শনিবার, ৬ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

ইউএনওর ওপর হামলায় ৫০০ আসামি

ফরিদপুর প্রতিনিধি

ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আশিকুর রহমান চৌধুরীর ওপর হামলার ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার রাতে এবং গতকাল সকালে মধুখালী থানায় দুটি মামলা হয়েছে। ইউএনওর গাড়িচালক সুমন শেখ বাদী হয়ে ২৭ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাত ২০০-২৫০ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। অপর মামলাটি দায়ের করা হয় পুলিশের পক্ষ থেকে। মধুখালী থানার এসআই প্রবীর কুমার বাদী হয়ে গতকাল সকালে পুলিশের ওপর হামলা, সরকারি কাজে বাধা প্রদান করা হয়েছে মর্মে মামলাটি করেন। এ মামলায় ২৭ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত ২৫০ জনকে আসামি করা হয়। পুলিশ এ মামলায় এখন পর্যন্ত দুজনকে গ্রেফতার করেছে। মধুখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ইউএনওর ওপর হামলার ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা হয়েছে। এ ঘটনায় দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যারা ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদের গ্রেফতারে পুলিশ বিশেষ অভিযান চালাচ্ছে। পুলিশি অভিযানের মুখে ডুমাইন ইউনিয়নের নিশ্চিন্তপুর গ্রাম এখন নারী-পুরুষশূন্য। পুলিশের গ্রেফতার এড়াতে বৃহস্পতিবার রাতেই নারী-পুরুষরা গ্রাম ছেড়েছে। গতকাল সকালে সরেজমিন নিশ্চিন্তপুর গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, গ্রামের অধিকাংশ বাড়িঘর তালাবদ্ধ। গ্রামে দেখা মেলেনি কোনো পুরুষের। কয়েকজন নারী ও বৃদ্ধের দেখা মিললেও তারা কোনো কথা বলতে রাজি হননি। তাদের মধ্যে আতঙ্ক লক্ষ্য করা গেছে। স্থানীয় কয়েকজন তাদের নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, নিশ্চিন্তপুর গ্রামের খালপাড়ের বেশ কিছু জমি স্থানীয়রা চাষাবাদ করে আসছিল। হঠাৎ করেই গত মাসে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও এসি ল্যান্ড এসে ওই জায়গাগুলো খাস বলে জানান এবং যারা এতদিন ধরে চাষাবাদ করে আসছিল তাদের সেখানে আর চাষাবাদ না করার কথা জানান। এ নিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে ইউএনওর বিরোধ শুরু হয়। ওই স্থানে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর তোলার জন্য প্রস্তুতি নিলে স্থানীয়রা জমিগুলো নিজেদের বলে দাবি করেন। বেশ কয়েকজন তাদের কাগজপত্র দেখান। আবার অনেকেই কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। তবে তারা ওই জমি থেকে সরে যেতে রাজি নন। গত বুধবার আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর তোলার জন্য সেখানে মিস্ত্রিদের থাকার জন্য শেড নির্মাণের জিনিসপত্র নেওয়া হলে রাতে দুর্বৃত্তরা তা খালে ফেলে দেয়। বৃহস্পতিবার সকালে এমন খবর পেয়ে ইউএনও আশিকুর রহমান ঘটনাস্থলে গেলে স্থানীয় নারীদের বাধার মুখে পড়েন তিনি। পরে স্থানীয় নারীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ইউএনও, আনসার সদস্য ও ঠিকাদারের ওপর হামলা চালায়। বর্তমানে ইউএনও আশিকুর রহমান চৌধুরী ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ইমরুল হাসান জানান, বাম চোখের নিচেসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তবে তিনি সম্পূর্ণ শঙ্কামুক্ত। ইউএনওর ওপর হামলা ও গাড়ি ভাঙচুরের বিষয়ে আনসারদের বাড়াবাড়ি ছিল বলে অনেকেই বলেছেন। আনসার সদস্যরা ইউএনওকে ঘিরে ধরা নারীদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ ও গায়ে হাত তোলারও অভিযোগ করেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েক ব্যক্তি জানান, ইউএনওর ওপর হামলার ঘটনার সঙ্গে চেয়ারম্যানের ইন্ধন রয়েছে। আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর তোলার জন্য জমি নির্ধারণের পর থেকেই চেয়ারম্যান শাহ আসাদুজ্জামান স্থানীয়দের পক্ষ নিয়ে তাদের উসকে দিয়েছেন। এ বিষয়ে চেয়ারম্যানের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। চেয়ারম্যান মামলার আসামি হওয়ায় তিনিও পলাতক রয়েছেন এবং তার মোবাইল ফোনটিও বন্ধ। মধুখালীর এসি ল্যান্ড শামীম আরা বলেন, নিশ্চিন্তপুর গ্রামে সরকারি প্রায় ২৫ একর খাসজমি উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে ৭/৮ একর খাল ও বাকিটা সমতল। তিনি বলেন, জমিগুলো উদ্ধারের পর বেশ কিছু ব্যক্তি অভিযোগ করে জানান তাদের কাছে দলিল রয়েছে। আমরা তাদের আড়াই মাস সময় দিয়েছিলাম। কেউ কেউ জমির কাগজপত্র দেখাতে পেরেছেন। ফলে আমরা সেসব জায়গা থেকে সরে এসেছি। তবে বেশির ভাগ ব্যক্তিই তাদের দাবির সপক্ষে কোনো কাগজপত্র-দলিলাদি দেখাতে পারেননি। এদিকে ইউএনওর ওপর হামলার ঘটনায় দোষীদের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করেছে মধুখালী শিক্ষক সমিতি।

 

সর্বশেষ খবর