বৃহস্পতিবার, ২৭ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

পরিশোধ হচ্ছে না ভর্তুকির টাকা

ইউরিয়ার ট্রেড গ্যাপ ৬ হাজার ১৮৪ কোটি টাকা, অর্থ বিভাগে বিসিআইসির চিঠি

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

পরিশোধ হচ্ছে না ভর্তুকির টাকা

রাষ্ট্রের ব্যয় কমাতে বিভিন্ন খাতে খরচ কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও আন্তর্জাতিক বাজারে সারের দাম বেড়ে যাওয়ায় এই খাতের ভর্তুকি এখন সরকারের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি)-এর তথ্য অনুযায়ী কেবলমাত্র ইউরিয়া সার বাবদ সরকারের কাছে প্রাপ্ত ভর্তুকির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ১৮৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে চলতি বছরের এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত তিন মাসের বকেয়া ভর্তুকির পরিমাণ ১ হাজার ৮৪৪ কোটি টাকা।

বিসিআইসি ইউরিয়া সারের এই ভর্তুকিকে ‘ট্রেড গ্যাপ’ হিসেবে উল্লেখ করে পুরো অর্থ পরিশোধের জন্য অর্থ বিভাগে চিঠি পাঠিয়েছে। বিসিআইসি বলেছে, সময়মতো ভর্তুকির অর্থ পরিশোধ না করায় তারা সরকারের গ্যারান্টিতে (এলটিআর) ব্যাংক ঋণ নিয়ে যে সার আমদানি করছে, তাতে সুদের পরিমাণ বাড়ছে।

বিসিআইসি সূত্র জানায়, ২০০৪-০৫ অর্থবছর থেকে ২০২০-২১ অর্থবছর পর্যন্ত গত ১৭ বছরে ইউরিয়া সার আমদানিতে রাষ্ট্রের বকেয়া ভর্তুকির পরিমাণ ছিল মাত্র ৪৩৯ কোটি ৫২ লাখ টাকা। তবে করোনা মহামারি ও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে গত অর্থবছর থেকেই এই খাতে বকেয়া ভর্তুকির পরিমাণ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়।

অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, বিসিআইসি ভর্তুকির যে হিসাব দেখাচ্ছে, প্রকৃত অর্থে তত ভর্তুকি তারা পায় না। ইউরিয়া সারে ভর্তুকি কৃষি মন্ত্রণালয়ের বাজেটে সময় সময় বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এখন যেটা বকেয়া দেখাচ্ছে, এটা নিয়ে বিসিআইসির হিসাবে সমস্যা আছে।

বিসিআইসি সূত্র জানায়, কৃষি মন্ত্রণালয়ের চাহিদা বিবেচনায় তারা ইউরিয়া সার নিজস্ব কারখানায় উৎপাদন এবং অবশিষ্ট পরিমাণ সার ‘কাফকো’ থেকে ক্রয় এবং জিটুজির আওতায় বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করে থাকে। প্রতিষ্ঠানটির হিসাবে ২০২১-২২ অর্থবছরে ইউরিয়া সার আমদানিতে ‘ট্রেড গ্যাপ’ দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর আগ পর্যন্ত অর্থাৎ ২০২১ সালের জুলাই থেকে ২০২২ সালের মার্চ পর্যন্ত ৯ মাসে বকেয়া ভর্তুকির পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। আর যুদ্ধ শুরুর পর চলতি বছরের এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত তিন মাসেই শুধু ইউরিয়া সারে বকেয়া ভর্তুকি বা ট্রেড গ্যাপের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৮৪৪ কোটি টাকা। এখন ভর্তুকির এই টাকা নিয়েই বিপাকে পড়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

এর আগে অর্থ বিভাগে পাঠানো এক চিঠিতে বিসিআইসি বলেছে, ঋণপত্র (এলসি) স্থাপনকারী রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো এলএটিআর ঋণের ওপর ৯ শতাংশ হারে সুদ ধার্য করেছে। সে হিসাবে সংস্থার দাবিকৃত টাকার বিপরীতে মাসিক সুদ ১৬ কোটি ৮৫ লাখ টাকা যুক্ত হয়ে ভর্তুকি খাতে প্রতিনিয়ত সরকারের ব্যয় বাড়িয়ে দিচ্ছে। অর্থ বিভাগ কর্তৃক অর্থ ছাড়ে যত দেরি হবে, ভর্তুকির পরিমাণও সে অনুপাতে বাড়তে থাকবে। শুধু তাই নয়, এসব অর্থ সময়মতো পরিশোধ করা না গেলে, তা ব্যাংকের হিসাবে খেলাপি হয়ে যাবে। ফলে ওই ব্যাংকগুলো নতুন করে আর বিসিআইসির ঋণপত্র খুলবে না। এতে করে সার আমদানি প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে বিসিআইসি।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বাজেট-২) তাহমিদ হাসনাত খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিসিআইসি যে হিসাব দেখাচ্ছে, সেখানে ইউরিয়া সারের সমুদয় ‘ট্রেড গ্যাপ’ অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে; নয়তো ২০০৪-০৫ অর্থবছরের ভর্তুকি বকেয়া থাকার কথা নয়। তিনি বলেন, শুধু বিদেশ থেকে যে ইউরিয়া সার আমদানি করছে বিসিআইসি, তার ওপর প্রাপ্ত ভর্তুকি হিসাব করে কৃষি মন্ত্রণালয়ের হিসাবে সময় সময় পরিশোধ করে দিচ্ছে অর্থ বিভাগ। প্রতিষ্ঠানটি নিজস্ব কারখানা যেমন- যমুনা ফার্টিলাইজার বা কাফকো থেকে যেসব সার নিচ্ছে- তার ওপর ভর্তুকি আগেও পরিশোধ করা হয়নি, এখনো হচ্ছে না।

অর্থ বিভাগ জানায়, বিগত এক বছরে আন্তর্জাতিক বাজারে সারের দাম প্রায় তিন-চার গুণ বেড়েছে। এর ফলে সারের বিপরীতে সরকারের ভর্তুকিও বেড়েছে প্রায় চার গুণ। ২০২০-২১ অর্থবছরে যেখানে ভর্তুকিতে লেগেছিল ৭ হাজার ৭১৭ কোটি টাকা, সেখানে ২০২১-২২ অর্থবছরে লেগেছে ২৮ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরেও এই খাতে ১৬ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর