মঙ্গলবার, ৯ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বাস্তবায়ন জটিলতায়

♦ হাতিরপুল থেকে পলাশী যানজট আরও বাড়বে ♦ ধ্বংস হবে হাতিরঝিল ও পান্থকুঞ্জ পার্ক

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর যানজট কমাতে নেওয়া হয়েছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প। ২০১৩ সালে এ প্রকল্পটি শুরু হয়। যা কয়েকবার মেয়াদ বাড়িয়ে সবশেষ ২০২৪ সাল পর্যন্ত করা হয়েছে। অপরিকল্পিত নকশা প্রণয়ন, ঢাকার দুই অভিভাবক সংস্থা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সমন্বয়হীনতা প্রকল্পটি বাস্তবায়নে জটিলতা সৃষ্টি করেছে।

এসব জটিলতা নিরসনে গতকাল ঢাকা মহানগরীতে চলমান সড়ক, রেল ও নৌ পরিবহন অবকাঠামো-সংশ্লিষ্ট উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর মধ্যে সমন্বয়ে গঠিত কমিটির প্রথম সভা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম, ঢাকা দক্ষিণের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, সড়ক ও সেতু বিভাগ এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব, রাজউক চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এতে উপস্থিত ছিলেন। এই সভায় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের একাংশের অপরিকল্পিত নকশাসহ নানা অসঙ্গতির প্রসঙ্গ উঠে এসেছে।

সভায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের একটি অংশ ফার্মগেট থেকে হাতিরঝিল হয়ে মগবাজার যাবে। যেখানে হাতিরঝিলে ৪১টি পিলার বসানো হবে। অথচ হাতিরঝিল ঢাকা শহরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একমাত্র হাতিরঝিল ঢাকাকে বাঁচিয়ে রেখেছে। এই ৪১টি পিলার বসানো মানে হাতিরঝিল শেষ! তিনি বলেন, আর একটি অংশ ফার্মগেট থেকে কারওয়ান বাজার পান্থকুঞ্জ পার্ক-হাতিরপুল হয়ে পলাশী যাবে। পান্থকুঞ্জ পার্কে র‌্যাম্পসহ ১২টি পিলার বসবে। তার মানে পান্থকুঞ্জ পার্ক শেষ! এ ছাড়া পান্থকুঞ্জ পার্ক থেকে হাতিরপুল হয়ে যাবে পলাশী। হাতিরপুল একটি বাণিজ্যিক এলাকা। আর সড়কটিও তেমন প্রশস্ত নয়। এই সড়কটির মধ্যখানে পিলার বসালে সড়কটি আরও সরু হবে। তার মানে যানজট আরও বাড়বে। সভায় ঢাকা উত্তরের মেয়রও তার মতামত তুলে ধরেন। এর আগে চলতি বছর ২২ জানুয়ারি ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) সভায় কারওয়ান বাজারের পান্থকুঞ্জ পার্কের ওপর দিয়ে এক্সপ্রেসওয়ের সংযোগ সড়ক (র‌্যাম্প) নির্মাণে আপত্তি জানিয়েছিলেন মেয়র তাপস। কেননা, তেজগাঁও থেকে কুতুবখালী পর্যন্ত অংশের কাজ শুরু হতে প্রধান বাধা দুটি; একটি হাতিরঝিলে পড়া এক্সপ্রেসওয়ের ৪১টি র‌্যাম্প। দ্বিতীয়টি পান্থকুঞ্জ পার্কের ওপর এক্সপ্রেসওয়ের সংযোগ সড়ক (র‌্যাম্প) নির্মাণ।

প্রকল্পে সূত্রে জানা গেছে, এক্সপ্রেসওয়েতে থাকবে ১১টি টোল প্লাজা; এর মধ্যে পাঁচটি হবে এক্সপ্রেসওয়ের ওপরে। প্রকল্পটি নির্মাণের সুবিধার্থে তিনটি ভাগ করা হয়েছে। একটি, এয়ারপোর্ট-বনানী-রেলস্টেশন; অন্যটি বনানী রেলস্টেশন-মগবাজার ও তৃতীয়টি মগবাজার-চিটাগাং রোডের কুতুবখালী পর্যন্ত। এক্সপ্রেসওয়েটি ঢাকার উত্তর-দক্ষিণের মধ্য দ্রুতগতির বিকল্প সড়ক হিসেবে কাজ করবে।

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পে জটিলতা বিষয়টি স্বীকার করেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলামও। তিনি বলেন, যে কোনো প্রকল্প গ্রহণ, পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের আগে সব অংশীদারদের মতামতের সমন্বয় জরুরি। তবে পিপিপি প্রকল্পটি নগরীর যানজট নিরসনেই নেওয়া হচ্ছে। সব অংশীদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সহযোগিতামূলক মতামতের ভিত্তিতে এ পিপিপি প্রকল্পের অসামঞ্জস্যগুলো সংশোধনের মাধ্যমে তা জনবান্ধব ও রাজধানীর যানজট নিরসনে কাক্সিক্ষত ভূমিকা রাখবে বলেও আশা করেন তিনি।

প্রসঙ্গত, রাজধানীর যানজট নিরসনে সরকারের নেওয়া সবচেয়ে বড় প্রকল্প ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। সংযোগ সড়কসহ প্রকল্পটির সর্বমোট দৈর্ঘ্য ৪৬ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। এর ব্যয় প্রথমে ধরা হয় ৮ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা। কিন্তু পরবর্তীতে ভূমি অধিগ্রহণ, নকশা বদল, অর্থ সংস্থানের জটিলতায় প্রকল্পের সময় বৃদ্ধি পায় চারবার। এতে ব্যয়ও বেড়ে দাঁড়ায় ১৩ হাজার ৮৫৮ কোটি টাকা।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর