শিরোনাম
রবিবার, ২১ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা
একরাম হত্যা মামলা

অধরা ফাঁসির ১৭ আসামি

জমির বেগ, ফেনী

ফেনীর ফুলগাজী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি একরামুল হক একরাম হত্যার নয় বছর গতকাল (২০ মে) পার হয়ে গেল নীরবে নিভৃতে। অথচ এখনো গ্রেফতার হননি এ হত্যা মামলায় ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত ১৭ আসামি।

২০১৪ সালের ২০ মে বেলা ১১টার দিকে চেয়ারম্যান একরামকে ফেনী শহরের একাডেমিতে দুর্বৃত্তরা প্রকাশ্যে দিনদুপুরে গুলি করে, কুপিয়ে, গাড়িসহ পুড়িয়ে হত্যা করে।

হত্যার ঘটনায় জড়িতরা একের পর এক গ্রেফতার হতে থাকলে মুখোশ উন্মোচিত হয় ঘটনার নেপথ্য। হত্যার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রাঘববোয়ালদের নাম বেরিয়ে এলে গা ঢাকা দেয় তারা। অন্যদিকে হত্যার প্রতিবাদে ফুঁসে ওঠে এলাকাবাসী। হরতাল-অবরোধ-বিক্ষোভসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেন ফুলগাজী উপজেলাবাসী।

একরাম হত্যার রাতেই একরামের বড় ভাই রেজাউল হক জসিম উপজেলা নির্বাচনে একরামের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি নেতা মাহাতাব উদ্দিন চৌধুরী মিনারকে একমাত্র আসামি করে অজ্ঞাত আরও ৩০-৩৫ জনের বিরুদ্ধে ফেনী মডেল থানায় মামলা করেন। পরে মামলার রায়ে মিনারকে আদালত বেকসুর খালাস দেন।

হত্যার ১০০ দিন পর ২০১৪ সালের ২৮ আগস্ট মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ ৫৬ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেন। আদালত আড়াই মাস পর ওই বছরের ১২ নভেম্বর আলোচিত এ হত্যা মামলার অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন। অভিযোগপত্র দাখিলের ১৬ মাস পর ১৫ মার্চ আদালত মামলার অভিযোগ গঠন করেন। পরে সাক্ষ্য গ্রহণের মাধ্যমে বিচারকাজ শুরু হয়। ২০১৮ সালের ১৩ মার্চ মামলার রায় ঘোষণা করা হয়। রায়ে ৩৯ আসামিকে মৃত্যুদন্ড ও ১৬ জনকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়। ফেনীর জেলা ও দায়রা জজ আমিনুল হক এ মামলার রায় ঘোষণা করেন। মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আদেল, পৌর কমিশনার আবদুল্লাহিল মাহমুদ শিবলু রয়েছেন। জামিন নিয়ে পলাতকদের মধ্যে ফুলগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাহিদ চৌধুরী এবং ফেনী জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ফেনী জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান নিলুফা ইয়াসমিন বড় মণির ছেলে আবিদুল ইসলাম আবিদ রয়েছেন।

আদালত মামলার বাদী একরামের বড় ভাই রেজাউল হক জসিম, ছোট ভাই এহসানুল হক, নিহতের স্ত্রী তাসমিন আক্তার, গাড়িচালক আবদুল্লাহ আল মামুনসহ ৫০ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন।

মামলার অভিযোগপত্রে পুলিশ ৫৯ জনকে সাক্ষী করেছিল। এদের মধ্যে সাধারণ সাক্ষী ২৮ জন। গ্রেফতারদের মধ্যে ১৬ আসামি হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। হত্যায় ব্যবহৃত একাধিক চাপাতি ও পাঁচটি পিস্তলের মধ্যে উদ্ধার হয়েছে দুটি পিস্তল ও কয়েকটি চাপাতি। এ মামলায় ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত ২২ জন কারাগারে রয়েছেন। আটজন জামিনে মুক্ত হয়ে পলাতক। নয়জন শুরু থেকেই পলাতক। রুটি সোহেল নামে একজন জামিনে থাকা অবস্থায় র‌্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত হন। হত্যার রায়ের ব্যাপারে একরামের পরিবারের কেউ কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তারা জানান, হাশরের মাঠে তাদের বিচার হবে। দিনটি উপলক্ষে পরিবারের পক্ষ থেকে ঘরোয়াভাবে মিলাদ মাহফিল ও এতিমখানায় খাবার বিতরণ করা হয়েছে বলে জানায় তার পরিবার। এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একরামের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া চাওয়া ও বিচার দাবির বিষয়টি ভাইরাল হয়েছে। এদিকে একরামের নবম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তাঁর কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ফেনী সদর আসনের সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী। এ সময় ফুলগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও আনন্দপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হারুন মজুমদারসহ দলীয় নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। বিকালে ফুলগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগ একরামের স্মরণে শোকসভা করেন।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর