বুধবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

ভোটে চোখ অর্ধশতাধিক প্রার্থীর

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

ভোটে চোখ অর্ধশতাধিক প্রার্থীর

চলমান আন্দোলনের মধ্যেই কেন্দ্রের নজর কাড়ার চেষ্টা করছেন আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেটের ছয়টি আসনের বিএনপি দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। আর আওয়ামী লীগ নেতারা মনোনয়ন পেতে আগেভাগেই শুরু করেছেন কেন্দ্রে দৌড়ঝাঁপ। দলীয় কর্মসূচি ও এলাকায় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের মাধ্যমে নিজেদের প্রার্থিতার জানান দিচ্ছেন তারা। বসে নেই জাতীয় পার্টি, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও বিভিন্ন ইসলামী দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীরাও। সবমিলিয়ে সিলেটের ছয়টি আসনে অর্ধশতাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশীর নাম আলোচিত হচ্ছে।

সিলেট- : এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে গত নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হন ড. এ কে আবদুল মোমেন। তিনি বর্তমানে সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এখন পর্যন্ত এ আসনে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী ড. মোমেন। আগামী নির্বাচনেও দল তার ওপরই আস্থা রাখবে এমনটা মনে করছেন আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা।

এ আসনে এখন পর্যন্ত বিএনপিদলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে বেশি আলোচিত হচ্ছে খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা খন্দকার আবদুল মুক্তাদিরের নাম। দলীয় কর্মসূচির মাধ্যমে তিনি নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ এবং জনমত গঠনে কাজ করছেন। তবে দল সিটি নির্বাচনে অংশ না নিলে এ আসনে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীও দলীয় মনোনয়ন চাইতে পারেন। আর বিএনপির এই কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য মনোনয়ন চাইলে বেকায়দায় পড়তে পারেন মুক্তাদির- এমন আলোচনাও রয়েছে দলীয় ফোরামে।

দলীয় একটি সূত্র জানিয়েছে, সিটি নির্বাচন না করলে আরিফ সিলেট-১ ও ৪ আসনে মনোনয়ন চাইবেন। সিলেট-৪ আসনের বিএনপি দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য দিলদার হোসেন সেলিমের মৃত্যুতে সেখানে আরিফের মনোনয়ন পাওয়ার সুযোগ রয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে। যদিও আরিফের ভাষ্য, কোথায় নির্বাচন করব সেটা দলীয় সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে। দল নির্বাচনে গেলে এবং যেখানে যে পদে করাতে চাইবে সেখানেই নির্বাচন করব।

সিলেট- : এ আসনে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা সর্বশেষ নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়েছিলেন নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। এরপর গেল দুবার আসনটি ছেড়ে দেওয়া হয় জাতীয় পার্টিকে। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সহযোগিতায় জাতীয় পার্টির প্রার্থী ইয়াহইয়া চৌধুরী পাস করলেও গেল নির্বাচনে ভরাডুবি ঘটে। আওয়ামী লীগের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ায় নির্বাচনে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থীদের চেয়েও কম ভোট পান। এবারও ওই আসনে দলীয় মনোনয়ন চাইবেন জাতীয় পার্টির সাবেক এই সংসদ সদস্য।

আসনটিতে গেল নির্বাচনে বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনা বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছিলেন। কিন্তু তার মনোনয়ন বাতিল হয়ে গেলে বিএনপির সমর্থন নিয়ে আসনটিতে পাস করেন গণফোরামের প্রার্থী মোকাব্বির খান। বিজয়ী হওয়ার পর মোকাব্বিরের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ে বিএনপি নেতা-কর্মীদের। অন্যদিকে ইলিয়াস আলীর স্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা লুনা এলাকায় নিয়মিত সময় দিয়ে যাচ্ছেন। আগামী নির্বাচনে বিএনপির একক প্রার্থী হিসেবে তার নাম আলোচিত হচ্ছে।

আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইলিয়াস আলীকে পরাজিত করে চমক দেখান তিনি। সারা বছর নির্বাচনী এলাকায় সরব থাকায় তিনি ‘২৪ ঘণ্টার রাজনীতিবিদ’ হিসেবে খ্যাতি পেয়েছেন। গেল দুই নির্বাচনে মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টিকে আসনটি ছাড় দেওয়ায় তিনি প্রার্থী হতে পারেননি। এর মধ্যে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন জমা দেওয়ার পর দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার নির্দেশে তিনি প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন। আসনটিতে শফিকুর রহমান চৌধুরী ছাড়াও যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন। স্থানীয় রাজনীতিতে তিনি শফিকুর রহমান চৌধুরীর বিপরীতে একটি বলয় তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। গেল নির্বাচনে এই আসনে খেলাফত মজলিসের প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন দলটির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মো. মুনতাসির আলী। এবারও তিনি প্রার্থী হওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছেন।

সিলেট- : এ আসনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিএনপির প্রার্থী শফি আহমেদ চৌধুরীকে পরাজিত করে হ্যাটট্রিক বিজয় পেয়েছিলেন আওয়ামী লীগের মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কয়েস। কিন্তু বছরখানেক আগে তার মৃত্যুতে আসনটি শূন্য হলে উপনির্বাচনে বিজয়ী হন জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব। ওই সময় দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন আওয়ামী লীগের অর্ধ ডজন নেতা। আগামী নির্বাচনেও তারা দলীয় মনোনয়ন চাইবেন। নির্বাচনকে টার্গেট করে এলাকায় সরব রয়েছেন আওয়ামী লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, বিএমএ’র মহাসচিব ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল। এ ছাড়া যুক্তরাজ্য প্রবাসী সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আ স ম মিসবাহ, মনির হোসাইন ও আবদুর রকিব মন্টুও দলীয় মনোনয়ন লাভের আশায় কাজ করছেন।

উপনির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হয়ে বহিষ্কার হন বিএনপির কার্যনির্বাহী সদস্য সাবেক সংসদ সদস্য শফি আহমেদ চৌধুরী। এরপর দল আর তাকে ফিরিয়ে নেয়নি। আসনটিতে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে সবচেয়ে আলোচিত নাম জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ূম চৌধুরী। জেলা বিএনপির সভাপতির দায়িত্ব পাওয়ার পর তিনি সিলেট বিএনপিকে চাঙা রাখতে বড় ভূমিকা রাখছেন বলে মনে করছেন নেতা-কর্র্মীরা। এ ছাড়া শেষ মুহূর্তে আসনটিতে যুক্তরাজ্য বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আবদুস সালামও মনোনয়ন চাইতে পারেন।

এ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে প্রেসিডিয়াম সদস্য আতিকুর রহমান আতিক ও জেলা শাখার সাবেক সদস্য সচিব উছমান আলী দলীয় মনোনয়নের দৌড়ে রয়েছেন।

সিলেট- : এ আসনে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন প্রবাসী ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ এমপি। আসনটিতে সিলেট জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি আবদুল হাকিম চৌধুরী ও সাবেক ছাত্রনেতা কামরুজ্জামান সেলিম দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার দৌড়ে রয়েছেন। এর মধ্যে হাকিম চৌধুরী গোয়াইনঘাট উপজেলা পরিষদের দুইবারের চেয়ারম্যান ও এলাকায় অবস্থান করছেন। আর সেলিম হাই কোর্টে আইনপেশায় নিয়োজিত। সীমান্তবর্তী এ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে গেল নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন প্রেসিডিয়াম সদস্য এ টি ইউ তাজ রহমান। কিন্তু ভোটের মাঠে সুবিধা করতে পারেননি তিনি। এবার আসনটিতে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশায় কাজ করে যাচ্ছেন জেলা ছাত্র সমাজের সাবেক সভাপতি মুজিবুর রহমান ডালিম।

সিলেট- : এ আসনে আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য হাফিজ আহমদ মজুমদার। তিনি ছাড়াও আসনটিতে দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে রয়েছেন সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমদ, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ড. আহমদ আল কবীর ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও হাই কোর্টের আইনজীবী মোশতাক আহমদ।

এ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে রয়েছেন জেলা বিএনপির সাবেক সহ সভাপতি আশিক চৌধুরী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রনেতা মামুনুর রশিদ মামুন ও জেলা যুবদলের সাবেক আহ্বায়ক সিদ্দিকুর রহমান পাপলু। এ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে যাদের নাম আলোচিত হচ্ছে তাদের মধ্যে রয়েছেন, পার্টির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুদ্দিন খালেদ, যুক্তরাজ্যের তরুণ শিল্পপতি ও পার্টির কেন্দ্রীয় সদস্য এম জাকির হোসেন ও জেলা জাতীয় পার্টির সাবেক সভাপতি এম এ মতিন চৌধুরী।

সিলেট- : এ আসনে আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য দলের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য নুরুল ইসলাম নাহিদ। আগামী নির্বাচনেও তিনি দলীয় মনোনয়ন চাইবেন। এ আসনে দলীয় মনোনয়ন চাইবেন কানাডা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সারওয়ার হোসেন। আসনটিতে গেল নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেছেন সাবেক ছাত্রনেতা ও বিএনপি নেতা ফয়সল আহমদ চৌধুরী। নির্বাচনে পরাজিত হলেও তিনি এলাকায় সরব রয়েছেন। তার সঙ্গে দলীয় মনোনয়নের দৌড়ে রয়েছেন জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আবুল কাহের চৌধুরী শামীম। এ আসনে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন চাইবেন দলটির সাবেক যুগ্ম মহাসচিব সেলিম উদ্দিন।

এ ছাড়া সিলেট-৩ আসনে দক্ষিণ সুরমা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মাওলানা লোকমান আহমদ, সিলেট-৪ আসনে জৈন্তাপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন, সিলেট-৫ আসনে সাবেক সংসদ সদস্য মাওলানা ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী ও সিলেট-৬ আসনে জেলা দক্ষিণ জামায়াতের আমির মাওলানা হাবিবুর রহমান নির্বাচনী প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

সর্বশেষ খবর