শনিবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

শিক্ষা আইনের জন্য আর কত অপেক্ষা!

আকতারুজ্জামান

শিক্ষা আইনের জন্য আর কত অপেক্ষা!

প্রায় এক যুগ হতে চললেও শিক্ষা আইন এখনো আলোর মুখ দেখেনি। আইন তৈরির জন্য ২০১১ সালে উদ্যোগ নেওয়ার পর ১১ বছর পার হয়েছে। কিন্তু এ আইনের খসড়া তৈরি করে বিভিন্ন দফতরে পাঠানো আর স্টেকহোল্ডারদের মতামত নেওয়া ছাড়া বাস্তবে কোনো অগ্রগতি হয়নি বলে জানা গেছে। সূত্র জানায়, শিক্ষাবিদসহ বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের তীব্র সমালোচনার মুখেও প্রস্তাবিত শিক্ষা আইনে সহায়ক বইকে বৈধতা দেওয়া হয়েছে। তবে আইনে নোট-গাইড নিষিদ্ধের কথা বলা হয়েছে। শিক্ষাবিদরা বলছেন, সহায়ক বই বৈধতা দিলে নোট-গাইডগুলো এখন মলাট বদলে সহায়ক বই হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

জানা গেছে, শিক্ষা আইনের খসড়া একেবারে চূড়ান্ত করা হয়েছে। বর্তমানে সেটি যাচাই-বাছাইয়ের জন্য মন্ত্রিসভায় পাঠানো হয়েছে। প্রস্তাবিত শিক্ষা আইনে বলা হয়েছে, কোনো ধরনের নোট বই বা গাইড বই মুদ্রণ, বাঁধাই, প্রকাশ বা বাজারজাত করা যাবে না। কেউ এ বিধান লঙ্ঘন করলে অনূর্ধ্ব তিন বছর কারাদন্ড বা অনূর্ধ্ব ৫ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন। এ ছাড়া কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা কোনো শিক্ষক শিক্ষার্থীদের নোট বই, গাইড বই কেনা বা পাঠে বাধ্য করলে বা উৎসাহ দিলে তা অসদাচরণ হিসেবে গণ্য হবে। এ ক্ষেত্রে শিক্ষক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান, ব্যবস্থাপনা কমিটি বা পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে। তবে সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে সহায়ক বই মুদ্রণ, বাঁধাই, প্রকাশ ও বাজারজাত করা যাবে। অর্থাৎ আইনে নোট-গাইড নিষিদ্ধের কথা বলা হলেও সহায়ক বই বাজারজাতকরণে সুযোগ দেওয়া হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ছিদ্দিকুর রহমান প্রতিবেদককে বলেন, নোট-গাইড আর সহায়ক বইয়ের মধ্যে পার্থক্য নেই। এ আইন পাস হলে নিষিদ্ধ নোট-গাইডগুলোই মলাট বদলে সহায়ক বই নামে বাজারে চলবে। তিনি বলেন, নোট, গাইড, সহায়ক বই- সব নিষিদ্ধ করতে হবে শিক্ষা আইনে। প্রস্তাবিত আইনে আরও বলা হয়- ভর্তিচ্ছু প্রার্থীদের জন্য, চাকরিপ্রত্যাশীদের জন্য, বিদেশি শিক্ষাক্রমের এ-লেভেল, ও-লেভেল শিক্ষার্থীদের জন্য প্রস্তুতি কোচিং সেন্টার পরিচালনা আইনে নিষিদ্ধ হবে না। তবে নিবন্ধন ছাড়া কোচিং সেন্টার পরিচালনা করা যাবে না। নিবন্ধন ছাড়া কোচিং সেন্টার পরিচালনা করলে অনূর্ধ্ব তিন বছর কারাদন্ড বা অনূর্ধ্ব ১০ লাখ টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত করা যাবে। আইনে বাণিজ্যিক কোচিংকে বৈধতা দেওয়া হলেও শিক্ষকদের জন্য নিজ শিক্ষার্থীদের টিউশনি করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। প্রস্তাবিত আইনে বলা হয়, কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষক নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষার্থীকে প্রাইভেট টিউশনের মাধ্যমে অর্থের বিনিময়ে পাঠদান করতে পারবেন না। তবে পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের স্কুল সময়ের আগে বা পরে অভিভাবকদের সম্মতি সাপেক্ষে অতিরিক্ত ক্লাসের ব্যবস্থা করতে পারবেন। এ ছাড়া নিজ প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীকে অর্থের বিনিময়ে কোচিংয়ের মাধ্যমেও পাঠদান করতে পারবেন না। এটি অসদাচরণ ও শাস্তিযোগ্য বলে বিবেচিত হবে। এ ছাড়া আইনে সরকারের অনুমোদন ছাড়া পাঠ্যপুস্তকের বিষয়বস্তু ও পরীক্ষার সম্ভাব্য প্রশ্নের উত্তর পত্রিকায় মুদ্রণ বা ইলেকট্রনিক মাধ্যমে প্রকাশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এ নিয়েও নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন শিক্ষা-সংশ্লিষ্টরা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আবু বকর ছিদ্দীক বলেন, শিক্ষা আইনের খসড়া মন্ত্রিসভায় পাঠানো হয়েছে। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। সম্প্রতি এ নিয়ে একটি বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়েছে। মন্ত্রিসভা থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে এলে এই খসড়া আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। সেখানে যাচাই-বাছাই করে সেটি মন্ত্রিপরিষদে উত্থাপন করা হবে। মন্ত্রিপরিষদে সম্মতি পেলে এই আইন পাসের জন্য পার্লামেন্টে পাঠানো হবে।

সর্বশেষ খবর