শিরোনাম
রবিবার, ৫ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা

কাঞ্চন সেতুর টোল প্লাজায় দুর্ভোগ

ম্যানুয়াল টোল আদায়ে ২৪ ঘণ্টাই ৮-১০ কিমি যানজট টাকা হয় ভাগবাটোয়ারা, ২০১৬ সালে মেয়াদ শেষ টোল আদায়ের, শীতলক্ষ্যার অন্য তিন সেতুতে নেই টোল

রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি

কাঞ্চন সেতুর টোল প্লাজায় দুর্ভোগ

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে শীতলক্ষ্যা নদীর ওপর নির্মিত কাঞ্চন সেতু। ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে এই সেতুর টোল আদায়ের কারণে ২৪ ঘণ্টাই থাকে যানজট। টোল প্লাজার উভয় পাশে ৮-১০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই যানজটে আটকে দুর্ভোগ পোহাতে হয় চলাচলকারীদের। সবচেয়ে দুর্ভোগে পড়তে হয় অ্যাম্বুলেন্স, স্কুলগামী পরিবহন ও জরুরি কাজে বের হওয়া লোকজনের। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডিজিটাল যুগে টোল আদায় হচ্ছে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে। এই পদ্ধতিতে টাকা ওঠানোর কারণে স্থানীয় প্রভাবশালী চক্রের মধ্যে টোলের ২৫ শতাংশ টাকা ভাগবাটোয়ারা হয়। শীতলক্ষ্যা নদীর কাঞ্চন সেতুর কাছাকাছি রয়েছে আরও তিনটি সেতু। ওইগুলো থেকে টোল আদায় করা হয় না। এই টোল আদায় বন্ধ করতে স্থানীয় লোকজন সরকারের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে। হয়েছে মানববন্ধনও।

কাঞ্চন সেতু উদ্বোধনের সময় ১০ বছর পর্যন্ত টোল আদায় করার কথা বলা হয়েছিল বলে সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের (সওজ) একটি সূত্র থেকে জানা গেছে। সে অনুযায়ী ২০১৬ সালে টোল আদায়ের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখনো চলছে। এ টোল আদায় করা হচ্ছে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) মাধ্যমে।

পিপিপি প্রজেক্টের কাঞ্চন সেতুর টোল আদায় প্রজেক্ট ম্যানেজার প্রকৌশলী শামীম রহমান আবির বলেন, টোল আদায়ের কারণে যানজট হয় না, যানজট হয় টোল প্লাজার উভয় পাশের সরু রাস্তার কারণে। ঢাকা-বাইপাস এক্সপ্রেসওয়ে সড়কটি নির্মাণ হলে এ যানজট আর থাকবে না।

কাঞ্চন সেতু এলাকার ট্রাফিক ইন্সপেক্টর জুলহাস বলেন, প্রায় সময়ই কাঞ্চন সেতু এলাকা থেকে যানজট সৃষ্টি হয়ে ভয়াবহ আকার ধারণ করে। যা নিয়ন্ত্রণ করতে পুলিশকে হিমশিম খেতে হয়।

নারায়ণগঞ্জ সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহানা ফেরদৌস বলেন, ১০ বছর টোল আদায়ের পর আর টোল আদায় না করার কথা সঠিক নয়। সরকারের সিদ্ধান্তেই টোল আদায় করা হচ্ছে। সরকার নির্ধারিত টোলের বাইরে বাড়তি টোল নেওয়ার সুযোগ নেই। সুতরাং কাউকে চাঁদা দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। কাঞ্চন সেতুর টোল আদায় পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) প্রকল্পের আওতায় তাদের লোকবল দিয়ে আদায় করে তা শতভাগ রাজস্ব খাতে জমা হচ্ছে। ২০২৫ সালে হাইওয়ে রাস্তার কাজ শেষ হলে এখানে টোল আদায় থাকবে না। তবে ঢাকা বাইপাস রোডের টোল আদায় হবে।

জানা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জের মদনপুর থেকে গাজীপুর জেলার জয়দেবপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত ঢাকা-বাইপাস সড়ক নামে ৪৮ কিলোমিটার রাস্তাকে কাঞ্চন সেতুর মাধ্যমে যুক্ত করা হয়। চট্টগ্রাম বন্দর ও সিলেটের সঙ্গে দেশের উত্তরাঞ্চলের সরাসরি সংযোগ স্থাপনের জন্য সেতুটি নির্মাণ করা হয়। ২০০৬ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া সেতুটি উদ্বোধন করেন।

শীতলক্ষ্যা নদীর ওপর রাজধানী ঢাকায় প্রবেশের জন্য চারটি সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। সেগুলো হলো- মুড়াপাড়া এলাকায় বীরপ্রতীক গাজী সেতু, তারাবো এলাকায় সুলতানা কামাল সেতু, কাঞ্চন এলাকায় কাঞ্চন সেতু ও কাঁচপুর এলাকায় কাঁচপুর সেতু। এসব সেতুর মধ্যে শুধু কাঞ্চন সেতুতেই মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও টোল আদায় করা হচ্ছে। টোলের নির্ধারিত সময়সীমা পার হলেও বন্ধ হয়নি টোল আদায়। এই টোল প্লাজায় রয়েছে ৫টি বুথ। প্রতিদিন বড় ট্রেইলর থেকে ৩২৫ টাকা, ট্রাক থেকে ১৩০ টাকা, বাস থেকে ১২৫ টাকা হারে ১১টি ক্যাটাগরির পরিবহন থেকে টোল আদায় করা হয়। এ সেতুর টোল প্লাজা থেকে প্রতিদিন পরিবহনগুলো থেকে কমপক্ষে ১২ থেকে ১৩ লাখ টাকার টোল আদায় হচ্ছে।

অভিযোগ রয়েছে, অনিয়ম, দুর্নীতি আর স্থানীয় সরকারদলীয় ব্যক্তিদের চাঁদা দিয়ে অব্যাহত রাখা হয়েছে টোল আদায়। এ ব্যাপারে নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক রাজনৈতিক নেতা জানান, সেতু থেকে স্থানীয় ৭-১০ জন নেতা মাসিক হারে টাকা পেয়ে থাকেন। এ ছাড়া সেতু ও সেতুসংলগ্ন রাস্তাঘাট মেরামতে নেই যথাযথ উদ্যোগ। জানা গেছে, উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে সহজ যোগাযোগব্যবস্থার কারণে কাঞ্চন সেতু উদ্বোধনের সময় থেকে বর্তমানে এ রুটে যান চলাচল বৃদ্ধি পেয়েছে ৩০ গুণ। দিনে অন্তত ১৬ থেকে ১৭ হাজার যানবাহন এ রুটে চলাচল করে। এর মধ্যে ট্রাক, বড় ট্রেইলর, কাভার্ড ভ্যানের সংখ্যা বেশি। ব্যস্তবহুল ঢাকা-বাইপাস রুটে যানবাহনের বাড়তি চাপ আর টোল আদায়ে ধীরগতির কারণে সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজটের। ভোগান্তিতে পড়ছেন পণ্যবাহী পরিবহনের চালকসহ যাত্রী সাধারণ।

টোল প্লাজায় কথা হয় পণ্যবাহী ট্রাকচালক ইসমাইল হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, টোল প্লাজা থেকে বের হতে ২-৩ ঘণ্টা লেগে যায়। মাঝেমধ্যে আরও বেশি। এই চালক বলেন, এই টোল প্লাজায় হাতে টাকা নেওয়া হয়। একটি ট্রাক থেকে টোল আদায়ে কমপক্ষে এক মিনিট লাগে। ভাঙতি না থাকলে আরও বেশি লাগে। রূপগঞ্জের ভুলতা এলাকার সাইফুল ইসলাম বলেন, তার মেয়েকে নিয়ে কাঞ্চন সেতু পার হয়ে স্কুলে যেতে হয়। টোল প্লাজার জ্যামের কারণে ২-৩ ঘণ্টা সময় নষ্ট হয়।

স্থানীয় বাসিন্দাদের দুর্ভোগ আরও বেশি। টোল প্লাজার দীর্ঘ যানজটের কারণে এলাকার মানুষ রাস্তা পারাপার হতে পারে না। এলাকার মানুষ মায়ারবাড়ি নামক স্থান থেকে কাঞ্চন বাজারের রাস্তা রীতিমতো ঝুঁকি নিয়ে পার হন। স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রী, নারী ও বয়োজ্যেষ্ঠরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হন। এই স্থানে প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো দুর্ঘটনা ঘটে।

সর্বশেষ খবর