রবিবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

বিদ্যুতের তারের ফাঁদ মরছে বন্যপ্রাণী

শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি

বিদ্যুতের তারের ফাঁদ মরছে বন্যপ্রাণী

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল হাইল হাওরে মাছ চুরি ঠেকাতে ফিশারিতে বিদ্যুতের তারের ফাঁদ পেতে রাখা হয়েছে। আর এসব ফাঁদে জড়িয়ে মারা যাচ্ছে মানুষ, বন্যপ্রাণী। এ ছাড়া রাতে ফিশারিতে বৈদ্যুতিক বাতি জ্বালিয়ে রাখায় হাওরে কমছে পাখি, বন্যপ্রাণী। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হাইল হাওর একটি পাবলিক প্রপারটি। কোনো পাবলিক জলাভূমিতে বিদ্যুতের তার বা বেড়া দেওয়া যাবে না। এটা আইনসম্মত নয়।

গত ২৫ এপ্রিল হাইল হাওরের বাইক্কা বিলের পাশে মাছ ধরতে গিয়ে একটি ফিশারির বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে সানুয়ার হোসেন নামে এক শিশু মারা গেছে। ওইদিনই স্থানীয় বনকর্মীরা ফিশারির পাড় থেকে অর্ধগলিত বন্যপ্রাণী ও মৃত বন্যপ্রাণীর হাড় উদ্ধার করেন। পরে বন বিভাগ থেকে থানায় মামলা করা হয়। মৌলভীবাজার বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক শ্যামল কুমার মিত্র বলেন, হাওরে বিদ্যুতের তার দিয়ে মৎস্য খামারের চারপাশ ঘিরে রাখা হয়। প্রাণীরা মাছ খেতে গিয়ে ওই তারে স্পৃষ্ট হয়ে মারা যায়।

বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান সীতেশ রঞ্জন দেব বলেন, এক সময় হাইল হাওরে সাদা বাঘ ছিল। ছিল প্রচুর পাখি, মেছো বিড়াল, শিয়াল, উদ, বেজি বা নেউল। এখনো কিছু পাখি, মেছো বিড়াল, শিয়াল বেজি রয়েছে। তবে যেভাবে হাওরে তা ধ্বংস করা হচ্ছে এই প্রাণীগুলোও আর বেশিদিন টিকে থাকবে বলে মনে হয় না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এসব বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। সরেজমিনে হাইল হাওরে দেখা যায়, হাওরের প্লাবন ভূমিতে গড়ে তোলা হয়েছে মৎস্য খামার। এসব ফিশারির পাড়ে ঘর বানিয়ে নেওয়া হয়েছে বিদ্যুৎ সংযোগ। এই সংযোগ থেকে বাঁশের খুঁটিতে বেঁধে এলোপাতাড়ি তার টেনে ফিশারিতে বৈদ্যুতিক বাল্ব লাগানো হয়েছে। একেকটি ফিশারিতে রয়েছে ৫০ থেকে ১০০টি বাল্ব। এ ছাড়া মাছ চুরি ঠেকাতে ফিশারির পাড়ে ফেলে রাখা হয়েছে বিদ্যুতের তার। পানিতে অক্সিজেনের পরিমাণ বাড়াতে তার টেনে ফিশারির জলাশয়ের মধ্যখানে বসানো হয়েছে ফোটিং ফাউনটেন্স। হাইল হাওরের বড় গাঙ্গীনা সম্পদ ব্যবস্থাপনা কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিন্নত আলী জানান, হাইল হাওরে প্রায় ২০০ ফিশারি রয়েছে। এর ২৫ থেকে ৩০টিতে বিদ্যুৎ সংযোগ রয়েছে। মাছ চুরি ঠেকাতে রাতে এসব ফিশারিতে বাতি জ্বালিয়ে রাখা হয়। বিদ্যুতের আলোয় পাখি কমে যাচ্ছে। প্রতিবেশ ও প্রাণবৈচিত্র্য সংরক্ষণ বিষয়ক গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, এত আলো জ্বালালে পাখিসহ বিভিন্ন প্রাণী হাওর থেকে চলে যাবে। পেঁচা আর বাদুড় রাতের অন্ধকারে বিচরণ করে। আলো তাদের জন্য বিপজ্জনক। হাইল হাওর অনেক পরিযায়ী পাখির সাময়িক আবাসস্থল। তারা এখানে এসে বাসা বাঁধে, প্রজনন করে। মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার প্রকৌশলী সাখাওয়াত হেসেন বলেন, বিদ্যুতের তারে লেগে শিশুর মৃত্যু দুঃখজনক। হাইল হাওরের সব অবৈধ সংযোগ কেটে দেওয়া হবে। আগেও একবার কেটে দেওয়া হয়েছিল। বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, একটি মামলা করা হয়েছে। প্রাণীমৃত্যু রোধে হাওরে নজরদারি বাড়ানো হবে। সেই সঙ্গে জন সচেতনতামূলক কার্যক্রম আরও জোরদার করা হবে।

সর্বশেষ খবর