রবিবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

উৎসব আনন্দে বৈশাখ উদযাপন

সাংস্কৃতিক প্রতিবেদক

উৎসব আনন্দে বৈশাখ উদযাপন

রাজধানীতে মঙ্গল শোভাযাত্রায় মানুষের ঢল -জয়ীতা রায়

বাঙালির প্রাণের উৎসব বৈশাখ। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সর্বজনীন এ উৎসবে গোটা জাতি মেতে ওঠে আনন্দ আর উন্মাদনায়। জাতিসত্তার পরিচায়ক হিসেবে বৈশাখ দিয়ে যায় খাঁটি বাঙালি হওয়ার প্রেরণা। ফসলি সাল হিসেবে শুরু হওয়া পয়লা বৈশাখ সময়ের পরিক্রমায় বাঙালির মননের উৎসবে পরিণত হয়েছে। পান্তা-ইলিশ, মুড়িমুড়কি, খই-বাতাসা, নানা ধরনের মিষ্টান্নসহ মুখরোচক খাবারের পাশাপাশি এমন দিনে পোশাকেও নিজস্বতা তুলে ধরে বাঙালি। লাল-সাদার বৈশাখের রঙে তরুণীর আটপৌরে শাড়ির সঙ্গে কপালে লাল টিপ আর তরুণদের লাল-সাদা পাঞ্জাবির সঙ্গে লোকজ মোটিভগুলো বৈশাখকে চেতনার পাশাপাশি শরীরেও তুলে ধরে। শুক্রবার ছিল বঙ্গাব্দ ১৪৩০-এর প্রথম দিন পয়লা বৈশাখ। নাচ, গান, আবৃত্তি, নাটক, চিত্র প্রদর্শনী, মঙ্গল শোভাযাত্রা, হালখাতা, বৈশাখী গ্রামীণ মেলা, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের পানি খেলা, ফুলবিজু, পাজনসহ নানা বর্ণাঢ্য আয়োজনে পয়লা বৈশাখ উদযাপন করেছে গোটা জাতি।

ছায়ানট : বরাবরের মতো ছায়ানটের আয়োজনে রমনার বটমূলে পালিত হলো পয়লা বৈশাখের প্রভাতি আয়োজন। সকাল সোয়া ৬টায় গৌতম সরকারের আহির ভৈরব পরিবেশনের মধ্য দিয়ে আয়োজনের সূচনা ঘটে। এরপর ধ্বনিল আহ্বান মধুর গম্ভীর, জাতের নামে বজ্জাতি সব, আমাদের নানান মতে গানগুলো পরিবেশন করে ছায়ানটের বড়দের দল। সংকোচের বিহ্বলতা নিজেরে অপমান মৃদুল মন্দে মঞ্জুল ছন্দে গানগুলো পরিবেশন করে ছায়ানটের ছোটদের দল। ‘গহন যামিনী শেষে’ গানটি একক কণ্ঠে পরিবেশন করেন সেঁজুতি বড়ুয়া। আবৃত্তি করেন সিদ্দিকুর রহমান পারভেজ।

চারুকলার মঙ্গল শোভাযাত্রা : ‘বরিষ ধরা মাঝে শান্তির বারি’ স্লোগানে মঙ্গল শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে পয়লা বৈশাখ উদযাপন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ। সকাল ৯টায় চারুকলা থেকে বের হয়ে শাহবাগ মোড় হয়ে পুনরায় চারুকলা অনুষদে গিয়ে শেষ হয় শোভাযাত্রাটি। তবে রমজান মাস হওয়ায় এবারের পয়লা বৈশাখের সকালে পান্তা-ইলিশের আয়োজন হয়নি। মায়ের কোলে শিশু ও নীল গাই ছিল এবারের শোভাযাত্রার অন্যতম মোটিফ। আরও ছিল বাঘ, ময়ূর, ভেড়া ও হাতি। মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশ নেন বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সদস্যসহ সর্বস্তরের মানুষ। শোভাযাত্রায় অংশ নিতে আসা নারীর অনেকের পরনে শাড়ি আর মাথায় নানা রঙের ফুলের সমন্বিত টায়রা। পুরুষের পরনে পাঞ্জাবি। সবারই চোখে-মুখে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়। শোভাযাত্রায় উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নববর্ষ উদযাপন কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক ও উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ প্রমুখ।

শিল্পকলা একাডেমি : সকাল ১০টায় শুরু হয় শিল্পকলা একাডেমির পয়লা বৈশাখের অনুষ্ঠানমালা। অনুষ্ঠানের শুরতেই পরিবেশিত হয় ‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো’ সমবেত সংগীত। এতে নজরুল সংগীত পরিবেশন করেন সুজিত মোস্তফা। রবীন্দ্রসংগীত পরিবেশন করেন লাইসা আহমদ লিসা। বাউল গান পরিবেশন করেন শরীফ সাধু ও জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী পুতুল। ‘দাও ধৈর্য দাও শৌর্য’ এবং ‘সত্য বল সুপথে চল’ দুটি সমবেত সংগীত পরিবেশন করে শিল্পকলা একাডেমির শিশু সংগীত দল। পুথিপাঠ করেন পরিমল মজুমদার। একক লোকসংগীত পরিবেশন করেন সুরবালা রায়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘বৈশাখী’ আবৃত্তি করেন জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়। এ ছাড়া ছিল রূপা চক্রবর্তীর আবৃত্তি। পূজা ও পলাশের কণ্ঠে পরিবেশিত হয় ভাওয়াইয়া এবং বিউটি ও সন্দিপনের কণ্ঠে বাউল গান।

 আরও সংগীত পরিবেশন করেন একাডেমির প্রতিশ্রুতিশীল শিল্পী সোহানুর রহমান সোহান, রাফি তালুকদার, সরদার হীরক রাজা, রোকসানা আক্তার রূপসা, আবিদা রহমান সেতু ও সানজিদা মীম। এ ছাড়া বাংলা নববর্ষ উদযাপনে শিল্পকলা একাডেমিতে আলপনা ও পটচিত্রের পাঁচ দিনব্যাপী প্রদর্শনী। ১৮ এপ্রিল ৫ বৈশাখে শেষ হবে এ প্রদর্শনী।

ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠী : সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শিশু পার্কের নারিকেলবীথি চত্বরে ‘নব আনন্দে জাগো’ স্লোগানে বৈশাখ উদযাপন করেছে ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠী’। সকাল সাড়ে ৭টায় বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা সংগঠনের সভাপতি সুরাইয়া আলমগীর, সহসভাপতি শিল্পী ফকির সিরাজ ও সাধারণ সম্পাদক শিল্পী সমর বড়ুয়াকে নিয়ে বেলুন উড়িয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন। পরে ঋষিজের শিল্পীরা সমবেত কণ্ঠে পরিবেশন করেন ‘এসো হে বৈশাখ’, ‘তোরা সব জয়ধ্বনি কর’, ‘নোঙর ছাড়িয়া নায়ের দে রে মাঝি ভাই’সহ বিভিন্ন গান। একক কণ্ঠে গান পরিবেশন করেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী রফিকুল আলম, আবু বকর সিদ্দিক, ফকির শাহাবুদ্দিন, অণিমা মুক্তি গমেজ, বিমানচন্দ্র বিশ্বাস, ফকির সিরাজ প্রমুখ।

খেলাঘর : শিশু-কিশোরদের নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বোপার্জিত স্বাধীনতা ভাস্কর্যের পাদদেশে পয়লা বৈশাখ উদযাপনের আয়োজন করে খেলাঘর ঢাকা মহানগরী। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাবি উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শহীদুল্লা, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরো সদস্য কামরুল হাসান ও বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল ইসলাম গোলাপ।

বাংলা একাডেমি : নববর্ষ বক্তৃতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বঙ্গাব্দ ১৪৩০ উদযাপন করেছে বাংলা একাডেমি। অনুষ্ঠানে ‘বাংলা বর্ষবরণে বৈশাখী মেলা শীর্ষক নববর্ষ বক্তৃতা ১৪৩০’ প্রদান করেন নর্থ বেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, রাজশাহীর উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মুহম্মদ আবদুল জলিল। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি সচিব মো. আবুল মনসুর। আলোচনায় অংশ নেন কবি আসাদুল্লাহ। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন। স্বাগত বক্তব্য দেন একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘রবিরশ্মি’র শিল্পীদের জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়েই অনুষ্ঠানের সূচনা ঘটে। এরপর বর্ষবরণের রবীন্দ্রসংগীত ও নজরুলগীতির মধ্য দিয়ে শুরু হয় মূল আয়োজন। এতে কবিতা আবৃত্তি করেন বাচিকশিল্পী এবং বাংলা একাডেমির পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) ড. শাহাদাৎ হোসেন নিপু।

শিল্পী মানিক রহমানের পরিচালনায় বাংলা একাডেমির শিল্পীদের অংশগ্রহণে বর্ষবরণের সমকালীন সংগীত পরিবেশনার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শেষ হয়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর