ভাষায়, যে দেশের অর্থনীতি যত বেশি চাপ নিতে সক্ষম সে দেশের অর্থনীতির গভীরতা তত বেশি। আবার যে দেশের অর্থনীতিতে ঋণ নেওয়া ও পরিশোধের ধারা যতটা ইতিবাচক সে দেশের অর্থনীতি তত বেশি টেকসই। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল যে কোনো দেশকে ঋণ দেওয়ার আগে যতগুলো মূল্যায়ন করে সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো, সংশ্লিষ্ট দেশের অর্থনৈতিক কাঠামোর ভঙ্গুরতা কতটুকু। জাতিসংঘের সব শেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৮ ও ২০২১ সাল এই দুই বারের মূল্যায়নে এ সূচকে বাংলাদেশ ২৭ দশমিক ২ পয়েন্ট অর্জন করেছে। যে কোনো দেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা (এলডিসি) থেকে বের হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করতে এ সূচকে ৩২ পয়েন্ট বা এর নিচে থাকতে হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, দেশের মানুষের কাঁধে ঋণের বোঝা বাড়ছে অব্যাহতভাবে। বর্তমানে দেশের প্রতিটি নাগরিকের মাথাপিছু ঋণের পরিমাণ ৯৫ হাজার ৬০০ টাকা। আজ যে শিশুটি জন্ম নেবে, তার মাথায়ও সমপরিমাণ এই ঋণের দায় চাপবে। গত এক বছরে মাথাপিছু ঋণ বেড়েছে ১০ হাজার ৮৩০ টাকা। আগামী এক বছরে এটা আরও প্রায় ১৫ হাজার টাকা বাড়বে। ফলে ওই সময়ে মাথাপিছু ঋণের স্থিতি দাঁড়াবে ১ লাখ ১১ হাজার টাকা। ঋণের এই চাপ বাড়ার অন্যতম কারণ ডলারের মূল্যবৃদ্ধি। গত বছর ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের মোট বৈদেশিক ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ৭৯ কোটি ডলার। ওই সময়ে টাকার হিসাবে ঋণ ছিল ৭ লাখ ৭৯ হাজার কোটি টাকা। ডিসেম্বরে ডলারের বিপরীতে টাকার মান ছিল ৮৫ টাকা ৮০ পয়সা। গত আট-নয় মাসে ডলারের বিপরীতে টাকার মান অন্তত ১০ টাকা কমেছে। আর বাস্তবে এটা কমেছে ২০ টাকারও বেশি। ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের কারণে এই সময়ে বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকায়। এদিকে গত অর্থবছরের জুলাই থেকে এপ্রিল পর্যন্ত বৈদেশিক ঋণ আরও বেড়েছে। ওই সময়ে ঋণ বেড়েছে প্রায় ১ হাজার ৩৪ কোটি ডলার। এর মধ্যে সরকারি খাতে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ ৭৫২ কোটি ডলার। অন্যান্য খাতে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ ৯৮ কোটি ডলার। স্বল্পমেয়াদি ঋণ ৭৯ কোটি ডলার এবং বাণিজ্যিক ঋণ ১০৫ কোটি ডলার। স্বল্পমেয়াদি ও বাণিজ্যিক ঋণের প্রায় সবই নিয়েছে বেসরকারি খাত। ওই সময়ে ঋণের কিস্তি পরিশোধ করা হয়েছে ১৩০ কোটি ডলার। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সরকারের ঋণের বোঝা বাড়ার জন্য ডলারের মূল্য বৃদ্ধিও একটা বড় কারণ। এ ছাড়া উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে বাজেট ঘাটতি মেটানো ভালো নয়। এতে ঋণের বোঝা বাড়ে। এতে আর্থিক খাতের শৃঙ্খলা নষ্টের আশঙ্কা থাকে। ফলে সরকার যদি নমনীয় ঋণ নেয় কিংবা কম সুদের ঋণ নেয় তাহলে চাপ অনেকটা কমবে বলে তিনি মনে করেন। এদিকে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের বড় ধাক্কাটা আসবে ২০২৪ ও ২০২৬ সালে। কেননা বাংলাদেশে ২০টি মেগা প্রকল্প চলমান। এসব প্রকল্পের মোট ব্যয় ৭০ দশমিক শূন্য ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ৫ লাখ ৫৬ হাজার ৯৫৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে বিদেশি ঋণই ৪৩ বিলিয়ন ডলার। এই চাপ কমানোর প্রস্তুতিটা এখন থেকেই নিতে চায় সরকার- এমনটাই জানিয়েছেন অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা।

 

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর