বৃহস্পতিবার, ১১ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা
কুমিল্লায় যুবলীগ নেতা হত্যা

বোরকা পরে গুলি করেন দেলোয়ার আরিফ ও মনির

কুমিল্লা প্রতিনিধি

কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার গৌরীপুরে যুবলীগ নেতা জামাল হোসেনকে গুলি করে হত্যায় বোরকা পরা তিনজনের পরিচয় মিলেছে। তারা হচ্ছেন দেলোয়ার, আরিফ ও কালা মনির। এরই মধ্যে বোরকা পরা একজনসহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব।

গতকাল র‌্যাব-১১ কুমিল্লার উপপরিচালক মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন জানান, ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। তাদের একজন হলেন, হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া বোরকা পরা মো. দেলোয়ার হোসেন দেলু (৩১)। তিনি দাউদকান্দি থানার চর চারুয়া এলাকার মৃত জাহেদ আলীর ছেলে। তার বিরুদ্ধে দুটি হত্যা মামলাসহ মোট ছয়টি মামলা রয়েছে। আরেকজন হলেন তিতাসের গাজীপুর এলাকা থেকে এই হত্যাকাণ্ডে আসামিদের দেশের ভিতরে ও বাইরে পালানোর পথ তৈরিকারী মো. সাহিদুল ইসলাম ওরফে সাদ্দাম মাস্টার (৩৩)। তিনি তিতাস বড় গাজীপুর এলাকার মো. ফজলুল হকের ছেলে।

র‌্যাব কর্মকর্তা জানান, দেলোয়ার হোসেন স্বীকার করেছেন যে- গত ৩০ এপ্রিল বিকালে দাউদকান্দির জিয়ারকান্দি এলাকার মাছের প্রজেক্টে (প্রজেক্টের মালিক আরিফ ও সুজন) কাজ করার সময় আরিফ (মামলার ২ নম্বর আসামি) তাকে গৌরীপুর পাওয়ার হাউসে নিয়ে যায়। সেখানে একটি কালো মাইক্রোবাস ড্রাইভারসহ, মনির (৯ নম্বর আসামি) ও জিয়ারকান্দির আবু মিয়ার ছেলে শাহ আলী ওরফে আল আমিন অপেক্ষা করছিল। পরবর্তীতে আরিফ দেলোয়ারকে বলে ‘আজ আমরা জামালকে হত্যা করব, জামাল আমার ও তোর অনেক ক্ষতি করেছে, বেঁচে থাকলে আমাদের আরও ক্ষতি করবে, আমাদের ভয়ের কিছু নেই, আমরা পরিকল্পনানুযায়ী কাজ করব এবং কাজ শেষে কিছুদিনের জন্য কুমিল্লার বাইরে থাকব। এ ছাড়া এ কাজ শেষে তোর ঋণ পরিশোধ ও পরিবার চালানোর জন্য যথেষ্ট পরিমাণ টাকা দেওয়া হবে।’ দেলোয়ার টাকার প্রয়োজনে ও শত্রুতার নিষ্পত্তি করতে জামালকে হত্যার জন্য রাজি হয়। আরিফ ও শাহ আলী গাড়ি থেকে নেমে মোবাইল ফোনে কয়েকজনকে ফোন দিয়ে নির্দেশনা প্রদান করে। তবে এ ব্যাপারে দেলোয়ারকে তারা কিছুই বলে না। আনুমানিক সাড়ে ৭টার দিকে আরিফ একজন সিএনজি ড্রাইভারকে ফোন দিয়ে পাওয়ার হাউসের সামনে নিয়ে আসে। এ সময় আরিফ নিজে একটি পিস্তল নেয়, দেলোয়ার ও কালা মনিরকে একটি করে পিস্তল দেয়। পরবর্তীতে দেলোয়ার, আরিফ ও কালামনির বোরকা পরে পিস্তলসহ সিএনজিতে ওঠে গৌরীপুর বাজারের উদ্দেশে রওনা দেয়। তারা শিকদার মেডিকেলের পার্শ্ব রাস্তা (গৌরীপুর বড় মসজিদ রোড) দিয়ে কিছুদূর গিয়ে সিএনজি অটোরিকশা থেকে নেমে হাঁটা শুরু করে। পথিমধ্যে আরিফ কয়েকজনকে ফোন করে জামালের অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হয়। প্রতিনিয়ত ফোনে তাদেরকে জামালের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করতে বলে। ঘটনাস্থলে আসার পর আসামিরা জামালকে দেখতে পায়। এরপর গুলি করে দ্রুত পালিয়ে যায়। তারা তাদের পরিহিত বোরকাগুলো খুলে বালির মাঠের একটি ঝোপের মধ্যে রেখে পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক গৌরীপুর মা মোটরস অ্যান্ড সার্ভিসিং সেন্টারের সামনে চলে যায়। যেখানে শাহ আলী আগে থেকেই মাইক্রোবাস নিয়ে অপেক্ষা করছিল। পরবর্তীতে তারা চান্দিনায় আসার পর আরিফ তার পরিচিত এক ব্যক্তির কাছে অস্ত্র হস্তান্তর করে। ওই ব্যক্তির ভাড়া করা মাইক্রোবাসে করে আরিফ, কালা মনির, দেলোয়ার ও শাহ আলী নোয়াখালী চলে যায়। ১ মে তারা ওই মাইক্রোবাসে করে আবার চান্দিনায় আসে। বিপদ আঁচ করতে পেরে পুনরায় নোয়াখালী চলে যায়। নোয়াখালীতে থাকাকালীন ২ মে সকালে মনির তাকে জানায় আরিফ বিদেশ চলে গেছে। নিজেদের গোপন রাখতে তারা ৮ মে পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করে। একই অবস্থানে বেশি দিন থাকলে গ্রেফতার হতে পারে- এই ভয়ে সে ৯ মে বিকালে তার খালার বাসা থেকে বের হয়ে যাত্রাবাড়ী এলাকায় অবস্থান করে। এ সময় তাকে গ্রেফতার করা হয়। পরবর্তীতে একইদিন রাতে দেলোয়ারের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী সাদ্দামকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার সাদ্দাম জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, জামাল হত্যাকাণ্ডের ঘটনা সম্পর্কে সে জানত না। গত ১ মে শাকিল (এজাহারনামীয় ৬ নম্বর আসামি) তাকে ফোন দিয়ে আসামিদেরকে পালানোর ব্যাপারে সাহায্য চাইলে সে রাজি হয়। উল্লেখ্য, শাহ আলী (পাসপোর্টে নাম আল-আমিন) গত ৩ মে দুবাইয়ের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়ে। এদিকে অপর সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার আবদুল মান্নান জানান, যুবলীগ নেতা জামাল হোসেনকে খুন করতে যে অস্ত্রগুলো ব্যবহার করা হয়েছে- সেগুলো উদ্ধার করা হয়েছে। জেলার চান্দিনা উপজেলা থেকে একটি স্কুল ব্যাগের ভিতর থেকে অস্ত্রগুলো উদ্ধার করা হয়। তার মধ্যে দুটি অত্যাধুনিক পিস্তল, একটি অত্যাধুনিক রিভলবার ও ২৪ রাউন্ড গুলি, নেকাব, একটি জিন্স প্যান্ট উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়াও এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অপরাধে মাজহারুল ইসলাম সৈকতকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সৈকত স্বীকার করেছে- ঘটনার পর অস্ত্রগুলো তার কাছে রেখে যাওয়া হয়।

উল্লেখ্য, ৩০ এপ্রিল রাত ৮টার দিকে কুমিল্লার দাউদকান্দির উপজেলার গৌরীপুর বাজারে হত্যা করা হয় জেলার তিতাস উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক জামাল হোসেনকে।

সর্বশেষ খবর