শনিবার, ২৫ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা

কৌশলী প্রচারণায় মনোনয়নপ্রত্যাশীরা

নাসিম উদ্দীন নাসিম, নাটোর

কৌশলী প্রচারণায় মনোনয়নপ্রত্যাশীরা

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নাটোরের চারটি সংসদীয় আসনের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা নানা কৌশলে নির্বাচনী প্রচারণায় মাঠে নেমে পড়েছেন। জনগণের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়ের পাশাপাশি নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন তারা।

সরেজমিন দেখা গেছে, জেলার চারটি আসনের গুরুত্বপূর্ণ স্থানের মোড়ে মোড়ে প্রার্থীদের ছবি সংবলিত পোস্টার-ব্যানার ঝুলছে। সম্ভাব্য প্রার্থীরা যোগ দিচ্ছেন সভা-সমাবেশে। কেন্দ্রের সঙ্গেও যোগাযোগ বাড়িয়েছেন অনেকে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারণা তো আছেই। এ ছাড়া কুলখানি, বিয়ে, ওয়াজ মাহফিল এবং পূজার মতো বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের মাধ্যমেও ভোটারদের সঙ্গে চলছে কৌশলী গণসংযোগ। বিএনপি বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রাখায় এখনই নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিতে চায় না তারা। তবে তারা নির্বাচনে অংশ নিলে কোন আসনে কে প্রার্থী হবেন তা মোটামুটি নিশ্চিত। জাতীয় পার্টির ভোটকেন্দ্রিক কোনো তৎপরতা নেই। ভোটের মাঠে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড অব্যাহত থাকলেও নির্বাচনকেন্দ্রিক তৎপরতা শুরু করেছেন কেবল আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা।

নাটোর- (লালপুর-বাগাতিপাড়া) : আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়নের দৌড়ে এগিয়ে আছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বকুল। এ ছাড়া সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি আবুল কালাম আজাদ, লালপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম আহম্মেদ সাগর, বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগ নেতা কর্নেল (অব.) রমজান আলী সরকার, কামরাঙ্গিরচর থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মো. আনিসুর রহমান, কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আতিকুল হক আতিক, যুবলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সদস্য রওশন আলম সুরুজ, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা কাজল রায় প্রমুখ আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী।

১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে এ আসনের এমপি হন প্রয়াত ফজলুর রহমান পটল। কিন্তু ২০০৮ সালে জাতীয় পার্টির এম এ তালহার কাছে হেরে যান তিনি। এ আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইতে পারেন প্রয়াত ফজলুর রহমান পটলের স্ত্রী উপজেলা বিএনপির সদস্য কামরুন্নাহার শিরিন। বয়স বিবেচনায় তিনি মনোনয়ন না চাইলে ঢাকা মেডিকেল কলেজের সাবেক ভিপি ডা. ইয়াসিন আরশাদ রাজন, নাটোর জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মনজুরুল ইসলাম বিমল, বিএনপির মানবাধিকারবিষয়ক কমিটির সদস্য ফারজানা শারমিন পুতুল, ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি তারিকুল ইসলাম টিটু দলীয় মনোনয়ন চাইতে পারেন। তারা প্রকাশ্যে তৎপরতা না চালালেও কৌশলে কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে দলকে চাঙা রাখছেন।

প্রধান দুই দলের বাইরে এ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় জাতীয় পার্টির ব্যারিস্টার আশিক হোসেন ও অ্যাডভোকেট সোহেল রানা। এ ছাড়া আলোচনায় আছেন ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের মুহাম্মদ খালেকুজ্জামান; ঢাকা মহানগর উত্তরের প্রচার ও দাওয়াত বিষয়ক সম্পাদক মো. গিয়াস উদ্দিন পরশ, ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় সদস্য ও নাটোর জেলা সভাপতি ইব্রাহিম খলিল, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দলের (এনডিএম-সিংহ মার্কা) কেন্দ্রীয় সদস্য মো. মাকসুদুর রহমান এবং জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ও নির্বাহী পরিষদ সদস্য তাসনিম আলম।

নাটোর- (নাটোর সদর- নলডাঙ্গা) : জেলার চারটি আসনের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এ আসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি থেকে কারা মনোনয়ন চাইবেন তা জানতে এখনই উৎসাহের কমতি নেই ভোটারদের। এ আসনে পরপর দুবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল। আবার তিনি প্রার্থী হবেন। তিনি ছাড়াও আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য মনোনয়নপ্রত্যাশীরা হলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও নাটোর সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মো. শরিফুল ইসলাম রমজান, নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের প্রয়াত সভাপতি, সাবেক সংসদ সদস্য শঙ্কর গোবিন্দ চৌধুরীর মেয়ে নাটোর পৌরসভার মেয়র উমা চৌধুরী জলি, নাটোর জজ কোর্টের পিপি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. সিরাজুল ইসলাম, নাটোর জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও জেলা আওয়ামী লীগের প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. হানিফ আলী শেখের ছোট ভাই মালেক শেখ, সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি আহাদ আলী সরকার। বিএনপি থেকে সম্ভাব্য মনোনয়নপ্রত্যাশী হলেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক উপমন্ত্রী রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু এবং তার স্ত্রী জেলা বিএনপির সদস্য সাবিনা ইয়াসমিন ছবি। মামলা থাকায় নবম, দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু। তার স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন ছবি বিএনপির প্রার্থী হয়েছিলেন নবম সংসদ নির্বাচনে। জাতীয় পার্টির প্রার্থী হতে পারেন জেলার সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুন্নবী মৃধা।

নাটোর- (সিংড়া) : ২০০৮ সালের নির্বাচনে জুনাইদ আহমেদ পলক প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি বর্তমানে প্রতিমন্ত্রী ও সংসদ সদস্য। এবারও তিনি দলীয় মনোয়ন চাইবেন। এ ছাড়া এখানে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইতে পারেন সিংড়া পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম শফিক। মহাজোটের অন্যতম শরিক জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন চাইবেন উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি প্রকৌশলী আনিসুর রহমান। ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিজানও দলীয় মনোনয়ন চাইবেন।

এ আসনে বিএনপির প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন প্রায় এক ডজন প্রার্থী। তিনবারের সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক কাজী গোলাম মোর্শেদ বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন। এ ছাড়া উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও দমদমা স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ আনোয়ারুল ইসলাম আনু, উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব দাউদার মাহমুদ, জেলা বিএনপির সাবেক প্রচার সম্পাদক ফরহাদ আলী দেওয়ান শাহীন, জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম দলের কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এম ইউসুফ আলী, উপজেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি ডা. নজরুল ইসলাম এবং বিএনপি নেতা মিজানুর রহমান মিজান দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী।

নাটোর- (গুরুদাসপুর-বড়াইগ্রাম) : এ আসনটি আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত। দীর্ঘদিন ধরেই আসনটি আওয়ামী লীগের কবজায়। এখান থেকে পাঁচবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল কুদ্দুস। আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়ার প্রত্যাশা নিয়ে এরই মধ্যে এলাকায় আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আবদুল কুদ্দুস ছাড়াও তার মেয়ে যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় নেত্রী কুহেলি কুদ্দুস মুক্তি, বড়াইগ্রাম উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডা. সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী, গুরুদাসপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও পৌরসভার মেয়র শাহনেওয়াজ আলী মোল্লা, নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য রতন সাহা, প্রয়াত এমপি রফিক সরকারের ছেলে জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক আহ্বায়ক আরিফ উদ্দিন সরকার, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আহাম্মদ আলী মোল্লা ও কৃষক লীগ নেতা আবদুল ওয়াহাব আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী। এ আসনে সাংগঠনিক শক্তি ও যোগ্য প্রার্থীর অভাবে ভুগছে বিএনপি। বড়াইগ্রাম উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি একরামুল আলম ও সাবেক সংসদ সদস্য মোজাম্মেল হকের মৃত্যু এবং সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সানাউল্লাহ নূর বাবু সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হওয়ার পর উপজেলায় দলটির নেতৃত্বে ধস নামে। এ আসনে বিএনপির কোনো নেতাই এখন পর্যন্ত প্রকাশ্যে সেভাবে জনসংযোগে নামেননি। বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক মন্ত্রী ও নাটোর জেলা সভাপতি এম রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, গুরুদাসপুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবদুল আজিজ, গুরুদাসপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র মশিউর রহমান বাবলু, সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত মোজাম্মেল হকের ছেলে ব্যারিস্টার আবু হেনা মোস্তফা কামাল, সন্ত্রাসী হামলায় নিহত বড়াইগ্রামের উপজেলা চেয়ারম্যান সানাউল্লা নূর বাবুর স্ত্রী মহুয়া নূর কচি, বড়াইগ্রাম পৌরসভার সাবেক মেয়র ইসহাক আলী, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-ধর্মবিষয়ক সম্পাদক জন গোমেজ, বড়াইগ্রাম উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাদের মিয়া দলীয় মনোনয়ন চাইবেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। এ ছাড়া এই আসনে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক এমপি আবুল কাসেম সরকার জনসংযোগ করছেন। নাটোর জেলা জামায়াতের সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন খান, জাসদের জেলা সাধারণ সম্পাদক ডি এম আলম দলীয় মনোনয়ন চাইতে পারেন।

সর্বশেষ খবর