রবিবার, ১৬ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

মধ্যবিত্তের কান্না শোনার কেউ নেই

------- ড. আনোয়ারা আলম

মধ্যবিত্তের কান্না শোনার কেউ নেই

দুর্ভোগের কমতি নেই চট্টগ্রাম শহরের প্রধান সংকট জলাবদ্ধতায়। এ দুর্ভোগ থেকে মুক্তি দিতে না পারার ব্যর্থতাটি লজ্জার। প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতা সত্ত্বেও কেন চট্টগ্রামের মানুষের এ সংকট থেকে মুক্তি নেই তা খুঁজে বের করা দরকার।

সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সাবেক সভাপতি, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও চট্টগ্রাম লেখিকা সংঘের সভাপতি প্রফেসর ড. আনোয়ারা আলম এসব কথা বলেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চট্টগ্রামের মানুষের নানা সংকট সমাধান বিষয়ে গণপ্রতিনিধিদের জোর আওয়াজ নেই। কজন এমপি আছেন যাঁরা তৃণমূলের খবর নেন! কজন ওয়ার্ড কাউন্সিলর আছেন যাঁরা নিজের এলাকার খোঁজখবর রাখেন!

জনপ্রতিনিধিদের ভাবতে হবে এমন করে যে, আমার এলাকায় আমি মাদক ছড়াতে দেব না, কিশোর গ্যাং থাকতে দেব না, আমার এলাকায় যানজট থাকতে পারবে না, আমার এলাকায় পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত হবে। প্রত্যেক জনপ্রতিনিধিরই এসব ক্ষেত্রে দায়িত্ব রয়েছে। নাগরিক সমাজের এই প্রতিনিধি বলেন, চট্টগ্রাম শহরে মানুষের সংকট ও প্রত্যাশা অনুযায়ী উন্নয়ন প্রকল্পের অগ্রাধিকার নিশ্চিত করা হয়নি। আছে সমন্বয়হীনতা ও জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে রেষারেষি। কর্ণফুলী নদীতে টানেলসহ চট্টগ্রামে একাধিক মেগা প্রকল্প না চাইতেই দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু সেসবের তুলনায় অনেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অর্থায়নের প্রত্যাশিত প্রকল্প বা কোনো কোনো জনদাবি উপেক্ষিত থাকায় মানুষ গুমড়ে কাঁদছে। এসব দাবির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণের মতো সক্ষম নেতৃত্ব চট্টগ্রামের কে আছেন, কোথায় আছেন?

ড. আনোয়ারা আলম বলেন, স্বাস্থ্য খাতে চট্টগ্রামের ভৌগোলিক অবস্থান ও বাণিজ্যিক গুরুত্ব বিবেচনায় অগ্রাধিকার প্রয়োজন ছিল। অথচ তা নেই। কোনো বিশেষায়িত হাসপাতাল গড়ে ওঠেনি। শিক্ষা খাতেও নানা সংকট-দুর্নীতি ছড়িয়ে পড়েছে। সংস্কৃতিচর্চার ক্ষেত্রগুলো সংকটাপন্ন ও সংকুচিত হচ্ছে। ঢাকার মতো তীব্র যানজটের শহরে পরিণত হচ্ছে চট্টগ্রাম। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক নিয়ে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা প্রয়োজন। মহাসড়কটি আট লেনে অন্তত সম্প্রসারণ জরুরি। পাহাড়ধস রোধ ও জলাবদ্ধতা প্রকল্পের সুফল কেবল আশ্বাসের ফুলঝুরিতেই সীমাবদ্ধ। বাজার-বাণিজ্যের সিন্ডিকেটে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিসহ নানা সংকটে থাকা মধ্যবিত্তের কান্না শোনার কেউ নেই। এসব দিক বিবেচনায় জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে সরকারকে। আনোয়ারা আলম বলেন, চট্টগ্রাম শহরে জলাবদ্ধতা, মশার প্রাদুর্ভাব, পাহাড়ধসসহ সমস্যা অনেক। হাল আমলের নতুন সংকট কিশোর গ্যাং। ভাবতে হবে এসবের উৎপত্তি কোথা থেকে। সমাজে ক্রমে বিচ্ছিন্নতা ও ভোগবাদিতার কারণে একান্নবর্তী পরিবার ভাঙছে। মধ্যবিত্তের বোবাকান্না বাড়ছে। বিত্তবান পিতা-মাতার আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের অসংগতি এবং দরিদ্র পরিবারের সংকটে আহাজারিতে সন্তানরা নষ্ট হচ্ছে। উগ্র হচ্ছে। কিশোর গ্যাংয়ে তারা যুক্ত হচ্ছে। গায়ের ওপর মোটরসাইকেল তুলে দিচ্ছে। মুরব্বিদের সালাম দিচ্ছে না। নাগরিক দুর্ভোগ সমাধানে এই নষ্ট হওয়ার পথটিও বন্ধ করতে হবে। কেননা এমন নতুন প্রজন্ম সামাজিক অপরাধে যুক্ত হচ্ছে। ড. আনোয়ারা আলম বলেন, নাগরিক সংকট সমাধানের ক্ষেত্রে গণমুখী নেতৃত্বের শূন্যতা আছে। আবার এর বিপরীতে নাগরিক সমাজকে অধিকারসচেতন হতে হবে। তৃণমূল থেকে রাজনীতিচর্চার মাধ্যমে ত্যাগী নেতা তুলে আনতে হবে। তবেই অধিকারসচেতনতা ও দায়বদ্ধতা প্রকাশে দীর্ঘদিনের জিইয়ে থাকা নাগরিক সংকট কাটবে।

সর্বশেষ খবর