মঙ্গলবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

দেশে প্রতি বছর ৪০ হাজার মানুষের কিডনি বিকল

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশে প্রতি বছর ৪০ হাজার মানুষের কিডনি বিকল

বিশ্বের ৮৫ কোটি মানুষ কোনো না কোনোভাবে কিডনি রোগে আক্রান্ত। দেশে প্রায় ২ কোটি মানুষ কিডনির বিভিন্ন রোগে ভুগছেন। এর মধ্যে ৪০ হাজার মানুষের কিডনি বিকল হয় প্রতি বছর। বিকল রোগীদের ৭৫ ভাগ মারা যান ডায়ালাইসিস ও কিডনি সংযোজনের সামর্থ্য না থাকায়।

গতকাল কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটে সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন। ‘সবার জন্য সুস্থ ভবিষ্যৎ-এমন একটি বিশ্ব গড়ুন’ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে এ বছর সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা দিবস পালিত হচ্ছে। কিডনি ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আর রশিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রফেসর ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. এম শমসের আলী। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের

 (বিএমএ) সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশীদ-ই-মাহবুব এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ। অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা ছিলেন মেরিস্টোপস বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মামুন রশীদ। অধ্যাপক ডা. হারুন আর রশিদ বলেন, ‘দেশে ২ কোটি মানুষ কোনো না কোনো কিডনি রোগে আক্রান্ত। বিশ্বে বর্তমানে প্রায় ৮৫ কোটি মানুষ কিডনি রোগে ভুগছেন। আক্রান্ত রোগীদের ডায়ালাইসিস, ট্রান্সপ্লান্ট বিনামূল্যে দিতে পারলে সবর্জনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত হবে। আমাদের পরিকল্পনা ছিল কীভাবে কিডনি রোগীদের সেবা দেওয়া যায়। প্রতি বছর আক্রান্ত ৪০ হাজার রোগীর মাত্র ২০ শতাংশ চিকিৎসা নিতে পারেন। বাকি ৮০ শতাংশ মানুষ চিকিৎসার অভাবে মারা যান।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ১ হাজার ৬০০ টাকায় ডায়ালাইসিস সেবা দিই। অনেক হাসপাতালে এই খরচ ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা। অনেকে চিকিৎসা নিতে বিদেশে যান। কিডনি রোগীদের প্রেসক্রিপশন সারা বিশ্বে একই। কিডনি রোগীদের এক বছরে ডায়ালাইসিস করতে খরচ হয় ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা এবং ট্রান্সপ্লান্টে খরচ হয় ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা। প্রথম পর্যায়ে শুধু ওষুধ খরচ হয় ২৫ হাজার টাকা। ৪-৫ শতাংশ মানুষ এই খরচ বহন করতে সক্ষম। দেশে রোগীর পকেট থেকে খরচ অনেক বেশি হয়। এটাকে কমিয়ে আনতে হবে।’ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার অপারেটর পদে কর্মরত আছেন সুমন হোসেন (৩২)। তার স্ত্রীর দুটি কিডনি দুই বছর ধরে বিকল। সপ্তাহে দুই দিন সরকারি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস করাতে খরচ হয় ১ হাজার ১২০ টাকা। মাসে শুধু স্ত্রীর কিডনি ডায়ালাইসিসে সুমনের খরচ হয় ৬ হাজার ৭২০ টাকা। এর সঙ্গে ওষুধ, চিকিৎসক ও যাতায়াত মিলিয়ে মাসে ১০ হাজার টাকার বেশি খরচ হয় চিকিৎসার পেছনে। ট্রান্সপ্লান্টে আগ্রহ থাকলেও মিলছে না কিডনি। কিডনি রোগে আক্রান্ত স্ত্রীকে বাঁচিয়ে রাখতে জীবনযুদ্ধে নেমেছেন সুমন। দেশে প্রতিনিয়ত বাড়ছে কিডনি রোগী। ভেজাল খাবার ও ওষুধ সেবন কিডনি রোগী বাড়াচ্ছে। অতিরিক্ত ওষুধ সেবনেও বাড়ছে এই রোগ। ডায়াবেটিস ও হাইপার টেনশনে থাকা মানুষের কিডনি রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। কিডনি রোগের চিকিৎসা বেশ ব্যয়বহুল হওয়ায় খরচ বহন করতে হিমশিম খায় রোগীর স্বজনরা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপ-উপাচার্য এবং বাংলাদেশ রেনাল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. মুহাম্মদ রফিকুল আলম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘গত ১০-১৫ বছরে দেশে কিডনি রোগ ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। কিডনি রোগকে নীরব ঘাতক বলা হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে কিডনি নষ্ট হওয়ার পর দেখা যায় উপসর্গ। ন্যাফ্রাইটিস থেকে কিডনি রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ব্যাপকহারে বাড়ছে। এটি সাধারণত খাদ্যে ভেজাল, ওষুধের যত্রতত্র ব্যবহার, ভেজাল ওষুধ সেবনের কারণে হয়। বিদেশে চাইলেই ফার্মেসি থেকে ওষুধ কেনা যায় না। সেখানে চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন প্রয়োজন হয়। অথচ আমাদের দেশে যে কেউ ফার্মেসিতে গিয়ে অ্যান্টিবায়োটিক কিনতে পারে। ক্ষতিকর ব্যথানাশক ওষুধ পাওয়া যায় অহরহ। এসব ওষুধ কিডনির ব্যাপক ক্ষতি করে।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর