শুক্রবার, ২ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

কানাডা থেকে ফোনে স্ত্রী হত্যার তথ্য দিল স্বামী

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীতে কানাডাপ্রবাসী স্বামীর হাতে খুন হয়েছেন স্ত্রী। বিয়ের তিন মাসের মাথায় সম্প্রতি কানাডা থেকে দেশে ঘুরতে আসেন এই দম্পতি। পুলিশ জানিয়েছে, গত শুক্রবার রাতে কথা কাটাকাটির জেরে স্ত্রী আফরোজা বেগমকে কুপিয়ে হত্যা করে স্বামী আশরাফুল ইসলাম। ঘটনার পাঁচ দিন পর বুধবার দক্ষিণখানের নদ্দাপাড়ায় বাড়ির উঠানে পুঁতে রাখা ওই নারীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তবে ঘটনার একদিন পরই কানাডায় চলে যান আশরাফুল। পুলিশের ধারণা, কাবিনের টাকার জের ধরেই এই হত্যাকাণ্ড। দক্ষিণখানের এই বাড়িটি আফরোজার শ্বশুরবাড়ি। দুই মাস হলো স্বামী আশরাফুলের সঙ্গে কানাডা থেকে দেশে এসে শ্বশুরবাড়িতে ওঠেন। স্বামী-স্ত্রী দুজনেই কানাডার স্থায়ী বাসিন্দা। শুক্রবার রাতে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে বঁটি দিয়ে তার মাথায় কোপ দেয় আশরাফুল। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান আফরোজা। পরে বাড়ির উঠানে পুঁতে রাখা হয় তার লাশ। ঘটনার পর রবিবার কানাডায় পাড়ি জমান আশরাফুল। শুক্রবার মেয়ে আফরোজার সঙ্গে বাবা মোহাম্মদ আতাউল্লাহর শেষ কথা হয়। শনিবার আসেন মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে। মেয়েকে না পেয়ে দিশাহারা হয়ে পড়েন বাবা। পরে আফরোজার ভাই মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম সোমবার দক্ষিণখান থানায় একটি জিডি করেন। বুধবার রাতে শ্বশুরবাড়ির উঠান থেকে আফরোজার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। গ্রেফতার করা হয় আশরাফুলের পরিবারের চার সদস্যকে। পুলিশের ধারণা, কাবিনের টাকা নিয়ে বিরোধের জেরে এই হত্যাকাণ্ড। নিহতের বাবা মোহাম্মদ আতাউল্লাহ জানান, ওরা একে অপরকে অনেক ভালোবাসত। কিন্তু তাদের মধ্যে এভাবে বিরোধ সৃষ্টি হবে কল্পনাও করিনি। শুক্রবার মেয়ের সঙ্গে কথা হয়। শনিবার আমাকে বাসায় আসতে বলে। শনিবার এসে মেয়ের কোনো খোঁজ না পেয়ে আমি নির্বাক হয়ে যাই। নিহত প্রবাসী নারী আফরোজার বাড়ি নীলফামারীর ডোমারে। তার পরিবার এ ঘটনায় সুষ্ঠু বিচার চেয়েছে। নিহতের ভাই মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম জানান, রবিবার বেলা ৩টার দিকে আশরাফুল আমাকে ফোন দেন। বলেন, আমাকে দ্রুত কানাডা যেতে হবে। তোমার আপু (আফরোজা) রাগ করে রয়েছে। সে আমার সঙ্গে কানাডা যাবে না, সাত দিন পরে যাবে। পরে কথা হবে বলে ফোনটা কেটে দেন আশরাফুল। আমি বিষয়টি সন্দেহ হওয়ায় ৯৯৯ এ ফোন দেই এবং দক্ষিণখান থানায় জিডি করি। পরে জিডির তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় দক্ষিণখান থানার এসআই রেজিয়া খাতুনকে। এসআই রেজিয়া জানান, আফরোজার বিষয়ে আশরাফুলের পরিবারকে পৃথকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। একপর্যায়ে আশরাফুলের খালা বলে, আমাদের বাঁচাতে হবে। ১৫ লাখ টাকা দেব এবং দুজনকে কানাডা পাঠাব বলে আমাকে অফার দেন। এরপর খালার কাছে বিস্তারিত জানতে চাইলে তিনি আশরাফুলের সঙ্গে কথা বলতে বলেন। এরপর আশরাফুলের ভাবি কানাডায় থাকা আশরাফুলের সঙ্গে কথা বলিয়ে দেন। আশরাফুল হত্যার দায় স্বীকার করেন এবং লাশ কোথায় আছে তা বলে দেন। ডিএমপির দক্ষিণখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাহাঙ্গীর হোসেন খান জানান, আফরোজা খুনের ঘটনায় দক্ষিণখান থানায় একটি মামলা হয়েছে। ওই মামলায় আশরাফুলের বাবা, ভাই, ভাইয়ের স্ত্রী ও খালাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন।

ডিএমপির উত্তরা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম জানান, গত ২৯ মে দক্ষিণখান থানার একটি জিডির তদন্তের সূত্র ধরে মর্মান্তির হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচিত হয়। আশরাফুল এবং তার স্ত্রী আফরোজা কানাডা প্রবাসী। সাড়ে তিন মাস আগে তারা কানাডা থেকে দেশে আসেন। কানাডাতে বিয়ে হলে বাংলাদেশে এসে এক মাস আগে তাদের কাবিন হয় ১ কোটি টাকা। আমরা জানতে পেরেছি কাবিন নিয়েই তাদের মধ্যে মতানৈক্য তৈরি হয়। ধারণা করা হচ্ছে, হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে তিনি রবিবার কানাডা চলে গেছেন।

সর্বশেষ খবর