মঙ্গলবার, ২৪ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

বরিশালে সম্ভাব্য প্রার্থীর ছড়াছড়ি

সংসদ নির্বাচনের হালচাল

রাহাত খান, বরিশাল

বরিশালে সম্ভাব্য প্রার্থীর ছড়াছড়ি

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে বরিশালের ছয়টি সংসদীয় আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীর ছড়াছড়ি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে। সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি কয়েক আসনে যোগ্য প্রার্থী সংকটে। মাঠের বিরোধী দল বিএনপির দীর্ঘ প্রার্থী তালিকা থাকলেও গতানুগতিক নির্বাচনে অংশগ্রহণের আগ্রহ নেই তাদের।

ছয় আসনে প্রার্থী রয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের। দুটি আসনে প্রার্থী আছে যথাক্রমে ওয়ার্কার্স পার্টি এবং বিভক্ত জাসদের দুই গ্রুপের। নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ হলে শুধু সদর আসনে প্রার্থী দেবে বাম গণতান্ত্রিক জোট। একটি আসনে এনপিপির একজন প্রার্থিতা জানান দিয়েছে। অন্য কোনো ছোট দলের নামগন্ধও নেই সংসদীয় এলাকায়।

বরিশাল-১ (গৌরনদী-আগৈলঝাড়া) : এ আসনে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী দলের জেলা কমিটির সভাপতি পার্বত্য শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন ও পরীবিক্ষণ কমিটির আহ্বায়ক (মন্ত্রীর মর্যাদা) আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ এমপি। বিএনপির প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন সাবেক এমপি ও দলের মিডিয়া সেল আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপন, জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুুসুর রহমান এবং দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির দুই সদস্য ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সোবাহান ও গাজী কামরুল ইসলাম সজল। এখানে জাতীয় পার্টির প্রার্থী কেন্দ্রীয় কমিটির দুই সদস্য সেকান্দার আলী সেরনিয়াবাত ও এস এম পারভেজ। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী দলের শুরা সদস্য মো. মেহেদী হাসান রাসেল।

বরিশাল-২ (উজিরপুর-বানারীপাড়া) : সন্ধ্যা নদীর দুই তীরের দুই উপজেলা নিয়ে গঠিত এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালিকা দীর্ঘ। আলোচনা আছে বরিশাল-১ আসনের পাশাপাশি বরিশাল-২ আসনেও প্রার্থী হতে পারেন আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ। তার মেঝ ছেলে এফবিসিসিআইর পরিচালক মঈন উদ্দিন আবদুল্লাহ এবং ছোট ছেলে আশিক আবদুল্লাহও প্রার্থী হতে পারেন। হাসানাত নিজে প্রার্থী হলে অন্য কেউ প্রার্থী হওয়ার সাহস দেখাবেন না বলে ধারণা করা হয়। তিনি প্রার্থী না হলে বর্তমান সংসদ সদস্য মো. শাহে আলম, দুই সাবেক সংসদ সদস্য যথাক্রমে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুস ও মনিরুল ইসলাম মনি, ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহসভাপতি হাবিবুর রহমান খান, আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আনিছুর রহমান, শের-ই বাংলা এ কে ফজলুল হকের দৌহিত্র ফাইয়াজুল হক রাজু এবং আওয়ামী লীগ ঘরানার শিল্পপতি ক্যাপ্টেন এম. মোয়াজ্জেম হোসেন প্রার্থী হতে পারেন। এখানে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী ইসলামী যুব আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা নেছার উদ্দিন। এ আসনে বিএনপির প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এস. সরফুদ্দিন সান্টু, দলের যুগ্ম মহাসচিব সাবেক এমপি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, দলের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সহ-সম্পাদক রওনাকুল ইসলাম টিপু এবং জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান। এখানে জাতীয় পার্টির প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন বরিশাল-৩ আসনের বর্তমান এমপি ও দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য গোলাম কিবরিয়া টিপু। ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী তালিকায় আছেন অধ্যাপক মন্টু লাল কুন্ডু ও জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সদস্য জহিরুল ইসলাম টুটুল। জাসদ আম্বিয়া গ্রুপের প্রার্থী দুজন যথাক্রমে কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বাদল ও কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আনিচুজ্জামান। জাসদ-ইনু থেকে প্রার্থী হবেন সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর সহকারী একান্ত সচিব মো. সাজ্জাদ। ন্যাশনাল পিপলস্ পার্টির সাহেব আলী রনি নিজের প্রার্থিতা ঘোষণা করেছেন।

বরিশাল-৩ (বাবুগঞ্জ-মুলাদী) : এ আসনে হেভিওয়েট প্রার্থী সংকটে ক্ষমতাসীনরা। বিগত দিনে জোটভুক্ত নির্বাচনে শরিকদের এই আসন ছেড়ে দেওয়ায় যোগ্য প্রার্থী গড়ে ওঠেনি আওয়ামী লীগে। দুই উপজেলার দ্বিতীয় সারির নেতা বাবুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি দুবারের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সরদার খালেদ হোসেন স্বপন, সাবেক সভাপতি ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান কাজী এমদাদুল হক দুলাল, মুলাদী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও দুবারের উপজেলা চেয়ারম্যান তারিকুল হাসান মিঠু, যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সহসম্পাদক মিজানুর রহমান মিজান, যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হক আসাদ, আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য ড. মো. আমিনুল হক কবির এবং ওয়ার্কার্স পার্টি ছেড়ে আওয়ামী লীগে আসা ব্যবসায়ী আতিকুর রহমান আতিক। এ আসনে বিএনপির প্রার্থী দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান ও ভাইস চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন এবং মুলাদী উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুস ছত্তার খান। এখানে জাতীয় পার্টির প্রার্থী দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও বর্তমান এমপি গোলাম কিবরিয়া টিপু। ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী দলের জেলা কমিটির সম্পাদক ও সাবেক এমপি শেখ টিপু সুলতান। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী দলের জেলা কমিটির সেক্রেটারি উপাধ্যক্ষ মাওলানা সিরাজুল ইসলাম।

বরিশাল-৪ (হিজলা-মেহেন্দিগঞ্জ) : এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাম্প্রতিক সময়ে দলের সব পদ থেকে অব্যাহতি পাওয়া বর্তমান এমপি পংকজ নাথ, দলের আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মী আহমেদ, ঢাকা মহানগর (উত্তর) আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ, মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি অ্যাডভোকেট আফজালুল করিম, সাবেক এমপি ও সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. মাইদুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হেমায়েত উদ্দিন হিমু, মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও পৌর মেয়র কামাল উদ্দিন খান এবং হিজলা উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সুলতান মাহমুদ টিপু। এ আসনে বিএনপির প্রার্থী জেলা (উত্তর) বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক এমপি মেজবাউদ্দিন ফরহাদ এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান। এখানে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মাইটিভির চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন সাথী। এ আসনে বিগত নির্বাচনে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী নাগরিক ঐক্যের (মাহমুদুর রহমান মান্না) নুরুর রহমান জাহাঙ্গীর এবারও প্রার্থী হবেন। এখানে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী চরমোনাই পীর সাহেবের ছোট ভাই মাওলানা সৈয়দ নুরুল করীম।

বরিশাল-৫ (সদর ও সিটি করপোরেশন) : সদর আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী দলের জেলা কমিটির সহসভাপতি বর্তমান এমপি ও পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক, মহানগর আওয়ামী লীগ সহসভাপতি সাবেক এমপি জেবুন্নেছা আফরোজ, মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট গোলাম আব্বাস চৌধুরী দুলাল, লঞ্চ মালিক সমিতি সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মাহবুব উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম এবং সদর উপজেলা পরিষদের দুই বারের চেয়ারম্যান চেম্বার সভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু। এ ছাড়া প্রেস ক্লাব সাধারণ সম্পাদক ব্যবসায়ী এস এম জাকির হোসেন এবং আওয়ামী লীগ ঘরানার ব্যবসায়ী মশিউর রহমান খানও মনোনয়ন প্রত্যাশা করেন।

এ আসনে বিএনপির প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন দলের যুগ্ম মহাসচিব চার বারের সাবেক এমপি ও সাবেক সিটি মেয়র মজিবর রহমান সরোয়ার, দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক সংরক্ষিত এমপি বিলকিস জাহান শিরিন, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুক, জেলা (দক্ষিণ) বিএনপির সাবেক সভাপতি এবায়দুল হক চাঁন এবং কেন্দ্রীয় সদস্য আবু নাসের মো. রহমতউল্লাহ।

এখানে জাতীয় পার্টির প্রার্থী দলের চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ও মহানগর জাপার সদস্য সচিব প্রকৌশলী ইকবাল হোসেন তাপস এবং জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক কে এম মতুর্জা আবেদীন। সদর আসনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী দলের সিনিয়র নায়েবে আমির ও চরমোনাই পীরের মেঝ ভাই মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করীম। নির্বাচনের পরিবেশ হলে বাম গণতান্ত্রিক জোটের প্রার্থী ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি অধ্যাপক আ. ছত্তার।

বরিশাল-৬ (বাকেরগঞ্জ) : এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী দলের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) হাফিজ মল্লিক, বুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মঞ্জুরুল হক মঞ্জু এবং যুবলীগ কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিশ্বাস মতিউর রহমান বাদশা। এখানে বিএনপির প্রার্থী জেলা (দক্ষিণ) বিএনপির আহ্বায়ক ও সাবেক এমপি আবুল হোসেন খান, জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম খান রাজন এবং দলের কেন্দ্রীয় সদস্য ডা. শহীদুল ইসলাম। এ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য তিন বারের এমপি নাসরিন জাহান রত্না আমিন। এখানে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী দলের কেন্দ্রীয় সহ-অর্থ বিষয়ক সম্পাদক মাওলানা নুরুল ইসলাম আলআমিন। জাসদের (ইনু) যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মোহসীন এবারও একই আসনে প্রার্থী হবেন।

সর্বশেষ খবর