রবিবার, ৪ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

ডেঙ্গুতে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্লাটিলেটের প্রয়োজন নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক

সাধারণত দেশে জুন মাসেই ডেঙ্গুজ্বরের প্রাদুর্ভাব শুরু হয় কিন্তু এবার মে মাসেই সর্বাধিক ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। এ অবস্থায় জ্বর হলেই দ্রুত এনএস-১ পরীক্ষা এবং বাড়তি সতর্কতা জরুরি বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেন, জ্বর হলে আতঙ্কিত না হয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ডেঙ্গু আক্রান্তের প্লাটিলেটের প্রয়োজন হয় না। গতকাল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) শহীদ ডা. মিলন হলে আয়োজিত ‘চেঞ্জিং প্যাটার্ন অব ডেঙ্গু সিনড্রম’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডেঙ্গু চিকিৎসার জাতীয় নীতিমালার প্রধান সম্পাদক অধ্যাপক ডা. কাজী তারিকুল ইসলাম। সেমিনার শেষে কেবিন ব্লকের সাধারণ জরুরি বিভাগে ডেঙ্গু কর্নারের উদ্বোধন করা হয়। বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে ডেঙ্গুর প্রথম প্রাদুর্ভাব শুরু হয় ২০০০ সালে। ২০১৯ সাল পর্যন্ত ডেঙ্গুর সাধারণ উপসর্গ ছিল জ্বর, কাশি, র?্যাশ হওয়া, মাথা ব্যথা হওয়া। কিন্তু ২০২১ সালের পর ডেঙ্গুর উপসর্গ পরিবর্তন হয়। তখন ডেঙ্গুতে নতুন উপসর্গ পেটে ব্যথা ও পাতলা পায়খানাসহ অন্যান্য পরিবর্তন হয়। এটি এখনো চলমান রয়েছে। মূল প্রবন্ধে অধ্যাপক ডা. কাজী তারিকুল ইসলাম বলেন, ডেঙ্গুজ্বর ধরা পড়লে পর্যাপ্ত পানি জাতীয় খাবার এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ গ্রহণ করতে হবে। অযাচিত অ্যান্টিবায়োটিক সেবন থেকে বিরত থাকবেন। এ সময়ে অ্যাসপিরিন জাতীয় ও ব্যথার ওষুধ বন্ধ রাখতে হবে। বমি, পাতলা পায়খানা, পেট ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, শরীরের কোথাও রক্তপাত হলে দ্রুত হাসপাতালে যোগাযোগ করতে হবে। অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, একটি গান আছে, ডোরাকাটা দাগ দেখে বাঘ চেনা যায়, সাদা সাদা ফোটা দেখে এডিস মশা চেনা যায়। এই মশা চিনতে হবে। এই মশাই ডেঙ্গুর জন্য দায়ী। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ইমেরিটাস অধ্যাপক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, জ্বর হলে প্রয়োজন ছাড়া অযথা বাড়তি টেস্ট এবং বারবার টেস্ট যেন না দেওয়া হয়। চিকিৎসার ক্ষেত্রে প্লাটিলেট অথবা রক্ত দেওয়ার প্রয়োজনীয়তার ব্যাপারে চিকিৎসকের সিদ্ধান্ত মেনে চলতে হবে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রক্ত দেওয়ার প্রয়োজন নাই। ডেঙ্গু হয়েছে কি না তা জানতে জ্বর হলে শুরুতেই এনএস ওয়ান টেস্টটি করে নিতে হবে এবং জ্বর হলেই অ্যাসপিরিন জাতীয় ওষুধ খাওয়া যাবে না। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. আবুল কালাম আজাদ।

 তিনি বলেন, ডেঙ্গু ও কভিডে একই ধরনের উপসর্গ দেখা দেয়। উভয় রোগেই জ্বর, সর্দি ও কাশির লক্ষণ দেখা যায়। এ জন্য জ্বর হলেই ডেঙ্গু ও কভিড পরীক্ষা করাতে হবে। বর্তমানে পানিবাহিত রোগ টাইফয়েড আক্রান্ত রোগীও অনেক পাওয়া যাচ্ছে। এ জন্য জ্বর হলেই প্রথম দিনেই এনএস ওয়ান টেস্টটি করাতে হবে। শুরুতে রোগ চিহ্নিত না হলে রোগীর অবস্থার অবনতি হলে রোগীকে বাঁচানো কঠিন হয়ে পড়ে। সেমিনারে বক্তব্য দেন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. টিটু মিয়া, অধ্যাপক ডা. এম এ জলিল চৌধুরী, বিএসএমএমইউর ইন্টারন্যাশনাল মেডিসিন বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদ আরাফাত, ভাইরোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আফজালুন নেছা, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার।

সর্বশেষ খবর