শুক্রবার, ১০ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা

পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি প্রতিষ্ঠায় শর্ত বাস্তবায়নের তাগিদ

বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ কমিটির সভা

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল ও কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি

পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থায়ী শান্তির জন্য চুক্তির শর্তগুলো বাস্তবায়নে আবারও তাগিদ দিয়েছেন জনসংহতি সমিতির সভাপতি ও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা)। ওই এলাকায় ভূমিসংক্রান্ত অমীমাংসিত বিষয়গুলোও সমাধানের তাগিদ দিয়েছেন তিনি। চুক্তির অমীমাংসিত শর্তগুলো সমাধানে অগ্রগতি হয়েছে বলে দাবি করেছেন পার্বত্য শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ কমিটির আহ্বায়ক আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ এমপি। গতকাল পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় গ্র্যান্ড হোটেলে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ কমিটির সপ্তম বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তারা।

রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি জেলা নিয়ে গঠিত পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল এলাকা। এ এলাকার বেশির ভাগই বনভূমি ও পাহাড়ি। আর এ সুযোগে পাহাড়ি এলাকায় একাধিক বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগঠন গড়ে ওঠে। তাদের কারণে একসময় অশান্ত ছিল পাহাড়। গোলাগুলি-খুন-অপহরণ ছিল নিত্যদিনের ঘটনা। বহু মানুষ প্রাণ হারিয়েছে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হাতে। এ অবস্থায় পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সঙ্গে শান্তিচুক্তি করে। সরকারের পক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ। অন্যদিকে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর পক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন জনসংহতি সমিতির প্রধান সন্তু লারমা। এ চুক্তি স্বাক্ষরের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত ছিলেন। চুক্তির ধারা বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট কমিটির নিয়মিত সভা করার কথা। এরই অংশ হিসেবে কুয়াকাটায় অনুষ্ঠিত হলো পার্বত্য শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ কমিটির সপ্তম সভা। ঢাকার বাইরে এই প্রথম সভা করল এ কমিটি। কমিটির আহ্বায়ক আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর সভাপতিত্বে সভায় কমিটির সদস্য পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সভাপতি ও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা), কমিটির সদস্য ভারত প্রত্যাগত উপজাতীয় শরণার্থী প্রত্যাবর্তন ও পুনর্বাসন এবং অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু নির্দিষ্টকরণ ও পুনর্বাসন সম্পর্কিত টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর ঊশৈসিং এমপি, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ সদস্য গৌতম কুমার চাকমা, খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি দীপংকর তালুকদার এমপি, বাসন্তী চাকমা এমপি, সাবেক মুখ্য সচিব ও রাষ্ট্রদূত আবদুস সোবহান সিকদার, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মুসাম্মৎ হামিদা বেগমসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। সভা শেষে সন্তু লারমা বলেন, চুক্তির যে বিষয়গুলো এখনো বাস্তবায়িত হয়নি সেগুলো বাস্তবায়নে সৌহার্দ্যপূর্ণ আলোচনা হয়েছে। সরকার দ্রুততম সময়ের মধ্যে চুক্তির অমীমাংসিত বিষয়গুলো সমাধান করবে বলে আশা করেন তিনি। পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তিচুক্তির পর অবস্থার অনেক উন্নতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন পার্বত্য এলাকার সংসদ সদস্যরা। ভূমিসংক্রান্ত বিষয়টি এখনো সমাধান না হওয়ায় এ সমস্যা সমাধানে সভায় তাগিদ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও পার্বত্য এলাকার সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদার। শান্তিচুক্তির পরও পাহাড়ে কেন খুন-অপহরণ-গোলাগুলি ঘটছে- জানতে চাইলে পার্বত্যবিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর ঊশৈসিং এমপি বলেন, ওগুলো সব জায়গায়ই হয়।

 তিনি বলেন, কোনো ঘটনা ঘটলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিচ্ছে। পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য নিয়মিত বৈঠক হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা হবে বলে তিনি জানান। চুক্তির অমীমাংসিত শর্তগুলো সমাধানে গতকালের বৈঠকে আলোচনায় অগ্রগতি হয়েছে বলে দাবি করেছেন পার্বত্য শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ কমিটির আহ্বায়ক (মন্ত্রী মর্যদা) আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ এমপি। চুক্তি নিয়ে আশাবাদী তিনিও। সংশ্লিষ্টরা জানান, চুক্তিতে ৭২টি শর্ত রয়েছে। এর মধ্যে কিছু শর্ত বাস্তবায়িত হয়েছে। কিছু শর্ত এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। এ কারণে প্রায়ই রক্তাক্ত হয়ে ওঠে পার্বত্য চট্টগ্রাম। এ সমস্যার সমাধানে পার্বত্য শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ কমিটির নিয়মিত বৈঠকের অংশ হিসেবে কুয়াকাটার একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত হলো সপ্তম বৈঠক।

সর্বশেষ খবর