শনিবার, ১১ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা

প্রবীণদের সঙ্গে মাঠে নবীন প্রার্থীরা

জাকারিয়া চৌধুরী, হবিগঞ্জ

প্রবীণদের সঙ্গে মাঠে নবীন প্রার্থীরা

জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে হবিগঞ্জের মাঠ-ঘাট চষে বেড়াচ্ছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। এদের মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের দৌড়ঝাঁপ বেশি। জেলার চারটি আসনের মধ্যে বর্তমানে চারটিই আওয়ামী লীগের দখলে রয়েছে।

ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীরা মাঠ-ঘাট চষে বেড়ালেও পিছিয়ে নেই বিএনপিও। নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে দলীয় সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত না হলেও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারসহ বিভিন্ন দাবিতে রাজপথে সক্রিয় রয়েছেন দলীয় নেতা-কর্মীরা। প্রতিটি মিছিল-মিটিংয়ে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ লক্ষ্য করা গেছে তাদের। বড় দুই রাজনৈতিক দলের একাধিক প্রবীণ প্রার্থীর সঙ্গে মাঠে তৎপরতা চালাচ্ছেন নবীনরাও। মাঠে আছে জাতীয় পার্টিও। নিজ নিজ এলাকায় সভা-সমাবেশ করে তারা জানান দিচ্ছেন অস্তিত্বের।

হবিগঞ্জ- (নবীগঞ্জ বাহুবল) : আসনটি আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক প্রয়াত জাতীয় নেতা দেওয়ান ফরিদ গাজীর আমলে আসনটিতে শক্তিশালী অবস্থান গড়ে আওয়ামী লীগ। বর্তমান এমপি গাজী মোহাম্মদ শাহনওয়াজ তারই সন্তান। স্বাধীনতার পর আসনটিতে পাঁচবার আওয়ামী লীগ, দুবার জাতীয় পার্টি, একবার জাসদ জয় পেয়েছে। এ ছাড়া বিএনপিও একবার উপনির্বাচনে জয় লাভ করে। এ আসনে এবারও আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী বর্তমান এমপি গাজী মোহাম্মদ শাহনওয়াজ। এ ছাড়া সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন- হবিগঞ্জ জেলা পরিষদের প্রশাসক ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য ডা. মুশফিক হুসেন চৌধুরী, হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও নবীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আলমগীর চৌধুরী, কমান্ড্যান্ট মানিক চৌধুরীর কন্যা ও সংরক্ষিত আসনের সাবেক এমপি আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী এবং বাহুবল উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল কাদির। বিএনপি থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী রয়েছেন- হবিগঞ্জ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক সাবেক এমপি শেখ সুজাত মিয়া, গণ অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়ার ছেলে ড. রেজা কিবরিয়া।

হবিগঞ্জ- (বানিয়াচং আজমিরীগঞ্জ) : স্বাধীনতার পর ’৮৬ ও ’৮৮-এর নির্বাচনে জাতীয় পার্টি জয় লাভ করলেও ’৯১-এর পর থেকে ২০১৮ পর্যন্ত আসনটি দখলে রেখেছে আওয়ামী লীগ। ভোটের হিসাবে আসনটিতে বরাবরই পিছিয়ে বিএনপি। তবে বিএনপি নেতা-কর্মীদের দাবি, নিরপেক্ষ ভোট হলে এবার পাল্টে যেতে পারে সে হিসাব-নিকাশ। সবশেষ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে আবদুল মজিদ খান এমপি নির্বাচিত হন। আসনটি থেকে এবারও আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী প্রবীণ নেতা আবদুল মজিদ খান। এ ছাড়া সম্ভাব্য প্রার্থী হতে মাঠে প্রচার-প্রচারণা ও কেন্দ্রে লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও জাতীয় পরিষদের সাবেক সদস্য চৌধুরী আবু বকর ছিদ্দিকী, বানিয়াচং উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আমির হুসেন মাস্টার, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক আইনবিষয়ক সম্পাদক ও হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক ময়েজ উদ্দিন শরীফ রুয়েল, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সাদিকুর রহমান চৌধুরী পরাগ, ঢাকা জজ কোর্টের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর মাহফুজা বেগম সাঈদা। বিএনপি থেকে যাদের নাম আলোচনায় রয়েছে তারা হলেন- বিএনপির সিলেট বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবন, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আহমেদ আলী মুকিব। জাতীয় পার্টি থেকে আলোচনায় রয়েছেন, জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় সমবায়বিষয়ক সম্পাদক শংকর পাল, জাতীয় তরুণ পার্টি কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মো. ছাদিকুর মিয়া তালুকদার।

হবিগঞ্জ- (শায়েস্তাগঞ্জ লাখাই) : এ আসনের বর্তমান এমপি হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মো. আবু জাহির। ২০০১ সাল থেকে চারবার এ আসনে জয়ী হয়েছে নৌকা। এর মধ্যে উপনির্বাচনে বিএনপি জয় পেলেও নানা করণে টানা ২৩ বছর কোণঠাসা দলটি। যদিও এরই মধ্যে হবিগঞ্জ পৌরসভার সাবেক পদত্যাগকারী মেয়র আলহাজ জি কে গউছ গড়ে তুলেছেন ব্যাপক জনপ্রিয়তা। বর্তমান এমপি মো. আবু জাহির ছাড়াও নৌকার মনোনয়ন চাইতে পারেন হবিগঞ্জ সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মোতাচ্ছিরুল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পিপি আবুল হাশেম মোল্লা মাসুম ও লাখাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মাহফুজ আহমেদ। বিএনপি থেকে আলহাজ জি কে গউছ ছাড়াও মনোনয়নপ্রত্যাশী হবিগঞ্জ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হক সেলিম ও ডা. আহমদুর রহমান আবদাল। জাতীয় পার্টি থেকে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন দলীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য মো. আতিকুর রহমান আতিক ও জাতীয় যুবসংহতি কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আবু নাঈম মোল্লা মো. শিবলী খায়ের। গণ অধিকার পরিষদ থেকে হবিগঞ্জ জেলা আহ্বায়ক চৌধুরী আশরাফুল বারী নোমান মনোনয়নপ্রত্যাশী।

হবিগঞ্জ- (মাধবপুর চুনারুঘাট) : চা-বাগানবেষ্টিত আসনটি দীর্ঘদিন ধরেই রয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের দখলে। বর্তমানে এ আসনের এমপি বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী। তিনি ছাড়াও সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে যাদের নাম আলোচনায় রয়েছে তারা হলেন- সাবেক প্রয়াত সমাজকল্যাণমন্ত্রী এনামুল হক মোস্তফা শহীদের ছেলে নিজামুল হক রানা, হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন চৌধুরী অসীম, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি আবদুল হাইর ছেলে আরিফুল হাই রাজীব ও মাধবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহ মুসলিম। বিএনপি থেকে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন- মাধবপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি এবং উপজেলা চেয়ারম্যান সৈয়দ মো. শাহজাহান ও সাবেক এমপি শাম্মী আক্তার।

সর্বশেষ খবর