মঙ্গলবার, ৩০ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

পুরনো ফৌজদারি মামলা নিষ্পত্তিতে গতি

বিশেষ ১০ বেঞ্চে সোয়া ২ ঘণ্টায় নিষ্পত্তি ৩৪৯১টি চলতি সপ্তাহে আরও বিশেষ বেঞ্চ থাকছে

আরাফাত মুন্না

পুরনো ফৌজদারি মামলা নিষ্পত্তিতে গতি

ফৌজদারি মামলায় নিম্ন আদালত থেকে জামিন না পেয়ে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন অনেক আসামি। অন্তর্বর্তীকালীন জামিন নেওয়ার পর ওই আবেদনগুলো নিষ্পত্তিতে আর কোনো খোঁজখবর রাখে না কোনো পক্ষ। বছরের পর বছর ধরে ঝুলে থাকা এসব মামলা বৃদ্ধি করে বিচারাধীন মামলার আকার।

এবার এমন সব পুরনো ফৌজদারি মামলা নিষ্পত্তিতে গতি এসেছে। প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর উদ্যোগে দফায় দফায় গঠন করা হচ্ছে বিশেষ বেঞ্চ। এমন ১০টি বিশেষ বেঞ্চ বৃহস্পতিবার মাত্র সোয়া ২ ঘণ্টায় নিষ্পত্তি করেছে জামিন-সংক্রান্ত পুরনো ৩ হাজার ৪৯১টি মামলা। ওই দিন বেলা ২টা থেকে বিকাল সোয়া ৪টা পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন জামিন-সংক্রান্ত (ফৌজদারি কার্যবিধির ধারা ৪৯৮) এসব মামলা নিষ্পত্তি করেছেন বেঞ্চগুলো। ফৌজদারি আপিল নিষ্পত্তিতে প্রধান বিচারপতি আগামী বৃহস্পতিবারের জন্য গঠন করে দিয়েছেন আরও বিশেষ ১০ বেঞ্চ। ওই দিন ২০২০ সাল পর্যন্ত দাখিল হওয়া ফৌজদারি আপিল আবেদনের শুনানি গ্রহণ করে নিষ্পত্তি করবেন বেঞ্চগুলো।

অন্যদিকে হাই কোর্টের পাশাপাশি আপিল বিভাগও পুরনো মামলা নিষ্পত্তিতে পিছিয়ে নেই বলে জানা গেছে। গত সপ্তাহে আপিল বিভাগের দুটি বেঞ্চে প্রায় ৩০০টি পুরনো মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে বলে জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট সূত্র। সুপ্রিম কোর্টের তথ্য অনুযায়ী, এর আগে ২ মার্চ ৩ হাজার ২০০ মামলা নিষ্পত্তি করেছেন বিশেষ নয় বেঞ্চ। এর আগে গত বছর ২০ ও ২১ এপ্রিল দুই দিনের জন্য ১৩টি বেঞ্চ গঠন করে দিয়েছিলেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। ওই দুই দিনে ৮ হাজার ৫১৭টি জামিন-সংক্রান্ত মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করেছেন বেঞ্চগুলো। এরপর ১১ আগস্ট একটি বিশেষ বেঞ্চে জামিন-সংক্রান্ত পুরনো আরও ১ হাজার ১৮৫ মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। ‘জামিন মঞ্জুর ও জামিনের অর্থের পরিমাণ হ্রাসের ক্ষমতা’ বিষয়ক ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৮ ধারায় করা জামিন-সংক্রান্ত এসব মামলা দীর্ঘদিন ধরে ঝুলছিল।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ সাইফুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, পুরনো মামলা নিষ্পত্তিতে প্রধান বিচারপতির এ উদ্যোগ একটি চলমান প্রক্রিয়া। তিনি বলেন, বর্তমান প্রধান বিচারপতি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই পুরনো মামলা নিষ্পত্তিতে নানা ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছেন। মাঝে-মধ্যেই বিশেষ বেঞ্চ করে দিয়ে বিচারাধীন পুরনো মামলা নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করছেন। হাই কোর্টের পাশাপাশি আপিল বিভাগেও পুরনো মামলা নিষ্পত্তিতে গতি বেড়েছে বলে জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের এই কর্মকর্তা।

বৃহস্পতিবার নিষ্পত্তি করা ৩ হাজার ৪৯১টি মামলার মধ্যে বিচারপতি মো. রেজাউল হক ও বিচারপতি কে এম ইমরুল কায়েশের বেঞ্চ ২০০টি, বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের বেঞ্চ ৪৮৯টি, বিচারপতি মো. হাবিবুল গনি ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের বেঞ্চ ৫০০টি, বিচারপতি মো. আকরাম হোসেন চৌধুরী ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর বেঞ্চ ৪৩২ এবং বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আমিনুল ইসলামের বেঞ্চ ৪৯২টি মামলা নিষ্পত্তি করেছেন। এ ছাড়া বিচারপতি মো. বদরুজ্জামান ও বিচারপতি এস এম মাসুদ হোসাইন দোলনের বেঞ্চ ২৫৫টি, বিচারপতি এ এস এম আবদুল মোবিন ও বিচারপতি মো. আখতারুজ্জামানের বেঞ্চ ২০০টি, বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি ফাহমিদা কাদেরের বেঞ্চ ২২৪টি, বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লা ও বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানের বেঞ্চ ৪০০টি এবং বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান ও বিচারপতি শাহেদ নূরউদ্দিনের বেঞ্চ ২৯৯টি পুরনো মামলা নিষ্পত্তি করেন।

এদিকে পুরনো মামলা নিষ্পত্তিতে প্রধান বিচারপতির এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীরা। জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সাবেক বিচারপতি ব্যারিস্টার এ বি এম আলতাফ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বর্তমান প্রধান বিচারপতি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই মামলাজট নিরসনে পদক্ষেপ নিচ্ছেন। বিশেষ বেঞ্চ গঠন করে পুরনো মামলা নিষ্পত্তিও তার সে ধরনের একটি উদ্যোগ। এমনভাবে উদ্যোগ নিয়ে পুরনো মামলা নিষ্পত্তি করলে মামলাজট দ্রুতই সহনীয় পর্যায়ে চলে আসবে বলে মনে করেন তিনি।

জানা গেছে, প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী গত বছর ১ জানুয়ারি শপথ গ্রহণের মাধ্যমে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। পরদিন আপিল বিভাগে তাকে দেওয়া আইনজীবীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি মামলাজট কমাতে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি ২৭ জানুয়ারি আট বিভাগের জন্য হাই কোর্ট বিভাগের আটজন বিচারপতির নেতৃত্বে পৃথক মনিটরিং কমিটি গঠন করেন।

সর্বশেষ খবর