নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক না হলে সেই নির্বাচন অর্থহীন বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) আবু হেনা। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করতে হলে নির্বাচন কমিশনকে সবার আস্থা অর্জন করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
এদিকে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, সকালে বিবিসি দেখিয়েছে রাতে (একাদশ সংসদ নির্বাচন) ভোট হয়েছে। যেসব জায়গায় এটা হয়েছে, ইসি সেখানে ভোট বন্ধ করতে পারত; কিন্তু তা করা হয়নি।
গতকাল রাজধানীর দ্য ডেইলি স্টার ভবনে এ এস মাহমুদ আলী মিলনায়তনে ‘দশম ও একাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থীদের তথ্যাবলি’ শীর্ষক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে তারা এসব কথা বলেন। সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন ওই দুটি নির্বাচনের প্রার্থীদের দেওয়া তথ্য নিয়ে আগামী প্রকাশনী থেকে ওই বই প্রকাশ করেছে।অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সাবেক সিইসি আবু হেনা, বিশেষ অতিথি ছিলেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন। বক্তব্য দেন সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ আবদুল আলীম। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সুজন সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার।
সাবেক সিইসি আবু হেনা বলেন, সংবিধানে বলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশন পুরোপুরি স্বাধীন। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য তাদের যত জনবল প্রয়োজন রাষ্ট্রপতি ব্যবস্থা করবেন। নির্বাচন কমিশনকে দায়িত্ব পালনে সহায়তা করা সব নির্বাহী কর্তৃপক্ষের কর্তব্য। তিনি বলেন, এর বাইরে বিভিন্ন আইনে ইসিকে ক্ষমতা দেওয়া আছে। যেসব বিষয় আইনে অস্পষ্ট সেক্ষেত্রে নির্বাচনের স্বার্থে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অন্তর্নিহিত ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের আছে।
সাবেক এই সিইসি বলেন, নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক দায়িত্ব সুষ্ঠু নির্বাচন করা। নির্বাচন কমিশনে যারাই থাকুক, তাদের কর্তৃত্ব ও দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। ইসি নিজেদের কর্তৃত্ব ও দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন থাকলে অনেক সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া যায়। বর্তমান ইসির অংশগ্রহণমূলকের ব্যাখ্যার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে আবু হেনা বলেন, ইচ্ছাটাই প্রধান নয়। সবাইকে আহ্বান করতে হবে। নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষ হতে হবে। সবার আস্থা অর্জন করতে হবে। ইসির কাজে যদি দেখে তারা নিরপেক্ষ তখন সবাই নির্বাচনে আসবে। সবাইকে নিয়ে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করা তাদের দায়িত্ব। যারা নির্বাচনে অংশ নিতে চাইছে তাদের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে কথা বলার পরামর্শ দিয়েছেন সাবেক এই সিইসি।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটের আগের রাতে ব্যালট বাক্স ভর্তি করা এবং এ বিষয়ে তখনকার সিইসি কে এম নূরুল হুদার বক্তব্য নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, সকালে (ভোটের দিন) বিবিসি দেখিয়েছে রাতে ভোট হয়েছে। যেসব জায়গায় এটা হয়েছে ইসি সেখানে ভোট বন্ধ করতে পারত; কিন্তু তা করা হয়নি। ফলাফলের প্রজ্ঞাপন হওয়ার আগে নির্বাচন কমিশন প্রজ্ঞাপনও বন্ধ রাখতে পারে, তদন্ত করতে পারে। আবু হেনার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন একটি নির্বাচনে সেটা করেছিল। তিনি বলেন, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) কিছু গ্রে এরিয়া আছে। যেগুলো নিয়ে কাজ করা দরকার। হলফনামার তথ্য যাচাই করার সামর্থ্য নির্বাচন কমিশনের আছে বলে মনে হয় না। তিনি বলেন, আমাদের সময় প্রার্থীদের হলফনামায় দেওয়া সম্পদ বিবরণী রাজস্ব বোর্ডে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, শুধু অংশগ্রহণমূলক নয়, নির্বাচন হতে হবে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক। নির্বাচন মানে হলো বেছে নেওয়ার সুযোগ। তিনি বলেন, নির্বাচনের আগে প্রার্থীদের সম্পর্কে তথ্য পাওয়া ভোটারদের অধিকার। কিন্তু প্রার্থীরা অনেক ক্ষেত্রে মনগড়া তথ্য দেন। কারণ এসব তথ্য নির্বাচন কমিশন যাচাই করে না। মিথ্যা তথ্য দিলে প্রার্থিতা বাতিল এমনকি নির্বাচিত হয়ে গেলে ফলাফলও বাতিল করতে পারে ইসি। নির্বাচন বিশেষজ্ঞ আবদুল আলীম বলেন, হলফনামায় দেওয়া প্রার্থীদের তথ্য যাচাই করা হয় না। এখান থেকে বের হওয়া দরকার। প্রার্থীদের তথ্য কত শতাংশ ভোটারের কাছে পৌঁছায় সেটাও দেখা দরকার।