সোমবার, ৮ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা
সরগরম সিটি নির্বাচনের মাঠ

ঐক্যের আস্থায় খালেক নতুন সমীকরণে মুশফিক

নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা

ঐক্যের আস্থায় খালেক নতুন সমীকরণে মুশফিক

২০১৮ সালের খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী ছিলেন পাঁচজন। ওই প্রার্থীদের মধ্যে বিএনপির নজরুল ইসলাম মঞ্জু ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির মিজানুর রহমান এখনো মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেননি। দলীয় মনোনয়নের ক্ষেত্রে হাতপাখা প্রতীকের  প্রার্থী মুজ্জাম্মিল হককে পরিবর্তন করা হয়েছে।      পুরনো প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামী লীগ মনোনীত বর্তমান মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক এবং স্বতন্ত্র হিসেবে এস এম শফিকুর রহমান মুশফিক এবারের নির্বাচনেও প্রার্থী হয়েছেন। এর মধ্যে মুশফিক গত সিটি নির্বাচনে জাতীয় পার্টির হয়ে অংশ নিলেও এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। জানা যায়, শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ফুরফুরে মেজাজে থাকলেও মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে শক্ত অবস্থান গড়ে তুলছেন নেতা-কর্মীরা। দলীয় মনোনয়নবঞ্চিতরাও দাঁড়িয়েছেন খালেকের পক্ষে। সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দলের ঐক্য ধরে রাখতে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন শীর্ষস্থানীয় নেতারা। ফলে মান-অভিমান ভুলে সবাই এক ছাতার নিচে অবস্থান নিয়েছেন। অন্যদিকে ভোটের মাঠে বিএনপির প্রার্থী না থাকায় নতুন সমীকরণ গড়তে পারেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মুশফিক। প্রচারণায় তিনি নাগরিক ভোগান্তির কথা তুলে ধরে ভুক্তভোগী মানুষ ও বিএনপির কর্মী-সমর্থকদের ভোট টার্গেটে নেমেছেন।

তফসিল অনুযায়ী খুলনা সিটি নির্বাচনের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ১৬ মে, বাছাই ১৮ মে, প্রত্যাহারের শেষ সময় ২৫ মে ও ভোট গ্রহণ ১২ জুন।

জানা যায়, সিটি নির্বাচন নিয়ে কোনো ধরনের ঝুঁকি নিতে রাজি নয় আওয়ামী লীগ। অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস ও বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিরোধিতায় ২০১৩ সালের সিটি নির্বাচনে পরাজয় মাথায় রেখে প্রচারণায় ত্রুটি রাখতে রাজি নন নীতিনির্ধারকরা। এরই মধ্যে ২ মে রাতে মহানগর আওয়ামী লীগের বৈঠকে দলের সহসভাপতি কাজী আমিনুল হককে আহ্বায়ক ও সাধারণ সম্পাদক এম ডি এ বাবুল রানাকে সদস্য সচিব করে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি করা হয়েছে। এ ছাড়া ভোট কেন্দ্রভিত্তিক কমিটি তদারকির জন্য মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ শহিদুল হক মিন্টু ও আশরাফুল ইসলামকে সমন্বয়কারীর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। মহানগর আওয়ামী লীগ নেতারা, থানা, ওয়ার্ড কমিটি ও সহযোগী সংগঠনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে নির্বাচন পরিচালনা কমিটিতে সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে। দফায় দফায় বৈঠকের পর দলের সব স্তরের নেতা-কর্মীরা দলীয় প্রার্থীর পক্ষে মাঠে নেমেছেন। একই সঙ্গে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, পেশাজীবী, ধর্মীয় সংগঠন সিটি মেয়র হিসেবে পুনরায় তালুকদার আবদুল খালেককে নির্বাচনের আহ্বান জানিয়েছে। বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদ খুলনা মহানগর শাখার নেতারা নগর ভবনে মতবিনিময় সভায় বলেন, উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড বাস্তবায়নের পাশাপাশি সব সেবা নগরবাসীর কাছে পৌঁছে দিতে বর্তমান পরিষদ যথাসাধ্য চেষ্টা চালিয়েছে।

এ সময় সিটি মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক বলেন, নগরীর উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিপুল অর্থ বরাদ্দ দিয়েছেন। কিন্তু বৈশ্বিক মহামারি কভিড-১৯ সংক্রমণের কারণে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও যথাসময়ে বিশাল এ কর্মযজ্ঞ সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি। তবে চলমান উন্নয়ন কাজ সমাপ্ত হলে খুলনা একটি আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত স্বাস্থ্যকর নগরীতে পরিণত হবে। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে আসন্ন নির্বাচনে তিনি সবার দোয়া ও সমর্থন কামনা করেন।

অপরদিকে উন্নয়ন সংস্থাগুলোর সমন্বয়হীনতা আর অপরিকল্পিত উন্নয়নে ভোগান্তির কথা তুলে ধরে স্বতন্ত্র প্রার্থী এস এম শফিকুর রহমান মুশফিক বলেন, ‘সমন্বয়হীন ও অপরিকল্পিত উন্নয়নকাজে রাস্তাঘাটে চলাচলের অবস্থা নেই। অপরিকল্পিতভাবে রাস্তা-ড্রেন উঁচু করার ফলে কয়েক হাজার বাড়ি রাস্তার নিচে চলে গেছে। হাজার কোটি টাকা ব্যয় হলেও জলাবদ্ধতার ভোগান্তি রয়েই গেছে। নির্বাচিত হলে শতভাগ নাগরিক সেবা নিশ্চিত করব।’ তার সমর্থকরা বলেন, “খুলনায় বিএনপির ভোট রয়েছে প্রায় পৌনে ২ লাখ। জামায়াত সমর্থকদের ভোট রয়েছে আরও ৭০-৭২ হাজার। এ ছাড়া বিভিন্নভাবে নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত ক্ষুব্ধ ভোটাররা রয়েছেন। সব একসঙ্গে ‘ক্লিক’ করলে ভোটের মাঠে অঘটন ঘটতে পারে।” মুশফিক বলেন, ইসলামী আন্দোলন ও জাতীয় পার্টির নির্দিষ্টসংখ্যক ভোট আছে। বিএনপির সমর্থকদের ভোট তারা পাবেন না। গত নির্বাচনে জাতীয় পার্টির হয়ে নির্বাচন করায় মানুষ তাকে বিশ্বাস করেনি। ফলে এবার জাতীয় পার্টি থেকে পদত্যাগ করে তিনি স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করছেন।

জানা যায়, সর্বশেষ ২০১৮ সালের নির্বাচনে তালুকদার আবদুল খালেক ১ লাখ ৭৪ হাজার ৮৫১ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির নজরুল ইসলাম মঞ্জু পান ১ লাখ ৯ হাজার ২৫১ ভোট। এ ছাড়া ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মুজ্জাম্মিল হক ১৪ হাজার ৩৬৩ ভোট, জাতীয় পার্টির মুশফিক ১ হাজার ৭২ ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির প্রার্থী ৫৩৪ ভোট পান।

সর্বশেষ খবর