বুধবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

সারা দেশে ৪০০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি

পয়লা ফাল্গুন ও ভালোবাসা দিবস

নিজস্ব প্রতিবেদক

করোনার কারণে গত দুই বছর ফুল ব্যবসা কিছুটা কম হয়েছে। এবার সেই অনিশ্চয়তা কেটে গেছে। ভালো মুনাফার পাশাপাশি ছাড়িয়ে গেছে ফুল বিক্রির লক্ষ্যমাত্রাও। গতকাল পয়লা ফাল্গুন ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবস কেন্দ্র করে জমে ওঠে ঢাকাসহ দেশের প্রধান প্রধান ফুলের বাজার।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এ বছর চাহিদা বাড়ায় সব ধরনের ফুলের দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। ব্যবসায়ীদের এ দুই দিবস কেন্দ্র করে প্রায় ৪০০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হয়েছে। ভালো দাম পাওয়ায় খুশি চাষিরাও। সোমবার সকাল থেকেই ক্রেতা-বিক্রেতার পদচারণে জমজমাট ছিল রাজধানীর শাহবাগের ফুলের বাজার। সেখানে দেখা যায়, ঢাকার বিভিন্ন এলাকার পাশাপাশি অনেক ব্যবসায়ী ফুল কিনতে এসেছিলেন আশপাশের জেলাগুলো থেকে। এদের অধিকাংশই নিয়মিত ফুলের ব্যবসা করেন। আবার অনেকে ফুল বিক্রি করেছেন শুধু বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে। সবাই এবার ভালো ব্যবসা করেছেন।

গতকাল শাহবাগে মৌসুমি ফুল ব্যবসায়ী এক নারী বলেন, এবার আমার প্রথম ব্যবসা। আমার ধারণাও ছিল এবার ভালো ব্যবসা হবে। তিনি বলেন, মহামারি করোনার কারণে গত দুই বছর ভালো যায়নি ফুলের ব্যবসা। করোনার প্রভাব কাটিয়ে এ বছর বেড়েছে ফুলের দামও। গোলাপ, গ্ল্যাডিওলাস, চন্দ্রমল্লিকা, রজনিগন্ধা, জারবেরা, গাঁদা, রডস্টিক, জিপসিসহ অন্তত ১৫-২০ রকমের ফুল বিক্রি হয়েছে শাহবাগের বাজারে। তবে চাহিদার শীর্ষে ছিল গোলাপ। প্রতিটি গোলাপ বিক্রি হয়েছে ৩০ থেকে ১১০ টাকায়; যা স্বাভাবিক সময়ে বিক্রি হয় ৫ থেকে ২৫ টাকায়। বিক্রেতারা জানান, লম্বা স্টিকের চায়না গোলাপ সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে। গত বছর এ গোলাপ ৬-৭ টাকায় বিক্রি হলেও এবার ৬০-৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আর দেশি গোলাপ গত বছর এক বান্ডিল ৩ হাজার টাকায় বিক্রি হলেও এ বছর বিক্রি হয়েছে ৭ হাজার টাকায়। কৃষকও ভালো দাম পেয়েছে।

জানা গেছে, পয়লা ফাল্গুন ও ভালোবাসা দিবস কেন্দ্র করে রাজধানীতে যত ফুল বিক্রি হয়, তার অধিকাংশই শাহবাগ ও আগারগাঁওয়ে। বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির দেওয়া তথ্যমতে, স্বাভাবিক সময়ে শাহবাগ ও আগারগাঁওয়ের বাজারে প্রতিদিন ৫০ লাখ টাকার ফুল বিক্রি হয়। তবে এবার পয়লা ফাল্গুন ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবস কেন্দ্র করে ফুল বিক্রি হয়েছে ২৭০ কোটি টাকার। আর সারা দেশে ফুল বিক্রি হয়েছে ১৩০ কোটি টাকার বেশি। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি বাবুল প্রসাদ বলেন, এ বছর দিবস দুটি নিয়ে মানুষের ব্যাপক আগ্রহ দেখছি। এ বছর সাড়ে ৩ থেকে ৪০০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হয়েছে। শুধু রাজধানী ঢাকা নয়, ভালো ব্যবসা হয়েছে প্রান্তিক অঞ্চলেও। যশোরের গদখালী, নারায়ণগঞ্জ, সাভারের গোলাপ গ্রাম ও নওগাঁয় জমে ওঠে ফুলের বাজার। যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী ও পানিসারার ফুল চাষিরা জানান, এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফুলের উৎপাদন ভালো হয়েছে। বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সাবেক সভাপতি আবদুর রহিম বলেন, ঢাকার পাশাপাশি সারা দেশের চাষিরাও এ বছর ফুলের ভালো দাম পেয়েছেন।

সাভার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাজিয়াত আহমেদ বলেন, গত দুই বছরের তুলনায় এবার বাজারে ফুলের দাম ভালো পাওয়ায় লাভবান হয়েছেন কৃষক। গত বছর এ তিনটি দিবস কেন্দ্র করে সারা দেশে ২০০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হয়েছিল। এ বিষয়ে যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাসুদ হোসেন পলাশ বলেন, ঝিকরগাছার ৬৩০ হেক্টর জমিতে ৭২ প্রজাতির ফুল চাষ হয়েছে। এবার আবহওয়া অনুকূলে থাকায় ফুলের উৎপাদন ভালো হয়েছে। পোকার আক্রমণও অনেক কম ছিল। ফলে ফুল বিক্রি করে লাভবান হচ্ছে কৃষক।

সর্বশেষ খবর