রবিবার, ২৯ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

রহস্যময় পতঙ্গভুক সূর্যশিশির দিনাজপুরে!

রিয়াজুল ইসলাম, দিনাজপুর

রহস্যময় পতঙ্গভুক সূর্যশিশির দিনাজপুরে!

দিনাজপুর সরকারি কলেজ ক্যাম্পাসে বিলুপ্তপ্রায় পতঙ্গভুক ‘সূর্যশিশির’ নামে এক উদ্ভিদের দেখা পাওয়া গেছে। গতকাল কলেজের পুকুর পাড়ের পশ্চিমে এই মাংসাশী উদ্ভিদটি আবারও শনাক্ত করেন দিনাজপুর সরকারি কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন। বর্তমানে ছোট-বড় ৪০-৪৫টি গাছের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। তবে এর আগে আরও বেশি দেখা গেলেও এটি দিন দিন বিভিন্ন কারণে কমে যাচ্ছে।

‘সূর্যশিশির’ এই মাংসাশী উদ্ভিদটির ইংরেজি নাম Sundews, এটি Caryophyllales বর্গের অন্তর্ভুক্ত এবং Droseraceae গোত্রের অন্তর্ভুক্ত। উদ্ভিদটির বৈজ্ঞানিক নাম Drosera Rotundifolia. শীতকালে জন্মানো উদ্ভিদটি সংরক্ষণ এবং বিস্তারে শিক্ষার্থীদের এ নিয়ে গবেষণা চলমান রয়েছে। ২৮ জানুয়ারি ওই কলেজের ক্যাম্পাসে উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এমএসসি পাস করা মো. মোসাদ্দেক হোসেনসহ অনেকে রূপগল্প শোনার মতো মাংসাল উদ্ভিদকে শনাক্ত করতে পেরে উদ্ভিদটি পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা চলমান রেখেছেন। দিনাজপুর সরকারি কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন জানান, গোলাকার সবুজ থেকে লালচে রঙের থ্যালাসের ন্যায় মাটিতে ল্যাপ্টে থাকা উদ্ভিদটি Carnivorous বা মাংসাশী উদ্ভিদ সমূহের মধ্যে এই উদ্ভিদ প্রজাতি সবচেয়ে বড়। ৪-৫ সেন্টিমিটার ব্যাস বিশিষ্ট গোলাকার থ্যালাস সাদৃশ্য উদ্ভিদটির মধ্য থেকে একটি লাল বর্ণের ২-৩ ইঞ্চি লম্বা পুষ্পমঞ্জুরি হয়। সংখ্যায় ১৫-২০টি তিন থেকে চার স্তরের পাতা সাদৃশ্য মাংসাল দেহের চারদিকে পিন আকৃতির কাঁটা থাকে। মাংসাল দেহের মধ্যভাগ অনেকটা চামুচের মতো ঢালু থাকে। পাতাগুলোতে মিউসিলেজ সাবস্টেন্স নামক একপ্রকার এনজাইম নিঃসৃত করে। এনজাইমে পোকা পড়লে আঠার মতো আটকে রাখে। শীতের সকালে পড়া শিশিরে চকচক করে উদ্ভিদটি, তাতে পোকারা আকৃষ্ট হয়। পোকা-মাকড় উদ্ভিদটিতে পড়লে এনজাইমের আঠার মাঝে আটকে যায়। তখন পতঙ্গ নড়াচড়া করলে মাংসাল পাতার চারদিকে পিনগুলো বেঁকে পোকাকে ধরে ফেলে। পিনগুলো পোকার শরীরে ফুড়ে পোকাকে ধরে রাখে। তিনি আরও জানান, উদ্ভিদটি প্রথম ক্যাম্পাসে শনাক্ত করা হয় ১৯৯৭ সালে। তৎকালীন বিভাগীয় প্রধান রজব আলী মোল্লা এটি শনাক্ত করেন। তখন শতাধিক গাছ থাকলেও বর্তমানে কমে আসছে। পরিবেশে বিরূপ প্রভাবের কারণে উদ্ভিদটি এখন বিলুপ্ত প্রায়। উল্লেখ্য, জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘর, আগারগাঁও, ঢাকা এর জীববিজ্ঞান গ্যালারিতে প্রদর্শিত উদ্ভিদটির প্রতিকৃতিতে দেওয়া তথ্যমতে, বিলুপ্ত প্রায় এই উদ্ভিদটি বাংলাদেশে শুধু দিনাজপুর, রংপুর ও ঢাকা জেলায় পাওয়া যেত উল্লেখ করা হয়েছে বলে জানা যায়।

সর্বশেষ খবর