ফাগুনের আগুন লেগেছে বাগানে। চারদিকে থোকায় থোকায় শিমুল ফুলের সমারোহ। সারি সারি গাছে টকটকে লাল ফুলের রক্তিম আভা। গাছতলায়ও বিছানো অজস্র ফুল। যেদিকে চোখ যায়, সেদিকেই ফুল আর ফুল। সঙ্গে অগুনতি পাখির কলকাকলি এক অন্য রকম অনুভূতি জাগায় মনে। বসন্তে এমন মোহনীয় রূপে সেজেছে দেশের সবচেয়ে বড় বাগান ‘জয়নাল অবেদীন শিমুল বাগান’। প্রতি বছর এ সময়টাতে আপন মহিমায় ডালে ডালে ফোটে ফুল। ফুলে ফুলে যৌবন পায় পুরো বাগান। মরমী কবি রাধারমন দত্তের গানের কথা, ‘শিমুল ফুলের রঙ দেখিয়া ঝম্প দিও না’, কথাটি উপেক্ষা করে প্রতিদিন বাগানে ঝম্প দিচ্ছেন হাজারো পর্যটক। পর্যটক-পথিকদের এ বাগানের শিমুল ফুলের রং এড়িয়ে চলা কষ্টকর। সবার মন রাঙিয়ে তুলে ফুলে ফুলে লাল হয়ে থাকে বাগান। তাই সৌন্দর্য উপভোগ করতে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসেন দেশি-বিদেশি পর্যটক।
সকাল-সন্ধ্যা বাগানে লেগে থাকছে পর্যটকদের উপচেপড়া ভিড়। সব বয়সী মানুষের পদচারণায় মুখরিত হচ্ছে বাগান। এখানে দীর্ঘ সময় কাটাচ্ছেন অগন্তুকরা। চলছে আড্ডা, কবিতা-গান। ব্যস্ত সময় কাটছে শিমুল ফুলের রূপের সঙ্গে নিজেদের স্থির ও ভিডিওচিত্র ধারণে। বাগানের মধ্যখানে নাগরদোলা আর বাহারি রঙের ঘোড়ায় চড়েও দারুণ মুহূর্ত উপভোগ করছেন অনেকে।
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়নের মানিগাঁও এলাকায় ‘জয়নাল আবেদীন শিমুল বাগান’-এর অবস্থান। যাদুকাটা নদীর তীর ঘেঁষে শতাধিক বিঘার বেশি জায়গা নিয়ে গড়ে তোলা হয় দেশের সবচেয়ে বড় বাগান। নদীর ওপারে ভারতের মেঘালয় পাহাড়। মাঝখানে যাদুকাটা নদী। নদী পেরিয়েই শিমুল বাগান। ২০০২ সালে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নিজ জায়গায় এ বাগান প্রতিষ্ঠা করেন। রোপণ করেন প্রায় ৩ হাজার গাছ। দিনে দিনে বেড়ে ওঠা এ শিমুল গাছগুলোই হয়ে ওঠে দেশের বৃহৎ শিমুল বাগানে। অন্যতম আকর্ষণের স্থান হয়ে উঠেছে দেশি-বিদেশি সৌন্দর্যপিপাসু মানুষের কাছে।