শুক্রবার, ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা
ফেনী

সক্রিয় আওয়ামী লীগ, প্রার্থী বেশি বিএনপিতে

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল

ফেনী প্রতিনিধি

সক্রিয় আওয়ামী লীগ, প্রার্থী বেশি বিএনপিতে

জাতীয় সংসদে ফেনীর সংসদীয় আসন তিনটি। আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রার্থী ও কর্মী-সমর্থকরা ইতোমধ্যে তৎপরতা শুরু করে দিয়েছেন। বিশেষ করে সরকারি দল আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা তাদের দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়ে দিয়েছেন।

বিরোধী দল বিএনপি ও অন্য দু-একটি রাজনৈতিক দলের এখনো এ নির্বাচন ঘিরে তেমন কোনো আগ্রহ দেখা না গেলেও প্রতিটি আসনেই দলগুলোর প্রার্থীর ছড়াছড়ি দেখা যাচ্ছে। থেমে নেই মনোনয়নপ্রত্যাশীদের তৎপরতা। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে ফেনীর তিনটি আসনের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সম্পর্কে বিস্তারিত দেওয়া হলো-

ফেনী- : এ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য মহজোটের প্রার্থী জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার। গত দুই মেয়াদে তিনি এ আসন থেকে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে জয়লাভ করেন। আগামী নির্বাচনেও তিনি প্রার্থী হবেন বলে জানা যায়। তবে তার ব্যাপারে স্থানীয় আওয়ামী লীগে অসন্তোষ আছে।

আওয়ামী লীগের নেতাদের অভিযোগ, শিরীন আখতার কেবল তাঁর দলীয় নেতা-কর্মীদের উন্নয়নে কাজ করেন। রাষ্ট্রীয় কোনো কর্মসূচিতে স্থানীয় আওয়ামী লীগকে তিনি সম্পৃক্ত করেন না। এবার আওয়ামী লীগ এই আসনে ছাড় দিতে নারাজ। এ আসনে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের পছন্দের প্রার্থীদের মধ্যে শীর্ষে রয়েছেন দলীয় নেতা আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক সহকারী একান্ত সচিব এবং প্রটোকল অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এ ছাড়া ছাগলনাইয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মেজবাউল হায়দার চৌধুরী সোহেল, পরশুরাম উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কামাল উদ্দিন মজুমদার, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য শেখ আবদুল্লাহ, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের সাবেক ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব সফিকুল বাহার মজুমদার টিপুর নামও দলীয় প্রার্থী হিসেবে শোনা যাচ্ছে। অন্যদিকে, এ আসনটি মূলত বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার আসন হিসেবেই পরিচিত। বারবার তিনি এ আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছেন। তাই এখানে বিএনপির কোনো প্রার্থী মুখ খুলে প্রার্থিতার দাবি করেন না। তবে আইনি সমস্যায় বেগম খালেদা জিয়া নির্বাচন করতে না পারলে এবারও গতবারের মতো বিএনপির প্রার্থী হিসেবে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনুকে দেখা যেতে পারে। এখানে পরশুরামের সাবেক মেয়র বিএনপির নেতা আবু তালেবকেও কেউ কেউ দেখতে চান বলে জানা যায়। আর জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে লড়তে চান দলের জেলা সভাপতি মোতাহের হোসেন চৌধুরী রাশেদ।

ফেনী- : ফেনীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফেনী সদর আসনে আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারী। এ আসনে অন্য কোনো প্রার্থীর নাম শোনা যায়নি। ফেনী পৌরসভার মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম স্বপন মিয়াজী এবং সদর উপজেলার চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শুসেন চন্দ্র শীলের মতে, নিজাম উদ্দিন হাজারীর বাইরে এখানে কেউ দলীয় মনোনয়ন চাইবেন না। ফেনীতে বিএনপির তেমন কোনো প্রচার-প্রচারণা না থাকলেও দলটি নির্বাচনে অংশ নিলে এ আসন থেকে প্রায় ২৫ জন মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে। গত সংসদ নির্বাচনেও এ আসনে বিএনপির ১৮ জন প্রার্থী মনোনয়ন চেয়েছিলেন। ফেনী-২ আসনে এবারও বিএনপির প্রার্থী হিসেবে সাবেক দুবারের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক জয়নাল আবেদিনকে (ভিপি) অনেকে দেখতে চান। এ আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে আরও যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন- সাবেক সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য রেহানা আক্তার রানু, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি জিয়া উদ্দিন মিস্টার, অ্যাডভোকেট মেজবাহ উদ্দিন খান, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শেখ ফরিদ বাহার, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক গাজী হাবিব উল্যাহ মানিক। এ আসনে জাতীয় পার্টির তেমন কোনো অবস্থান না থাকলেও জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক জহির উদ্দিন মজুমদার (ভিপি জহির) মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা যায়।

ফেনী- : এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী। এ আসনে এবারও মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীকে মহাজোট থেকে মনোনয়ন দিলে আওয়ামী লীগ থেকে কেউ কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন বলে জানা যায়। ফেনী-৩ আসন থেকে কয়েকজন সাবেক ছাত্রনেতা ও বর্তমানে বিভিন্ন পর্যায়ের জনপ্রতিনিধি আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী। ফেনীর সোনাগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জহির উদ্দিন মাহমুদ লিপটন, দাগনভূঞা উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা যুবলীগের সভাপতি দিদারুল কবির রতন, সোনাগাজী পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম খোকন আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী। বিএনপি থেকে এ আসনে গত নির্বাচনে ১৬ জন প্রার্থী মনোনয়ন চেয়েছিলেন। এবারও ১৭ জন প্রার্থী মনোনয়নপ্রত্যাশী। মনোনয়ন দৌড়ে শীর্ষে রয়েছেন- কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এফবিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি বিশিষ্ট শিল্পপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু। এ আসন থেকে গতবার দল থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আবদুল লতিফ জনিকে। ঋণখেলাপি জটিলতায় তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি। পরে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন আবদুল আউয়াল মিন্টুর ছোট ভাই আকবর হোসেন। এ বছরও এ দুই প্রার্থী মনোনয়নপ্রত্যাশী বলে জানা যায়। এ আসন থেকে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) নাসির, শিল্পপতি ছাইদ হোসেন চৌধুরীর নামও বিএনপির প্রার্থী হিসেবে প্রচারণায় রয়েছে।

 

সর্বশেষ খবর