বুধবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা
সিটিতে ভোটের হিসাবনিকাশ

বরিশালে দ্বিধাদ্বন্দ্বে সাদিক সমর্থকরা

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল

বরিশালে দ্বিধাদ্বন্দ্বে সাদিক সমর্থকরা

বরিশাল সিটি করপোরেশন (বিসিসি) নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত বিদায়ী মেয়র সাদিক আবদুল্লাহর অন্তর্ধান নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। প্রায় এক মাস বরিশালে তাঁর অনুপস্থিতিতে মনোবলে চিড় ধরেছে তৃণমূল আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের। ঢাকায় অবস্থানরত মেয়র সাদিক একবার ক্ষণিকের জন্য ভিডিও কনফারেন্সে নেতা-কর্মীদের নৌকা বিজয়ী করতে নির্দেশনা দিলেও মহানগর কিংবা ৩০টি ওয়ার্ডের উল্লেখযোগ্য কোনো নেতার নির্বাচনী তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না, যা চলমান সিটি নির্বাচনে নৌকার জন্য নেতিবাচক হতে পারে বলে আশঙ্কা বিশ্লেষকদের। তবে মহানগর আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর আসল নির্বাচনী লড়াই শুরু হয়। এর আগে বর্ধিত সভা ডেকে নেতা-কর্মীদের প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেবে মহানগর আওয়ামী লীগ। ভারতের আজমির শরিফ জিয়ারতের উদ্দেশ্যে পয়লা এপ্রিল বরিশাল ত্যাগ করেন সিটি মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সাদিক আবদুল্লাহ। ৩ এপ্রিল বরিশালসহ দেশের পাঁচ সিটি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। ৮ এপ্রিল ভারত গমন করেন সাদিক। ৯ এপ্রিল আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র বিতরণ শুরু হলেও তার পক্ষে ১০ এপ্রিল ফরম সংগ্রহ করেন মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগ নেতারা। ১১ এপ্রিল দেশে ফেরেন সাদিক আবদুল্লাহ। ১২ এপ্রিল আওয়ামী লীগের ধানমন্ডি কার্যালয়ে দলীয় মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন সাদিকের পক্ষে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা মনোনয়নপত্র জমা দিলেও অনুপস্থিত ছিলেন সাদিক। ১৫ এপ্রিল আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সিদ্ধান্ত নিয়ে বীরের বেশে বরিশাল ফিরবেন বলে আশা ছিল তাঁর অনুসারীদের। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা তাঁর ফুফাতো ভাই আবুল খায়ের খোকন সেরনিয়াবাতকে বরিশাল সিটিতে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ায় সব পরিকল্পনা ভেস্তে যায় সাদিকের। মনোনয়নবঞ্চিত হওয়ার তিন দিন পর ১৮ এপ্রিল ঢাকা থেকে এক ভিডিও কনফারেন্সে মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন সাধারণ সম্পাদক ও মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ। ওই দিন তিনি মেয়র প্রার্থীকে চাচা পরিচয় দিয়ে তাঁর বিজয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার নির্দেশনা দেন। এরপর প্রায় ১০ দিন হতে চললেও মহানগর আওয়ামী লীগ কিংবা ৩০টি ওয়ার্ডের কোথাও দায়িত্বশীল নেতা-কর্মীদের নির্বাচনী কার্যক্রমে সরব দেখা যাচ্ছে না। সাদিকের অনুপস্থিতিতে নতুন মেয়র প্রার্থীর পক্ষে নেমে কাজ করতে দ্বিধাদ্বন্দ্ব রয়েছে বলে জানিয়েছেন ওয়ার্ড পর্যায়ের একাধিক আওয়ামী লীগ নেতা। তাঁরা মেয়র সাদিককে বরিশালে এসে অবস্থান স্পষ্ট করার দাবি জানান। মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এ কে এম জাহাঙ্গীর বলেন, ‘ভাই (জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি) আসবেন, মেয়র সাহেব আসবেন। কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে বর্ধিত সভা হবে। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নৌকার পক্ষে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে। এখানে নৌকার প্রার্থী হারলে আমাদের (হাসানাত পরিবার) দোষ হবে, আর জিতলে তারা (প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক এমপি গ্রুপ) ক্রেডিট নেবে, সেটা আমরা বুঝি। তাই নৌকার প্রশ্নে কোনো ছাড় নয়।’ বর্ধিত সভার দিনক্ষণ চূড়ান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন মহানগর আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক হেমায়েত উদ্দিন সুমন সেরনিয়াবাত।

মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ কোথায় কীভাবে সময় কাটাচ্ছেন জানতে চাইলে তাঁর ব্যক্তিগত একান্ত সহকারী ও মহানগর আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক জিয়াউর রহমান জিয়া বলেন, ‘মেয়র ঢাকায় তাঁর বাবার বাসায় বাবা, দুই ভাই ও বোনের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছেন। লোকজনকে সাক্ষাৎ দিচ্ছেন। তিনি কবে বরিশাল ফিরবেন এমন তথ্য জানা নেই।’ মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সাদিক আবদুল্লাহর অন্তর্ধানের বিষয়ে সচেতন নাগরিক কমিটি-সনাকের সাবেক সভাপতি প্রফেসর শাহ সাজেদা বলেন, মনোনয়নবঞ্চিত হওয়ায় লোকলজ্জায় মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ নিজেকে লুকিয়ে রাখছেন। মেয়র মনোনয়ন না পেলেও তিনি মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মানজনক পদে আছেন। তাঁর উচিত ছিল মনোনয়ন ঘোষণার পর বরিশাল এসে নেতা-কর্মীদের নিয়ে নৌকার পক্ষে নেমে পড়া। তিনি সক্রিয়ভাবে মাঠে নামলে তৃণমূল আওয়ামী লীগ নৌকার বিজয়ে আন্তরিকভাবে কাজ করবে বলে মন্তব্য শিক্ষাবিদ রাজনৈতিক বিশ্লেষক প্রফেসর শাহ সাজেদার।

সর্বশেষ খবর