বৃহস্পতিবার, ২৫ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা
প্রস্তুত কর্ণফুলী টানেল

তিন কারণে বাড়ল অপেক্ষা

প্রবেশমুখে স্ক্যানার স্থাপন পুলিশ ফাঁড়ি ফায়ার স্টেশনের নির্মাণ কাজের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। শেষ হওয়ার পরই কর্ণফুলী টানেলে চলবে যান

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

তিন কারণে বাড়ল অপেক্ষা

কর্ণফুলী নদীর বুক চিরে তৈরি হওয়া ‘বঙ্গবন্ধু টানেল’ যান চলাচলের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত। তবে বহুল প্রত্যাশিত দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম টানেল এখনই যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হচ্ছে না। নিরাপত্তা সংক্রান্ত তিন কারণে বেড়েছে অপেক্ষা। এই টানেলের নিরাপত্তার জন্য দুই টিউবের কাজের অগ্রগতি ৯৯.৫ শতাংশ প্রবেশ মুখে স্ক্যানার স্থাপন, পুলিশ ফাঁড়ি এবং ফায়ার স্টেশনের নির্মাণ কাজের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তা শেষ হওয়ার পরই কর্ণফুলী নদীর বুকে চলবে যান। বঙ্গবন্ধু টানেলের প্রকল্প পরিচালক হারুনুর রশিদ চৌধুরী বলেন, টানেলের ভৌতিক কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৯৯.৫ শতাংশ। সার্বিক কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৯৭.২ শতাংশ। টানেলের যান চলাচলের বিষয়ে উচ্চ পর্যায়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন।

টানেল সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা বলেন, অচিরেই যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত হচ্ছে না কর্ণফুলী টানেল। টানেলের দুই প্রান্তে স্ক্যানার, পুলিশ ফাঁড়ি এবং ফায়ার স্টেশন স্থাপনের কাজ শেষ হওয়ার পরই খুলে দেওয়া হবে টানেল। এরই মধ্যে স্ক্যানার বসানোর জন্য দুই প্রান্তে লেন তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। পুলিশ ফাঁড়ি ও ফায়ার স্টেশন স্থাপনের অবকাঠামোগত উন্নয়ন কাজ শিগগিরই শুরু হবে।

জানা যায়, বঙ্গবন্ধু টানেলের কাজ শেষ পর্যায়ে আসার পর দ্রুত সময়ের মধ্যেই চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করার পরিকল্পনা ছিল সংশ্লিষ্টদের। টানেল যান চলাচলের জন্য প্রস্তুত হলেও নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট ইস্যুর কারণে যান চলাচলের সময়সীমা পিছিয়ে দেওয়া হয়। এরই মধ্যে টানেলের নির্মাণ সংক্রান্ত কমিটির এক সভায় টানেলের দুই প্রান্তে দুটি পুলিশ ফাঁড়ি, ফায়ার সার্ভিস স্টেশন এবং টিউবের দুই প্রান্তে প্রবেশের মুখে গাড়ি তল্লাশির জন্য আটটি স্ক্যানার বসানোর সুপারিশ করে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে চলতি বছরের ১৭ জানুয়ারি সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (আরডিপিপি) অনুমোদন পায়। এরপর চারটি স্ক্যানার বসাতে লেন তৈরির কাজ শুরু হয়। দুই প্রান্তে পুলিশ ফাঁড়ি এবং ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের কাজ দ্রুত শুরু হবে।

বঙ্গবন্ধু টানেলকে পদ্মা সেতুর পর যোগাযোগ খাতে দ্বিতীয় বিপ্লব মনে করা হচ্ছে। টানেলের কারণে বৃহত্তর চট্টগ্রামের পর্যটন, শিল্পায়নসহ অর্থনীতিতে যোগ হবে নতুন মাত্রা। টানেলের মাধ্যমে দেশের আগামীর বাণিজ্যিক হাব কক্সবাজারের মাতারবাড়ীর সফঙ্গ যুক্ত হবে পুরোদেশ। এরই মধ্যে মাতারবাড়ীতে গড়ে উঠছে গভীর সমুদ্র বন্দর, দেশের অন্যতম বৃহৎ বিদ্যুৎ কেন্দ্র, এলএনজি টার্মিনাল, এলপিজি টার্মিনাল, অয়েল টার্মিনাল, গ্যাস ট্রান্সমিশন, সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং প্রকল্প, অয়েল রিফাইনারি, এনার্জি ও ফুড স্টোরেজ, ট্যুরিজম, এমব্যাঙ্কমেন্ট ও ওয়াটারফ্রন্ট ইকোনমিক জোন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এ মেগা প্রকল্পগুলোতে বিভিন্ন এলাকা থেকে পণ্য আনা নেওয়ার জন্য চলাচল করবে শত শত গাড়ি। যা বঙ্গবন্ধু টানেলকে যাতায়াতের সহজ মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করবে। এক সমীক্ষা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, টানেল পুরোদমে চালু হলে প্রতিদিন ১৭ হাজার গাড়ি চলাচল করবে। বছরে সে সংখ্যা দাঁড়াবে ৬৩ লাখ। ২০২৫ সালে টানেল দিয়ে গড়ে প্রতিদিন ২৮ হাজার যানবাহন চলাচল করবে। যার মধ্যে অর্ধেক থাকবে পণ্যবাহী যানবাহন। ২০৩০ সাল নাগাদ প্রতিদিন গড়ে ৩৭ হাজার ৯৪৬টি এবং ২০৬৭ সাল নাগাদ ১ লাখ ৬২ হাজার যানবাহন চলাচলের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা আছে। বাংলাদেশ সরকার ও চাইনিজ এক্সিম ব্যাংক এ প্রকল্পে যৌথভাবে অর্থায়ন করেছে। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর