প্রতারণার দায়ে অভিযুক্ত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির গ্রাহকদের কী পরিমাণ পাওনা আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও গেটওয়েতে আটকে আছে, সে সম্পর্কে কিছু জানে না বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। উল্টো গ্রাহকদের পাওনা টাকার তথ্য জানতে এখন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সহায়তা চাইছে ইভ্যালি। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে সম্প্রতি চিঠিও পাঠিয়েছেন ইভ্যালির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, কিউকম, আলিশামার্ট, দালালপ্লাস, বুমবুমসহ বিভিন্ন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানে গ্রাহকদের আটকে থাকা টাকা ফেরত দেওয়ার কার্যক্রম চলমান থাকলেও এখনো ইভ্যালির গ্রাহকদের টাকা দেওয়ার কার্যক্রম শুরু করা যায়নি। কেন্দ্রীয় ডিজিটাল কমার্স সেলের প্রধান ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও সেলের মহাপরিচালক মো. হাফিজুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আটকে থাকা অর্থ ফেরত দিতে গ্রাহকের তালিকা চেয়ে ইভ্যালিকে চিঠি পাঠানো হয়েছিল। প্রতিষ্ঠানটি চিঠির জবাব দিলেও গ্রাহকের তালিকা দিতে পারেনি। গ্রাহকের তথ্য না পেলে টাকা ফেরত দেওয়া সম্ভব না। কেন্দ্রীয় ডিজিটাল কমার্স সেলের তথ্যানুযায়ী, গতকাল পর্যন্ত ১৩টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের নামে পেমেন্ট গেটওয়েতে আটকে থাকা টাকার মধ্যে ৩২২ কোটি ৯৪ লাখ ফেরত দেওয়া হয়েছে। ৩৭ হাজার ১৩৭ জন গ্রাহক এ টাকা ফেরত পেয়েছেন। এর মধ্যে কিউকমের ২৯ হাজার ৬৬৬, আলিশামার্টের ২ হাজার ২৯২, দালালপ্লাসের ২ হাজার ৩২২, ধামাকার ১ হাজার ৬২৫, বুমবুমের ২৫৩, আনন্দের বাজারের ২০১, থলে ডটকমের ৩৮৫, শ্রেষ্ঠ ডটকমের ২৩২, আলিফ ওয়ার্ল্ডের ২৮, বাংলাদেশ ডিলের ১৩৩, সফেটিকের ১০, নাইনটি নাইন গ্লোবালের ১১৩ ও আদিয়ান মার্টের ২৩৬ জন গ্রাহক টাকা ফেরত পেয়েছেন। তবে মন্ত্রণালয়ে তথ্য সরবরাহ না করায় দেশের সবচেয়ে বড় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির একজন গ্রাহকও টাকা ফেরত পাননি। সূত্র জানান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠিতে ইভ্যালি জানিয়েছে, তারা গত এক বছর কোনো ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারেনি। পুরনো সার্ভারও চালু হয়নি। ফলে গ্রাহকের তালিকা ও পেমেন্ট গেটওয়েতে আটকে থাকা টাকার পরিমাণ সম্পর্কে তাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। তারা কয়েকটি ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও পেমেন্ট গেটওয়ের কাছে এসব তথ্য চেয়ে আবেদন করেও পায়নি। উল্টো ব্যাংক ও আর্থিত প্রতিষ্ঠানগুলো এ ধরনের তথ্য চাওয়ার জন্য ইভ্যালির কাছে কোম্পানির লাইসেন্স ও নবায়নের তথ্য চেয়েছে।
ইভ্যালির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন চিঠিতে উল্লেখ করেন, ইতোমধ্যে আমরা গ্রাহকের স্বার্থ বিবেচনা করে গেটওয়েগুলোয় স্টেটমেন্ট/হিসাব জানার জন্য বিকাশ, নগদ, উপায়, সিটি ব্যাংক, এসএসএল কমার্স ও সাউথ ইস্ট ব্যাংকে আবেদন জানাই। এর মধ্যে দুটি গেটওয়ে আমাদের কাছে কোম্পানির নবায়নকৃত যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তরের তথ্য চেয়েছে। এ ছাড়া এখনো কোনো সঠিক তথ্য কোনো পেমেন্ট গেটওয়ে থেকে পাওয়া যায়নি। সঠিক তথ্যের ওপর নির্ভর করে গ্রাহকের তালিকা এবং আটকে থাকা টাকার পরিমাণ যাচাই করা সম্ভব হবে। সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০২১ সালের ১৫ জুলাই পর্যন্ত ইভ্যালির কাছে গ্রাহকের মোট পাওনা ৩১০ কোটি ৯৯ লাখ ১৭ হাজার ৮০২ টাকা। ২ লাখ ৭ হাজার ৭৪১ গ্রাহকের কাছে ইভ্যালির এ দেনা রয়েছে বলে প্রতিষ্ঠানটি ওই সময় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছিল। তবে জুলাইয়ের পর থেকে পেমেন্ট গেটওয়েগুলোর মাধ্যমে অর্থ পরিশোধের বিধান রেখে নীতিমালা জারি হয়। নীতিমালায় বলা আছে, পণ্য বুঝে পাওয়ার পর গ্রাহকের পেমেন্ট ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টে ছাড় করবে গেটওয়েগুলো। ফলে ওই সময়ের পরে যেসব গ্রাহক ইভ্যালিতে অর্ডার দিয়ে পণ্য বুঝে পাননি সেই টাকাগুলো ইভ্যালির অ্যাকাউন্টে জমা হয়নি। ইভ্যালির নামে পেমেন্ট গেটওয়েতে আটকে আছে ওই টাকা। এখন আটকে থাকা এ টাকা ও গ্রাহকের তথ্য জানতে চাইছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ১ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধন নিয়ে ২০১৮ সালের ১৬ ডিসেম্বর যাত্রা করে ইভ্যালি। তবে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা (সিএফও) ছিল না বা কোনো হিসাব-নিকাশ বিধি অনুসরণ করা হয়নি বলে আদালতে দাখিল করা অডিটে উল্লেখ করা হয়েছে। গত বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) রাসেল ও শামীমাকে গ্রেফতারের পর প্রতিষ্ঠানটির বিষয়ে অডিট করতে একটি পরিচালনা বোর্ড গঠন করে দেন আদালত; যার চেয়ারম্যান ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। এরই মধ্যে পরিচালনা বোর্ড আদালতে জমা দেওয়া অডিট রিপোর্টে উল্লেখ করেছে, বিতর্কিত ই-কমার্স প্ল্যাটফরম ইভ্যালি তাদের লেনদেনের কোনো ধরনের রেকর্ড সংরক্ষণ করেনি। সে কারণে কে তাদের কাছ থেকে কত টাকা পাবে, তা যাচাই করা যাচ্ছে না। ফলে ইভ্যালির পাওনাদারদের অর্থ ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই কম। ওই পরিচালনা পর্ষদ পদত্যাগের পর আদালতের নির্দেশে জামিনে মুক্ত ইভ্যালির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনের নেতৃত্বে একটি পরিচালনা পর্ষদ বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম পরিচালনা করছে।