রবিবার, ২০ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা
হত্যা রহস্যের জট খোলেনি

বরপা যাননি, বিশ্বরোডেই নেমে যান ফারদিন

সাখাওয়াত কাওসার

বরপা যাননি, বিশ্বরোডেই নেমে যান ফারদিন

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের বরপাগামী লেগুনাতে উঠলেও সুলতানা কামাল ব্রিজ পার হয়ে বিশ্বরোডেই নেমে যান বুয়েট ছাত্র ফারদিন নূর পরশ। ব্রিজ পার হয়ে ঢাকা-সিলেট হাইওয়ের এই পয়েন্ট থেকেই অন্য কোথাও গিয়েছেন পরশ। তদন্ত সংশ্লিষ্ট একাধিক    সূত্র এ প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেছে, রাত ২টা ৩ মিনিটের পর যাত্রাবাড়ী মোড় থেকে ছেড়ে যাওয়া লেগুনায় ছয় যাত্রীর মধ্যে দুজন বিশ্বরোড মোড়ে নেমে যান। নেমে যাওয়া দুজনের মধ্যে ফারদিনসহ আরেক যাত্রী ছিলেন বলে চালক স্বপন তারই সহকর্মী একাধিক লেগুনাচালক ও হেলপারকে জানিয়েছেন। এসব কারণে ফারদিন হত্যা নিয়ে রহস্যের বেড়াজাল তৈরি হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের মন্তব্য, যদি লেগুনাচালকের তথ্য সঠিক হয়, তাহলে ফারদিন চনপাড়ায় গিয়েছিলেন কিংবা চনপাড়ায় তাকে খুন করা হয়েছিল সেটি নিয়ে অনেক প্রশ্ন তৈরি হবে। যদিও ওই এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহের জন্য হণ্যে হয়ে চেষ্টা করছেন একাধিক সংস্থার সদস্যরা। ব্যক্তিগতভাবে অনেক বাসা এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে তারা ফুটেজ সংরক্ষণ যন্ত্র ডিভিআর সংগ্রহ করেছেন। অনেকের ডিভিআরে সমস্যা থাকলেও তা মেরামত করে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন তারা।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি ঘটনার রহস্য উদঘাটনে। আমরা চাই প্রকৃত খুনি এবং কারণ বেরিয়ে আসুক। কারণ ২টা ২৩ মিনিট পর্যন্ত আমরা ফারদিনের অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পেরেছি। আমরা এখনো বলছি না ফারদিন চনপাড়া গিয়েছিলেন। সবকিছুর জন্যই আমরা দালিলিক প্রমাণ খুঁজছি। উল্লেখ্য, বুয়েট ছাত্র ফারদিন নূর পরশ ৫ নভেম্বর থেকে নিখোঁজ ছিলেন। ওইদিনই রাজধানীর রামপুরা থানায় এ বিষয়ে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন তার বাবা কাজী নূর উদ্দিন। নিখোঁজের দুই দিন পর ৭ নভেম্বর সন্ধ্যা ৬টার দিকে নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ফারদিনের লাশ উদ্ধার করে নৌপুলিশ। এ ঘটনায় ফারদিনের বান্ধবী বুশরাকে তার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটকের পর গ্রেফতার দেখায়। পববর্তীতে আদালতের নির্দেশে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেয়। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্পেনে যাওয়ার খরচ সংগ্রহের জন্য উদ্বিগ্ন ছিলেন ফারদিন। কারণ তার কাছে পর্যাপ্ত টাকা ছিল না। পরিবারের এমন সামর্থ্য ছিল না। এ জন্য অনেকের কাছে টাকা ধারও চেয়েছিলেন ফারদিন। তবে বন্ধুরা তার টাকা সংগ্রহের জন্যও চেষ্টা করেছিলেন। অনেকেই তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী টাকা দেওয়ার বিষয়ে আশ্বস্তও করেছিলেন। তবুও কিছু টাকা বাকি থেকে গিয়েছিল। জানা গেছে, যাত্রাবাড়ী থেকে বরপা পর্যন্ত লেগুনায় প্রতি যাত্রীর ভাড়া দিনে ৩০ ও রাতে নেওয়া হয় ৫০ টাকা। চালক স্বপনের সেই লেগুনার পরের সিরিয়ালেই ছিল চালক জনির। এ জন্য জনি স্বপনকে যাত্রী ব্যবস্থা করে দেওয়ার কাজটি করেছিল। স্বপনের বাড়ি যাওয়ার তাড়া থাকায় সে লেগুনাটি যাত্রী ভরপুর হওয়ার আগেই ছেড়ে দেয়। চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডটি নিয়ে কাজ করা সংশ্লিষ্ট অনেকেই বলছেন, টাকা সংগ্রহের জন্যই হয়তো ফারদিন বিভিন্ন জায়গায় গিয়েছিলেন। পরদিন পরীক্ষা থাকার পরও তিনি ছুটে বেড়িয়েছিলেন রাজধানীর এপাশ-ওপাশ। এমনকি কেরানীগঞ্জেও গিয়েছিলেন ফারদিন। এদিকে, র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বুয়েটের মতো একটি প্রতিষ্ঠানের মেধাবী ছাত্র কেন, কী কারণে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন তা উদঘাটনে আমাদের চেষ্টার কোনো কমতি নেই। যথাযথ প্রমাণের আগে কোনো মন্তব্য করতে চাইছি না।

বুয়েটে মানববন্ধন : বুয়েট ছাত্র ফারদিন নূর পরশ হত্যার বিচার চেয়ে মানববন্ধন করেছেন বুয়েটের শিক্ষার্থীরা। এ সময় সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত অপরাধীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানানো হয়। গতকাল সকালে বুয়েট শহীদ মিনারে এক মানববন্ধনে এ দাবি জানান তারা।

সর্বশেষ খবর