বৃহস্পতিবার, ২৭ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে ত্রিপুরা মহারাজার কাচারিবাড়ি

দীপংকর ভট্টাচার্য লিটন, শ্রীমঙ্গল

ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে ত্রিপুরা মহারাজার কাচারিবাড়ি

অবহেলা আর অযত্নে ধ্বংস হচ্ছে শ্রীমঙ্গলে ইতিহাসের সাক্ষী ত্রিপুরা মহারাজার কাচারিবাড়ি। শহরের হবিগঞ্জ সড়কে ভূমি অফিসের ভিতর এই কাচারিবাড়িটি রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এখন ভগ্নদশায় রয়েছে। ভবনে দেখা দিয়েছে ফাটল। খসে পড়ছে ছাদের পলেস্তারা। এ অবস্থায় কাচারিবাড়িটিকে সংরক্ষণ করে ত্রিপুরা সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপনের দাবি জানিয়েছে বৃহত্তর সিলেট ত্রিপুরা উন্নয়ন পরিষদ। ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৮৯৮ সালে তৎকালীন ত্রিপুরা মহারাজা এই কাচারিবাড়িটি নির্মাণ করেন। অষ্টাদশ শতাব্দী থেকে পর্যায়ক্রমে মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র মাণিক্য দেববর্মণ বাহাদুর এবং আধুনিক ত্রিপুরার স্থপতি মহারাজা বীরচন্দ্র্র মাণিক্য দেববর্মণ বাহাদুর ও তার ছেলে মহারাজা রাধাকিশোর মাণিক্য দেববর্মণ বাহাদুর ১৯০৯ সাল পর্যন্ত এই কাচারিবাড়িতে এতদঅঞ্চলের খাজনা আদায় করতেন। পরবর্তীতে তাদের নিয়োগকৃত স্টেট ম্যানেজাররা ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত এই কাচারিবাড়িতেই খাজনা আদায় ও প্রশাসনিক কার্যক্রম চালান। স্থানীয় প্রবীণ শিক্ষক দ্বীপেন্দ্র ভট্টাচার্য বলেন, ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পর ত্রিপুরা মহারাজার কর্তৃত্ব শেষ হয়ে গেলে এই অঞ্চল চলে যায় পাকিস্তান সরকারের অধীনে। তখন দীর্ঘদিন এই কাচারিবাড়িটি তালাবদ্ধ থাকে। এই কাচারিবাড়ির পাশেই ছিল রাজার প্রতিনিধির বাসভবন। ১৯৬০ সালে আইয়ুব খান তার প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের জন্য কিছু কিছু থানায় ডেভেলপমেন্ট কর্মকর্তা (সার্কেল অফিসার) নিয়োগ করেন।  তখন শ্রীমঙ্গলে এই কাচারিবাড়িকে ডেভেলপমেন্ট অফিস বানানো হয়।

আর পাশের বাসভবনে করা হয় রেভিনিউ সার্কেল অফিস। দেশ স্বাধীনের পর কাচারিবাড়ি থেকে ডেভেলপমেন্ট অফিস চলে যায় উপজেলায় (বর্তমানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিস)। আর  রেভিনিউ সার্কেল অফিসকে করা হয় সিও রেভিনিউ। পরবর্তীতে সিও রেভিনিউ নাম বদলে হয় উপজেলা ভূমি অফিস। তিনি প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের কাছে এই কাচারিবাড়িটি সংরক্ষণে দাবি জানিয়ে বলেন, অরক্ষিতভাবে পড়ে থাকা কাচারিবাড়িটি শ্রীমঙ্গলের একটি প্রাচীন ভবন। অনেক স্মৃতিবিজড়িত এই ভবনকে কেন্দ্র করে। এর সঙ্গে ইতিহাস ঐতিহ্যও যুক্ত। দেশ-বিদেশের অনেক দর্শনার্থী এখনো আগ্রহ নিয়ে এই পুরনো ভবন দেখতে আসেন। সরেজমিন দেখা গেছে, ভূমি অফিস ভবনে প্রবেশ পথে ডান পাশে পুরনো কাচারিবাড়িটি জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে। দীর্ঘকাল অযত্নে পড়ে থাকায় প্রায় দেড় বিঘা জমির ওপর চুন-সুরকি দিয়ে নির্মিত ভবনটির বিভিন্ন জায়গায় ফাটল দেখা দিয়েছে। ফাটল দিয়ে বৃষ্টির পানি পড়ে স্যাঁতসেঁতে হয়ে আছে মেঝে। খসে পড়ছে ভবনের পলেস্তারা। দেবে গেছে ফ্লোর। ৩০ ফুট দৈর্ঘ্য আর ২০ ফুট প্রস্থের ভবনটিতে রয়েছে ৩টি কক্ষ। এসব কক্ষে নেই দরজা-জানালা। ভবনের দেয়ালে ছাদে গজিয়েছে বটসহ নানান বৃক্ষ। বৃহত্তর সিলেট ত্রিপুরা উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি জনক দেববর্মা জানান, এই কাচারিবাড়িটি ত্রিপুরা মহারাজার স্মৃতি, ঐতিহ্য ও তার রাজত্বকালের সাক্ষী। আদিরূপ অক্ষণ্ণ রেখে ভবনটি সংস্কার করা হলে একটি সুপ্রাচীন ইতিহাস-ঐতিহ্য রক্ষা হবে। আমরা ২০২১ সালে এই কাচারিবাড়িতে ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপনের দাবি জানিয়েছি। শ্রীমঙ্গল উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) সন্দ্বীপ তালুকদার বলেন, এই কাচারিবাড়িটি একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। ইতিহাসের সঙ্গে সম্পর্কিত। আমরা উপজেলা ও ভূমি অফিসের পক্ষ থেকে এই ভবনটি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করব। ভবনটি সংরক্ষণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছেও আবেদন করব।

সর্বশেষ খবর