শুক্রবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

বিলকিসের ডেরায় ঢুকে বিপাকে বিত্তবানরা

নগ্ন ভিডিওর ফাঁদ

আলী আজম

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট থেকে বিত্তবান লোকদের ফোন নম্বর জোগাড় করতেন বিলকিস। পরে ওই নম্বরে এসএমএস দিয়ে ধীরে ধীরে ফোনে কথা বলা শুরু করতেন। একপর্যায়ে মিষ্টি কথায় মন জয় করে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলতেন। কথাবার্তার পর প্রেমিককে প্রলুব্ধ করে দেখা করার জন্য ডাকতেন নিজের ডেরায়। যদি কেউ প্রলুব্ধ হয়ে তার সঙ্গে দেখা করতে যেত, তাহলে ফুসলিয়ে অসামাজিক কার্যকলাপ করতেন। এ সময় সেখানে ডিবি পুলিশ, সিআইডি ও সাংবাদিক পরিচয়ে হাজির হতেন একদল লোক। অন্তরঙ্গ ওই মুহূর্তের ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে হাতিয়ে নিতেন লাখ লাখ টাকা।

এভাবে শতাধিক বিত্তবানকে নগ্ন ভিডিওর ফাঁদে ফেলে ৫ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বিলকিস ও তার সিন্ডিকেট। শুধু ডেরায় নিয়ে টাকা হাতানোই নয়, বাইরে দেখা করার কথা বলে অপহরণ এবং যাকে যেভাবে ফাঁদে ফেলে যায় সেভাবে ফাঁদে ফেলে জিম্মি করতেন বিলকিস। ঢাকার সাভার থেকে বিলকিস ও তার সহযোগী কথিত স্বামী খোকন আকন্দকে গ্রেফতারের পর এসব তথ্য জানিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) বিভাগ। তাদের কাছ থেকে দুটি মোবাইল ফোন, স্বাক্ষরিত একটি চেক, বেশ কয়েকজন বিত্তবানের নগ্ন ভিডিও ও ছবি উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বিলকিস ও খোকনকে দুই দিনের রিমান্ডে আনা হয়েছে।

ডিবিসূত্র জানান, গ্রেফতার খোকন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে বিত্তবানদের নম্বর জোগাড় করে বিলকিসকে দিতেন। পরে বিলকিস সেসব নম্বরে এসএমএস ও কল দিয়ে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলতেন। একপর্যায়ে প্রেম গভীর হলে তাকে ডেরায় ডেকে নিতেন। সেখানে চক্রের সদস্যরা অসামাজিক কার্যকলাপের নগ্ন ভিডিও ও ছবি ধারণ করত। এরপর সেই ভিডিও বা ছবি পরিবারের কাছে পাঠানো ও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করা হতো। ভুক্তভোগীর সঙ্গে এটিএম কার্ড থাকলে সেগুলোর পিন নম্বর নিয়ে অ্যাকাউন্ট ফাঁকা করে চোখ বেঁধে নির্জন স্থানে ফেলে রাখা হতো। আর যারা প্রেমের ফাঁদে পা না দিতেন তাদের পেশার সঙ্গে সম্পৃক্ত কাজের কথা বলে সুবিধাজনক স্থানে আসতে বলা হতো। পরে রেস্টুরেন্টে গিয়ে কথা বলবেন জানিয়ে সিএনজি অটোরিকশায় তুলে চোখ বেঁধে নিজের ডেরায় নেওয়া হতো। সেখানে বিলকিসের সঙ্গে আপত্তিকর ছবি তুলতে ও ভিডিও করতে বাধ্য করা হতো। পরে তার কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়া হতো। এভাবে ফাঁদে পড়েন একটি ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির কর্মকর্তা। পরিবারের বেশ কয়েকজন ইন্স্যুরেন্স করবেন জানিয়ে ওই কর্মকর্তাকে ডাকা হয়। পরে সিএনজিতে তুলে নির্জন এলাকায় নিয়ে পকেটে থাকা ৩৫ হাজার এবং এটিএম কার্ড থেকে ১ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়। এখানেই শেষ নয়, চারটি চেকে ও বেশ কয়েকটি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর রাখা হয়। বেধড়ক মারধর করে জোরপূর্বক নগ্ন ভিডিও করা হয়। পরে ওই ভিডিও পাঠিয়ে দাবি করা হয় ২০ লাখ টাকা। এরপর ওই ভুক্তভোগী ২৬ অক্টোবর ডিএমপির দারুসসালাম থানায় মামলা করেন।

এ বিষয়ে ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) নাজমুল হক বলেন, দারুসসালাম থানায় মামলার পর বুধবার বিলকিস ও খোকনকে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছেন, ২০১৮ সাল থেকে শতাধিক ভুক্তভোগীকে ফাঁদে ফেলে তারা অন্তত ৫ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এ চক্রে আরও দু-তিন জন সদস্য রয়েছেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর