সোমবার, ২৪ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা
অষ্টম কলাম

ফেসবুকের মাধ্যমে জাল টাকার ব্যবসা

নিজস্ব প্রতিবেদক

জাল নোট তৈরির হোতাসহ চারজনকে গ্রেফতার করেছে এলিট ফোর্স র‌্যাব। শনিবার রাতে র‌্যাব-৪ রাজধানীর চকবাজার, সিরাজগঞ্জ সদর ও খুলনার খালিশপুর থানা এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করে। গ্রেফতাররা হলেন- মূলহোতা মাউন হোসেন সাব্বির (২১), পারভেজ (২০), তারেক (২০) ও শিহাব উদ্দিন (২০)। এ সময় তাদের কাছ থেকে প্রায় ১ কোটি টাকা মূল্যের জাল নোট, ল্যাপটপ ও প্রিন্টারসহ জাল নোট তৈরির বিপুল পরিমাণ সরঞ্জাম জব্দ করেছে। গতকাল দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র?্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বাহিনীর আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, মাউন হোসেন সাব্বির ইউটিউব-ফেসবুক দেখে জাল টাকা তৈরি ও ব্যবসার প্রতি আকৃষ্ট হন। একপর্যায়ে ফেসবুক গ্রুপের পরিচয় সূত্রে ৩ লাখ টাকার জাল নোট কিনতে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ৩৫ হাজার টাকা পরিশোধ করেন। টাকা পরিশোধ করলেও হাতে পাননি জাল নোট। প্রতারিত হয়ে পরে সাব্বির নিজেই জাল নোট তৈরির প্রক্রিয়া শুরু করেন। পরে তিনি ফেসবুক গ্রুপ খুলে তৈরি করেন অন্তত ২০ সদস্যের চক্র। যারা বিভিন্ন সময়ে প্রায় ২ কোটি টাকার জাল নোট বাজারে ছড়িয়ে দিয়েছেন। এ চক্রে আরও ১৫-২০ জন সদস্য রয়েছেন। কম সময়ে অল্প পুঁজিতে ধনী হতে তারা এ পথ বেছে নেন। কমান্ডার মঈন বলেন, গ্রেফতাররা পরস্পর যোগসাজশে প্রায় এক বছর ধরে ঢাকা, সিরাজগঞ্জ, খুলনা ও যশোরসহ বিভিন্ন এলাকায় জাল নোট তৈরি করে স্বল্পমূল্যে বিক্রি করতেন। এর বাইরে নিজেরা বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিং দোকান, মাছের আড়তসহ জনসমাগমপূর্ণ এলাকায় জাল নোট দিয়ে কেনাকাটা করতেন। তিনি বলেন, গ্রুপের অ্যাডমিন হিসেবে কাজ করতেন শিহাব। তার মাধ্যমে গ্রেফতার পারভেজ এবং তারেকের সঙ্গে সাব্বিরের পরিচয় হয়। পরে সাব্বির ইউটিউব, ফেসবুক এবং গুগল থেকে জাল নোট তৈরির বিভিন্ন বিষয়ে কারিগরি জ্ঞান অর্জন করেন। জমানো টাকা দিয়ে জাল নোট তৈরির জন্য ল্যাপটপ, প্রিন্টার, প্রিন্টিং ডাইস, কাগজ, টিস্যু পেপার ও প্রিন্টারের কালিসহ অন্যান্য সরঞ্জামাদি কেনেন সাব্বির।

প্রতিদিন বাজারে ছাড়া হতো ২ লাখ : গ্রেফতারদের দেওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে র?্যাবের মুখপাত্র বলেন, ব্যবসা রমরমা থাকলে চক্রটি দৈনিক ২ লক্ষাধিক টাকা মূল্যমানের জাল নোট তৈরি করে বাজারে ছাড়ত। ফেসবুক গ্রুপ ‘জাল টাকা প্রতারক চক্রবিরোধী পোস্ট’-এর কমেন্টস দেখে তারা বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করতেন। চ্যাটিংয়ের মাধ্যমে ক্লায়েন্ট তৈরি করে বিক্রি করতেন জাল টাকা। চক্রের সদস্যদের মাধ্যমে ঢাকাসহ সিরাজগঞ্জ, খুলনা, যশোর এলাকায় এ টাকা সরবরাহ করতেন তারা। সরাসরি দেখা না করে ক্লায়েন্টের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা নিতেন চক্রের সদস্যরা। প্রতি লাখ জাল টাকা বিক্রি করতেন ১৫-২০ হাজার টাকায়। খন্দকার আল মঈন বলেন, জাল নোট তৈরি ও বাজারজাতকরণের জন্য ঢাকাকে নিরাপদ ও সহজ স্থান বলে মনে করত চক্রটি। তারা বিভিন্ন মেলা, উৎসব, পূজা, ঈদে পশুর হাটে ও অধিক জনসমাগম অনুষ্ঠানে বিভিন্ন কৌশলে জাল নোট ব্যবহার করত। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতে জাল নোট প্রিন্টের পর কাগজের অব্যবহৃত ও নষ্ট অংশগুলো পুড়ে ফেলত। তারা বিভিন্ন সময়ে প্রায় ২ কোটি মূল্যমানের জাল নোটের ব্যবসা করেছে বলে জানা গেছে।

র?্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, গ্রেফতার সাব্বির বগুড়া থেকে উচ্চমাধ্যমিক শেষ করে ২০১৯ সালে ঢাকায় মিটফোর্ডে একটি ওষুধের দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজে লাগেন। পাশাপাশি ঢাকায় অনার্স প্রথম বর্ষে অধ্যয়নরত সাব্বির জাল নোট তৈরি চক্রের অন্যতম হোতা হিসেবে ব্যবসা পরিচালনা করছিলেন। গ্রেফতার শিহাব একটি কলেজে ডিগ্রি প্রথম বর্ষে অধ্যয়নরত। ফেসবুকের বিভিন্ন পেজ ও গ্রুপে জাল নোট ব্যবসার সংবাদ দেখে সাব্বিরের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। তিনি জাল টাকা প্রিন্টিং, কাটিং, বান্ডেলিং ও প্যাকিংয়ের কাজ করতেন। পারভেজ ২০২০ সাল থেকে একটি কলেজে অনার্সে অধ্যয়নরত। শিহাবের মাধ্যমে সাব্বিরের সঙ্গে পরিচয় হয় এবং চক্রে জড়িত হন। তিনি জাল নোট তৈরি এবং প্রিন্টিংয়ের কাজ করতেন। তারেক স্থানীয় একটি কলেজে অনার্স প্রথম বর্ষে অধ্যয়নরত। তিনি জাল নোট তৈরির প্রয়োজনীয় উপকরণ ক্রয় করতেন।

সর্বশেষ খবর