বৃহস্পতিবার, ৬ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা
অষ্টম কলাম

কাল থেকে ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ দাম বেশ চড়া

নিজস্ব প্রতিবেদক

কাল থেকে ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ দাম বেশ চড়া

প্রধান প্রজনন মৌসুমে ইলিশ মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা  দেওয়া হয়েছে। মা ইলিশের প্রজনন নিরাপদ রাখার লক্ষ্যে আগামীকাল ৭ থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিন সারা দেশে ইলিশ ধরা বন্ধ থাকবে। এ সময়ে পরিবহন, কেনা-বেচা, মজুদ ও বিনিময় নিষিদ্ধ থাকবে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।  বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘ইলিশের নিরাপদ প্রজননের লক্ষ্যে ৭ থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিন সারাদেশে ইলিশ আহরণ, পরিবহন, ক্রয়-বিক্রয়, মজুত ও বিনিময় নিষিদ্ধ থাকবে।’ মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় প্রতিবছরের মতো এবারও ইলিশের প্রজনন নির্বিঘ্ন করতে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

দাম বেশ চড়া : ধরা ও কেনাবেচা বন্ধের কয়েক দিন আগে থেকেই দাম বেড়েছে ইলিশের। আকারভেদে প্রতি কেজিতে দেড়শ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। বিক্রেতারা বলছেন, সরবরাহ বাড়লেও চাহিদা অনেক বেশি হওয়ার কারণেই মূলত দাম বেড়েছে। রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে গতকাল খুচরায় এক কেজি সাইজের ইলিশ ১২০০ থেকে ১৩০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। সাইজ দেড় কেজি হলে দাম বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ১৬০০ থেকে ১৭০০ টাকা। আবার ২০০ গ্রাম থেকে ৩০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি ৫০০ টাকা। ওজন ৫০০ গ্রামের বেশি হলে দাম কেজিপ্রতি ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকা। গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, আগের চেয়ে আকার অনুযায়ী কেজিপ্রতি দেড়শ থেকে চারশত টাকা পর্যন্ত বেড়েছে ইলিশের দাম। সব আকারের ইলিশই পর্যাপ্ত পাওয়া যাচ্ছে ঢাকার বিভিন্ন বাজার, আড়তসহ অলিগলি ও পাড়া-মহল্লার ফেরিওয়ালাদের কাছে। তবে তিন/চার দিনের ব্যবধানে দাম বেড়ে যাওয়ায় সীমিত আয়ের মানুষের নাগালের অনেকটাই বাইরে চলে গেছে দাম। শোয়ারীঘাটের ইলিশের আড়ত ঘুরে দেখা যায়, পাইকারি ৩৫০ থেকে ২০০০ টাকা কেজি দরে বিভিন্ন আকারের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে। আড়তে আসার আগেই দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে খুচরায় কেজিপ্রতি ১৫০ থেকে শুরু করে ৪০০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে বলে বিক্রেতারা জানান। আড়তদার শরিফুল ইসলাম জানান, নদীতে ও সাগরে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে বলে তারা ঘাট থেকে জেনেছেন। আড়তেও আগের চেয়ে অনেক বেশি মাছ উঠছে। তবে চাহিদাও আগের চেয়ে বেশি। কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগে এক কেজি সাইজের ইলিশ আমরা ৭০০ টাকা দরে কিনতাম এখন সেটা ৯০০ টাকা দরে কিনতে হচ্ছে। আর দুই কেজি সাইজের ইলিশ আগে কিনতে হত ১৮০০ টাকা কেজি, এখন সেটা ২২০০ টাকা কেজি। লালবাগের স্থানীয় বাসিন্দা আকবর আলী মাছ কিনতে এসেছেন শোয়ারীঘাটে। তিনি বলেন, আমি নিয়মিত এখান থেকেই মাছ নেই। এক সপ্তাহ আগে দেড় কেজির যে মাছ ১২০০ টাকা কেজি কিনেছি সেটা এখন ১৬০০ টাকা চাচ্ছে। নিমতলীর আনন্দ বাজারে ইলিশের দাম অনেক বেশি হাঁকায় অনেকেই অন্য মাছ কেনার কথা জানালেন।

কেউ কেউ কিনলেও বড় মাছের জায়গায় ছোট আকারের ইলিশ কিনেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, দেড় কেজি সাইজের মাছ ১৮০০ টাকা চায়। তাই এখন ১২০০ টাকা দিয়ে এক কেজি সাইজের ইলিশ নিয়েছি।

আজিমপুরের ছাপড়া মসজিদের সামনের বাজারে কেজিতে পাঁচটা ওঠে এমন আকারের ইলিশ ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেল। এ আকারের মাছের দাম কেজিতে আগে ছিল ৪০০ টাকা। তিন দিন আগে এক কেজি ওজনের মাছ পাওয়া গেছে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকায়। দেড় কেজির দাম ছিল ১২০০ থেকে ১৩০০ টাকা এবং দুই কেজির দাম ছিল ১৫০০ থেকে ১৬০০ টাকা।

ইলিশের সরবরাহ পরিস্থিতি ও দাম বাড়ার বিষয়ে মৎস্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা বলেন, বাজারে ইলিশের সরবরাহ ব্যাপক। তবে এখন পাঁচ থেকে সাত বছর আগের চেয়ে ইলিশ ধরার খরচ অনেক বেড়েছে। এছাড়া ট্রান্সপোর্ট খরচ তো আরও বেড়েছে। চাহিদাও আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে।

মৎস্য কর্মকর্তারা বলেন, বড় পরিসরে স্টক করছে বলে আমার মনে হয় না। ২০১৫-১৬ সালের দিকেও মানুষ ইলিশ ধরা বন্ধের বিষয়টা তেমন জানত না। এখন শুধু শহরে নয়, গ্রামের মানুষও ৫-১০টা ইলিশ কিনে ঘরে রেখে দেয়। মোট কথা ইলিশের চাহিদা আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। এখন সব পেশার মানুষই ইলিশ খেতে পছন্দ করে। এমনকি ঘরোয়া দাওয়াতেও ইলিশের চাহিদা থাকে। এজন্য দাম একটু বেড়েছে। তিনি জানান, এ বছর ইলিশ উৎপাদন ৫ লাখ টন ছাড়িয়ে যেতে পারে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ৯৫ হাজার টন।

সর্বশেষ খবর