রবিবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

শাহাদাত হত্যার রহস্য উদঘাটন

নিজস্ব প্রতিবেদক

ওরা যাত্রীবেশে ইজিবাইকে ওঠে। সুযোগ বুঝে চালককে মারধর করে ইজিবাইক নিয়ে চম্পট দেয়। ছিনতাইয়ের জন্য প্রয়োজন হলে তারা চালককে হত্যা করতেও দ্বিধা করে না। ২৩ এপ্রিল কদমতলী এলাকার ইজিবাইক চালক শাহাদাত হাওলাদারকে (৩০) হত্যা করা হয়। এ হত্যার ক্লু উদঘাটন করতে গিয়ে এমন একটি চক্রের সন্ধান পেয়েছে র‌্যাব-১০ এর একটি দল। গ্রেফতার করা হয়েছে এ চক্রের প্রধানসহ সাতজনকে। তারা হলেন- মো. জুয়েল বেপারী (২৭), মো. সাজ্জাদ শেখ (২৩), মো. ইসমাইল হোসেন (২৩), মো. লিমন মাতুব্বর (২১), মো. সোহাগ (২০), রোমান শিকদার (১৮) ও মো. জাকির (৪০)। র‌্যাব বলছে, তথ্য ও প্রযুক্তির সহায়তায় শুক্রবার থেকে শনিবার ভোর পর্যন্ত ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার জুয়েল, লিমন ও ইসমাইলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় হত্যাচেষ্টা, চুরিসহ একাধিক মামলা রয়েছে। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে গতকাল সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি সাংবাদিকদের জানান র‌্যাব-১০ এর অধিনায়ক (সিও) অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন। গ্রেফতারকৃতদের দেওয়া প্রাথমিক তথ্যের বরাত দিয়ে র‌্যাব-১০ অধিনায়ক বলেন, মূলত ইজিবাইক ছিনতাইয়ের পরিকল্পনায় তারা ঘুরতে বের হতেন। মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান এলাকায় রেলওয়ে ব্রিজের ওপরে প্রথমে চালক শাহাদাতকে মারধর করলে তিনি অচেতন হয়ে যান। তখন জুয়েলসহ বাকিরা ভুক্তভোগীকে ধাক্কা দিয়ে ব্রিজ থেকে নিচে ফেলে দেন। এরপর ইজিবাইকটি নিয়ে তারা পালিয়ে যান। পরে ইজিবাইকটি সিরাজদিখান এলাকার মো. জাকির হোসেনের কাছে বিক্রি করেন হত্যাকারীরা। ছিনতাই হওয়া ওই ইজিবাইকসহ আরও পাঁচটি ইজিবাইক সিরাজদিখানে জাকিরের গ্যারেজ থেকে উদ্ধার করা হয়। তিনি বলেন, ইজিবাইক চালক শাহাদাত হাওলাদার রাজধানীর কদমতলীর মদিনাবাগ এলাকার বাসিন্দা। তিনি দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের চুনকুটিয়া এলাকার একটি গ্যারেজ থেকে ভাড়া করা ইজিবাইক চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। প্রতিদিনের মতো ঈদের পরদিন বিকাল ৪টার দিকে ওই গ্যারেজ থেকে ইজিবাইক নিয়ে বের হন। ওইদিন রাতে শাহাদাত আর বাসায় ফেরেননি। পরদিন মুন্সীগঞ্জ জেলার সিরাজদিখান কুচিয়ামোড়া রেলওয়ে ওভারব্রিজের নিচ থেকে তার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। ঘটনার পর নিহতের ভাই শহিদুল ইসলাম জসিম সিরাজদিখান থানায় হত্যা মামলা করেন।

যেভাবে হত্যা : আসামিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে র‌্যাব-১০ অধিনায়ক বলেন, ২২ এপ্রিল ঈদের দিন মাওয়ায় ঘুরতে যাওয়ার কথা বলে ৩২০ টাকা ঘণ্টা চুক্তিতে ইজিবাইকটি ভাড়া করেন জুয়েল, সাজ্জাদ, লিমন, রোমান, ইসমাইল ও সোহাগ। ঘুরতে ঘুরতে তারা ইজিবাইকটি ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করেন।

কিন্তু সেদিন তাদের পরিকল্পনা কার্যকর হয়নি। তাই ঈদের পরদিন তারা ১ হাজার ৯০০ টাকায় ওই ইজিবাইকটিই ভাড়া করেন।

২৩ এপ্রিল বিকাল ৫টার দিকে পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা ভুক্তভোগী শাহাদাতকে মোবাইল ফোনে কদমতলী লাবণী রেস্টুরেন্টের সামনে ডেকে নেন। সেখানে জুয়েল, সাজ্জাদ ও লিমন ইজিবাইকে ওঠেন। কিছুক্ষণ পর ইসমাইলকে ফোন দিয়ে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার কালীগঞ্জ খালপাড়ে অবস্থান করতে বলেন। সেখান থেকে ইসমাইলকে সঙ্গে নিয়ে তারা মাওয়ার উদ্দেশে রওনা দেন। তারা শ্রীনগরসহ আশপাশ এলাকায় গিয়ে সময় ক্ষেপণ করতে থাকেন। রাত ১১টার দিকে সিরাজদিখান থানার কুচিয়ামোড়া রেলওয়ে ওভারব্রিজের ওপরে ইজিবাইক থামিয়ে গল্প করতে থাকেন। কিছুক্ষণ পর আশপাশে কোনো লোকজন দেখতে না পেয়ে জুয়েল, সাজ্জাদ, ইসমাইল ও লিমন শাহাদাতের মুখ, মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে কিলঘুসি মারতে থাকেন। শাহাদাত চিৎকার করলে জুয়েল মুখ চেপে ধরেন। শাহাদাত অজ্ঞান হয়ে পড়লে দুর্বৃত্তরা ব্রিজ থেকে নিচে ফেলে দিয়ে ইজিবাইকটি নিয়ে পালিয়ে যান।

জিজ্ঞাসাবাদে জাকির জানান, তিনি ইজিবাইকটি আসামিদের কাছ থেকে ২৫ হাজার টাকায় কিনে নেন। ইজিবাইকের রং ও কাঠামো পরিবর্তন করে অন্যত্র বিক্রি করার পরিকল্পনা করেছিলেন।

সর্বশেষ খবর