সোমবার, ৮ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

অপরিপক্ব লিচু বাজারে

প্রতিদিন ডেস্ক

অপরিপক্ব লিচু বাজারে

দেশের বিভিন্ন বাজারে এখন অপরিপক্ব লিচু উঠতে দেখা গেছে। অধিক মুনাফা লাভের আশায় একশ্রেণির কৃষক খানিকটা আগেভাগেই অপরিপক্ব লিচু বাজারজাত করছে। এতে সুস্বাদু ও রসালো মিষ্টি ফল লিচুর প্রকৃত স্বাদ লাভে দেশবাসী বঞ্চিত হচ্ছে। তবে প্রতিবারের মতো এবারও বৈশাখের শেষ সময়ে সোনারগাঁয়ের লিচু বাজারে এসেছে। মিষ্টি ও সুস্বাদু হিসেবে সোনারগাঁয়ের লিচু সারা দেশে পরিচিত। আগাম বাজারে আসে বলে দেশের বিভিন্ন স্থানের লিচুর তুলনায় এ লিচুর চাহিদা থাকে বেশি। হিলি ও সোনারগাঁ প্রতিনিধির পাঠানো খবর-

হিলি (দিনাজপুর) : সুস্বাদু ও রসালো মিষ্টি ফল লিচু পরিপক্ব হতে আরও কিছুটা সময় বাকি থাকলেও দিনাজপুরের হিলিতে খানিকটা আগেভাগেই বাজারে উঠতে শুরু করেছে এ ফলটি। মৌসুমের নতুন ফল হিসেবে অনেকে কিনলেও দাম বেশি ও মিষ্টি না হওয়ার কারণে অনেকেই কিনছেন না এসব লিচু। এদিকে অপরিপক্ব এসব লিচু না খেতে পরামর্শ দিয়েছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ। গতকাল হিলি বাজারের পুরাতন সোনালী ব্যাংক মোড় ও খাদ্যগুদাম মোড়ে লিচুর পসরা সাজিয়ে বসেছেন দুজন লিচু বিক্রেতা। ১০ মাদ্রাজি জাতের লিচু ৩০০ টাকায় বিক্রি করছেন তারা। ক্রেতা ইসরাইল হোসেন বলেন, কাঁচাবাজার করতে এসে হিলি বাজারে মৌসুমের প্রথম লিচু বিক্রি করতে দেখে কেনার ইচ্ছা হয়েছিল। কিন্তু এই ছোট ছোট লিচুর দাম চাচ্ছে ৩০০ টাকা। এখনো এসব লিচু মিষ্টি হয়নি, খানিকটা অপরিপক্ব লিচু। এসব লিচু খাওয়া ক্ষতিকর, এ চিন্তা থেকে আর লিচু ক্রয় করিনি। হিলি বাজারে লিচু বিক্রি করতে আসা আবু তাহের বলেন, দিনাজপুর অঞ্চলের লিচু এখনো পরিপক্ব হতে ও বাজারে আসতে ১৫ থেকে ২০ দিন সময় লাগবে। তবে ইতোমধ্যেই অতিরিক্ত গরম ও অনাবৃষ্টির কারণে পাঁচবিবি উপজেলার কিছু অঞ্চলের বাগানের লিচুতে রং ধরেছে। যে কারণে বাগান মালিক বাড়তি লাভের আশায় এসব লিচু বিক্রি করছেন। নতুন ফল হিসেবে বাজারে চাহিদা থাকবে- এ ধারণায় আমরাও এসব লিচু কিনে বাজারে বিক্রির আসায় বসেছি। তবে বিক্রি নেই, অনেকে কেনার আগে খেয়ে দেখে মিষ্টি না হওয়ায় না কিনেই ফিরে যাচ্ছেন।

হাকিমপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরজেনা বেগম বলেন, আমাদের উপজেলায় ১৩ হেক্টর জমিতে লিচুর চাষাবাদ করা হয়েছে। এখনো লিচু পুরোপুরি পরিপক্ব হয়নি। পরিপক্ব হতে আরও এক সপ্তাহ সময় লাগবে।

সোনারগঁাঁ (নারায়ণগঞ্জ) : বাজারে এসেছে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের রসালো লিচু। তবে এবার বৃষ্টি না হওয়ায় লিচুর ফলন অন্যবারের তুলনায় কম হয়েছে। অতিরিক্ত খরার কারণে আগেই পেকেছে এ লিচু। সোনারগাঁয়ের বিভিন্ন লিচু বাগান ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি বাগানে গাছে গাছে থোকায় থোকায় কাঁচা-পাকা লিচু ঝুলছে। গাছের ডালে ডালে ঝুলন্ত লাল টকটকে ছোট ফলের গুচ্ছ লিচুর দৃশ্য খুবই মনোরম। প্রতিটি গাছে বৈদ্যুতিক বাতি, টিন বাজিয়ে উচ্চশব্দ করে বাদুর ও কাকের উপদ্রব থেকে লিচু রক্ষায় রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন চাষিরা।

উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১০টি ইউনিয়নের ৭০টি গ্রাম লিচুর জন্য বিখ্যাত। তবে সোনারগাঁ পৌরসভার গোয়ালদী, হরিষপুর, দুলালপুর, পানাম গাবতলী, খাসনগর দিঘিরপাড়, চিলারবাগ, ইছাপাড়া, দত্তপাড়া, হাতকোপা, অজুন্দী, বাগমুছা, গোবিন্দপুর, লাহাপাড়া, বালুয়াদিঘিরপাড় ও বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়নের হাড়িয়া, হামছাদী, দামোদরদী, পঞ্চবটী, মোগরাপাড়া ইউনিয়নের ফুলবাড়িয়া ও গোহাট্টায় সবচেয়ে বেশি লিচুর বাগান রয়েছে। এসব এলাকার প্রতিটি বাড়ির আঙিনায় ও আশপাশের ভিটা বাড়িতে লিচুর চাষ হয়। স্থানীয় চাষিরা জানান, সোনারগাঁয়ে বর্তমানে কদমি, মোজাফফরপুরী, চায়না-৩, এলাচি ও পাতি- এ পাঁচ ধরনের লিচুর চাষ হয়। তবে অন্যান্য লিচু থেকে বর্তমানে কদমি লিচু চাষের প্রতি আগ্রহী চাষিরা। প্রতি বছর একেকটি বাগান ৪ থেকে ৫ লাখ টাকায় বিক্রি হয়। তাই চাষিরা কোথাও একটু খালি জায়গা পেলে সেখানেই কদমি লিচুর বাগান তৈরি করছেন। সোনারগাঁয়ে ছোট-বড় মিলিয়ে পাঁচ শতাধিক লিচুর বাগান রয়েছে। এসব বাগানে বেশির ভাগই কদমি লিচুর চাষ হচ্ছে। শুরুতে ১০০ কদমি লিচু ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা দরে বিক্রি হয়ে থাকে। বোম্বাই লিচু ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা, পাতি লিচু ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা দরে বিক্রি হয়ে থাকে। তবে এ বছর দাম একটু বেশি। লিচু বিক্রেতা আহম্মেদ আলী বলেন, অন্য এলাকার লিচুর চেয়ে সোনারগাঁয়ের লিচু আকারে বড় ও সুস্বাদু হওয়ায় এ লিচুর চাহিদা বেশি। আর সোনারগাঁয়ের লিচু সবার আগে বাজারে আসে তাই এর চাহিদা একটু বেশি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর