শিরোনাম
শনিবার, ৬ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

জাল সার্টিফিকেট চক্রে প্রকৌশলী

♦ বিক্রি হতো ৩ লাখ টাকায় ♦ চারজন গ্রেফতার ♦ জড়িত বোর্ড ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তারাও

নিজস্ব প্রতিবেদক

জাল সার্টিফিকেট চক্রে প্রকৌশলী

একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে সার্টিফিকেট পেতে ন্যূনতম খরচ ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি না হয়ে, পড়াশোনা না করেই এমন সার্টিফিকেট মিলত মাত্র ৩ লাখ টাকায়। যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেট দেওয়া হতো, তার ওয়েবসাইটেও সেটি সংযোজন করে দেওয়া হতো। আর এ সার্টিফিকেট তৈরির জন্য রাজধানীর লালবাগ থানার বড়ঘাট মসজিদ এলাকার কাশ্মীরি গলির একটি বাড়িতে দুটি কক্ষে গড়ে তোলা হয় কারখানা। পরে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নেওয়া খালি মার্কশিট ও সনদে ছাপ দেওয়া হতো সার্টিফিকেট প্রার্থীর নামে।

এভাবে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন নামিদামি বিশ্ববিদ্যালয়ের জাল সার্টিফিকেট মার্কশিট, টেস্টিমনিয়াল ও ট্রান্সক্রিপ্ট সরবরাহ চক্রের চার সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি)। তারা হলেন একটি নামি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালক প্রকৌশলী জিয়াউর রহমান, তার স্ত্রী নুরুন্নাহার মিতু, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার ইয়াসিন আলী ও দারুল ইহসান ইউনিভার্সিটির পরিচালক বুলবুল আহমেদ বিপু। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর রামপুরা ও গতকাল ভোরে লালবাগের বড়ঘাট মসজিদ এলাকার কাশ্মীরি গলির একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। ডিবি বলছে, অনেক দিন ধরেই টাকার বিনিময়ে চলমান ও বন্ধ হয়ে যাওয়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েশন এবং পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন, বিভিন্ন বোর্ডের সেকেন্ডারি, হায়ার সেকেন্ডারি সার্টিফিকেট ও মার্কশিট বিক্রি করে আসছিল চক্রটি। এরপর সেগুলো বোর্ড ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মাধ্যমে অনলাইনে অন্তর্ভুক্ত করত। ডিবির লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমান জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রামপুরায় অভিযান চালিয়ে প্রকৌশলী জিয়াউর রহমান এবং তার স্ত্রী নুরুন্নাহার মিতুকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তাদের বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ একাডেমিক সনদ, মার্কশিট, এনভেলপ ও নগদ টাকা উদ্ধার করা হয়। তাদের তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল ভোরে লালবাগের একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার ইয়াসিন আলী ও দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালক বুলবুল আহমেদ বিপুকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় বাসাটিতে জাল সনদ তৈরির যন্ত্রপাতি ও উপকরণ পাওয়া যায়। ডিবি কর্মকর্তারা দেখতে পান, দুই কক্ষবিশিষ্ট বাসাটিতে দামি ল্যাপটপ, ডেস্কটপ, প্রিন্টার, স্ক্যানার ও এমবস মেশিন স্থাপন করা হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সংগ্রহ করা খালি মার্কশিট ও সনদের ছড়াছড়ি। কর্মকর্তারা জানান, চক্রটি দুই ধরনের সনদ সরবরাহ করত। কোনোরকমের ভেরিফিকেশনের প্রয়োজন হবে না এ রকম সার্টিফিকেট, মার্কশিট, টেস্টিমনিয়াল সরবরাহ করত। আবার দেশে বিদেশে অনলাইনে ভেরিফিকেশন করা যাবে এমন সনদও সরবরাহ করত। আর যাচাই-বাছাইয়ে যেন ধরা না পড়ে সেজন্য চক্রটি তাদের দলে ভিড়িয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় ও বোর্ডের বেশ কিছু দায়িত্বশীল ব্যক্তিকে। তারা টাকার বিনিময়ে অনলাইনে জাল সনদের নম্বর সরবরাহ করতেন। ডিসি মশিউর বলেন, চক্রটি মাত্র ১০০ টাকায় একটি সনদ তৈরি করে ৩ লাখ টাকায় বিক্রি করত। দীর্ঘদিন ধরে জাল সনদ বিক্রির কথা তারা স্বীকার করেছেন। তবে চক্রের অন্যতম হোতা প্রকৌশলী জিয়াউর রহমান জাল সনদ বিক্রি করে বিপুল পরিমাণ টাকা আয় করেছেন। এ টাকা দিয়ে বিলাসবহুল জীবনযাপন করেন। খুলেছেন ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান। কিনেছেন বিলাসবহুল ফ্ল্যাট। ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার ইয়াসিন আলী বিভিন্ন ছাপাখানা থেকে সব রকমের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য সংবলিত অতি সূক্ষ্মভাবে জাল সনদের কাগজ ছাপিয়ে আনতেন। তিনি নিজেও বিভিন্ন গ্রাহককে জাল সার্টিফিকেট, মার্কশিট, টেস্টিমনিয়াল ও ট্রান্সক্রিপ্ট দিতেন। মশিউর রহমান বলেন, ইনডিপেনডেন্ট ও নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া প্রায় সবকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, বিভিন্ন কারিগরি ও ডিপ্লোমা বোর্ডের সনদ তারা বানান। আমরা একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালককে গ্রেফতার করেছি। তদন্ত করে অন্যদেরও গ্রেফতার করা হবে।

সর্বশেষ খবর