শনিবার, ২০ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা
অষ্টম কলাম

সাগরে ৬৫ দিন মাছ ধরা বন্ধ

নিজস্ব প্রতিবেদক

সাগরে ৬৫ দিন মাছ ধরা বন্ধ

গভীর সাগরে মাছের উৎপাদন ও প্রজনন বাড়াতে ইলিশসহ সব ধরনের মাছ শিকারে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার। গতকাল মধ্যরাতে শুরু হওয়া এ নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে ২৩ জুলাই পর্যন্ত। এ সময়ের জন্য জেলেদের খাদ্যসহায়তা হিসেবে ৮৬ কেজি করে চাল দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মাছ ধরা বন্ধ হওয়ায় সাগর থেকে জাল উঠিয়ে তীরে ফিরতে শুরু করেছেন জেলেরা। তারা সরকারের এমন সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করে নিষেধাজ্ঞা চলাকালে বিদেশি ট্রলারের মাছ ধরা বন্ধ ও খাদ্যসহায়তা বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছেন।

এ ছাড়া সুন্দরবন অঞ্চলে জুন, জুলাই, আগস্ট এ তিন মাস মাছ ধরাসহ সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ থাকে। সাগরে মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকার সময়ের সঙ্গে সমন্বয় করে এ অঞ্চলে অতিরিক্ত ১২ দিন মাছ ধরা বন্ধ থাকবে। অর্থাৎ সুন্দরবন অঞ্চলে ২০ মে থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত মাছ ধরা বন্ধ থাকবে। বন অধিদফতর এ নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন করবে। আর বঙ্গোপসাগরে নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে সহায়তা করবে স্থানীয় প্রশাসন, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড ও সশস্ত্র বাহিনী।

শরণখোলা উপজেলার জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা বিনয় কুমার রায় বলেন, মাছের নিরাপদ প্রজননের জন্য এ ৬৫ দিন নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। এতে বেশ সুফল পাওয়া গেছে। শরণখোলাসহ বাগেরহাট জেলায় সমুদ্রগামী নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা প্রায় ১৫ হাজার। এরা প্রত্যেকেই ৮৬ কেজি করে চাল পাবেন। জুনের মাঝামাঝি চাল বিতরণ শুরু হবে। তবে নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্তে ক্ষোভ জানিয়েছেন জেলে ও মাছ ব্যবসায়ীরা। শরণখোলা ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি মো. আবুল হোসেন বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞা শুধু আমাদের দেশের জেলেদের জন্য। এ সুযোগে ভারতের জেলেরা আমাদের জলসীমায় প্রবেশ করে অবাধে মাছ ধরে নিয়ে যায়। সরকার তাদের ঠেকাতে পারে না। শুধু আমরাই ক্ষতিগ্রস্ত হই।’ বঙ্গোপসাগর থেকে ফিরে আসা মাছ ধরা জাহাজ ইমাম-১-এর স্কিপার শাহীন আহমেদ বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার কারণে দুই মাসের বেশি বেকার থাকতে হবে। নিষেধাজ্ঞার সময় চাল দেওয়ার কথা শুনি। তবে আমি কখনো চাল পাইনি।’

এদিকে গতকাল বিকাল পর্যন্ত বৃহৎ মৎস্যবন্দর খ্যাত পটুয়াখালীর মহিপুর-আলীপুর পোতাশ্রয় শিববাড়িয়া নদীর দুই পাড়ে আড়তঘাটে নোঙর করেছে সহস্রাধিক মাছ ধরা ট্রলার। বছরজুড়ে ইলিশের আকাল, ঘূর্ণিঝড় মোখায় এক সপ্তাহ অলস সময় পার করার পর মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধের কারণে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জেলেসহ ব্যবসায়ীরা। নিষেধাজ্ঞা চলাকালে ভারতীয় জেলেদের আগ্রাসন বন্ধ এবং খাদ্যসহায়তা বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছেন তারা। কলাপাড়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা জানিয়েছেন, অবরোধকালে উপজেলার ১৮ হাজার ৩০৫ জন নিবন্ধিত জেলেকে ৮৬ কেজি করে চাল প্রদান করা হবে।

সাগরে ৬৫ দিন মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে ১১ মে সচিবালয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমের সভাপতিত্বে একটি সভায় বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। তার মধ্যে রয়েছে সমুদ্রযাত্রার প্রবেশপথগুলোয় নজরদারি জোরদার করা, মৎস্য নৌযানের সমুদ্রযাত্রা শতভাগ বন্ধ নিশ্চিত করা, দেশের সমুদ্রসীমায় বিদেশি নৌযানকে মৎস্য আহরণে বিরত রাখা, নৌযান নোঙরস্থলে আবদ্ধ রাখা, সমুদ্রের তীরবর্তী বরফকলগুলো সীমিত পর্যায়ে চালু রাখা, মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনের সমুদ্রতীরবর্তী মাছ অবতরণ কেন্দ্রগুলো বন্ধ রাখা, সব মাছ ধরার নৌযানকে পর্যায়ক্রমে ট্র্যাকিংয়ের আওতায় নিয়ে আসা, সাগরে মাছ ধরায় নিয়োজিত সব নৌযানকে ১৯ মে’র মধ্যে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা প্রভৃতি।

 

 

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর