বৃহস্পতিবার, ৬ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

পরিবেশ দূষণে বাড়ছে রোগ

শামীম আহমেদ

ভয়াবহ দূষণের কবলে দেশের মাটি, পানি, বায়ু। শব্দদূষণ ও বায়ুদূষণে পৃথিবীর সব শহরকে ছাড়িয়েছে দেশের রাজধানী ঢাকা। কলকারখানার বিষাক্ত বর্জ্য, মানববর্জ্য, অপচনশীল প্লাস্টিক বর্জ্যে সয়লাব নদ-নদী, খাল-বিল। এই দূষণের বলি হচ্ছে দেশের মানুষ। বিশেষজ্ঞদের মতে, পরিবেশ দূষণের কারণে বাড়ছে ক্যান্সার, হৃদরোগ, বন্ধ্যাত্ব, বধিরতা, যক্ষা, হেপাটাইটিস, হাঁপানি, টাইফয়েডসহ নানা জটিল রোগ। কমছে মানুষের কর্মক্ষমতা। চিকিৎসায় বাড়ছে সরকারের ভর্তুকি। চিকিৎসার খরচ মেটাতে গিয়ে অনেক পরিবার নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে।

গত মে মাসে যুক্তরাজ্যভিত্তিক স্বাস্থ্যবিষয়ক সাময়িকী ল্যানসেট প্লানেটারি হেলথ জার্নালে ‘পল্যুশন অ্যান্ড হেলথ : অ্যা প্রোগ্রেস আপডেট’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, বিষাক্ত বায়ু ও বর্জ্য দূষণের কারণে বাংলাদেশে প্রতি বছর ২ লাখেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। দূষণজনিত এ মৃত্যুতে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ষষ্ঠ, যেখানে প্রথম অবস্থানে ভারত। প্রতিবেদনে বলা হয়, বিভিন্ন প্রকার দূষণজনিত কারণে বাংলাদেশে ২০১৯ সালে ২ লাখ ১৫ হাজার ৮২৪ জনের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে শুধু বায়ু দূষণের কারণেই সর্বাধিক ১ লাখ ৭৩ হাজার ৫১৫ জনের মৃত্যু হয়। দূষণজনিত মৃত্যুর মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যুর কারণ পানি দূষণ। প্রতি বছর পানি দূষণে ৩০ হাজার ৮৭৪ জনের  প্রাণহানি হয়। এ ছাড়া অন্যান্য দূষণজনিত মৃত্যুর মধ্যে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে সীসা দূষণ। সীসা দূষণের কারণে দেশে ৩০ হাজার ৭৭৭ জনের মৃত্যু হয়। এ ছাড়া পেশাগত দূষণে মারা যান ১০ হাজার ২৮৯ জন। দূষণজনিত মৃত্যুর বৈশ্বিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করতে গিয়ে গবেষকরা দেখতে পান, প্রতি বছর দূষণজনিত কারণে বিশ্বে ৯০ লাখ মানুষ মারা যাচ্ছে, যার প্রায় ৭৫ শতাংশই বায়ু দূষণের কারণে।

আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন পরিবেশ বিজ্ঞানী ও বাংলাদেশ সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড স্টাডিজ (বিসিএএস)-এর নির্বাহী পরিচালক ড. আতিক রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ভয়াবহ দূষণের কবলে মাটি, পানি ও বায়ু। এর ক্ষতি ব্যাপক। বর্তমানে নানা ধরনের রোগব্যাধি বাড়ছে। কোন দূষণ কী ধরণের স্বাস্থ্যঝুকি তৈরি করছে, কী রোগ বাড়ছে, এটা নিয়ে গবেষণা করা জরুরি। পলিথিন ও প্লাস্টিক বর্জ্য রাষ্ট্রীয়ভাবে রিসাইকেল করা উচিত।

এদিকে এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের (এসডো) এক জরিপে দেখা গেছে, প্রতি বছর ৮৭ হাজার টন একবার ব্যবহারযোগ্য পলিথিন প্লাস্টিক বাংলাদেশে ব্যবহৃত হয়। এর মধ্যে রয়েছে প্লাস্টিকের স্ট্র, কটনবাড, ফুড প্যাকেজিং, ফুড কনটেইনার, বোতল, প্লেট, প্লাস্টিক চামচ, প্লাস্টিক, ব্যাগ, পেস্ট, শ্যাম্পুর প্যাকেট ইত্যাদি। বর্জ্য অব্যবস্থাপনার কারণে এসব প্লাস্টিক কৃষি জমি, পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা, নদী-নালা, খাল-বিল ও সমুদ্রে প্রবাহিত হয়ে প্রতিবেশ ব্যবস্থার মারাত্মক ক্ষতি করছে। সেই সঙ্গে ক্ষতি করছে জনস্বাস্থ্যের। পরিবেশ অধিদফতরের হিসাবে, পলিথিনসহ হিসাব করলে বাংলাদেশে প্রতি বছর ১০ লাখ ৯৫ হাজার টন প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদিত হয়। এদিকে গত ফেব্রুয়ারিতে জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচির (ইউএনইপি) প্রকাশ করা প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি শব্দদূষণের শিকার হন ঢাকার বাসিন্দারা। বায়ুমান পর্যবেক্ষণকারী আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান এয়ার ভিজ্যুয়ালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, অক্টোবর থেকে মে পর্যন্ত শুষ্ক মৌসুমে প্রায়ই বায়ুদূষণে বিশ্বের মধ্যে শীর্ষে থাকছে ঢাকা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর