শুক্রবার, ৯ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা
টার্গেট হুন্ডি ঠেকানো

রেমিট্যান্সে বাড়ছে প্রণোদনা

শাহেদ আলী ইরশাদ

রেমিট্যান্সে বাড়ছে প্রণোদনা

বৈধপথে প্রবাস আয় বাড়াতে নগদ প্রণোদনার হার আরও বাড়ানোর চিন্তাভাবনা করছে সরকার। বিদ্যমান প্রণোদনার হার আড়াই থেকে ৩ অথবা সাড়ে ৩ শতাংশ হতে পারে। আগামী (২০২৩-২৪) অর্থবছরের প্রথম দিন হতে এ নির্দেশনা কার্যকর হতে পারে। প্রণোদনা বাড়ানোর মাধ্যমে হুন্ডি ঠেকানোর পাশাপাশি প্রবাসী আয় বৃদ্ধিতে কতটা ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে সেই দিকগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহী করতে সরকার ২০১৯-২০ অর্থবছর থেকে প্রবাসীদের ২ শতাংশ  প্রণোদনা দেওয়া শুরু করে। ২ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়ায় ওই অর্থবছরে ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাস আয় বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ৮২০ কোটি ডলারে। যা আগের অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ১৩ শতাংশ বেশি। এ ছাড়া, ২০২০-২১ অর্থবছরে রেমিট্যান্স আহরণের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৪৮০ কোটি ডলার, যা ২০১৯-২০ অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ৩৬ শতাংশ বেশি।

 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০২০ সালের শুরুতে বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের বিস্তৃতি প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি করেছিল। ব্যবসা-বাণিজ্যের স্থবিরতাসহ কর্মহীনতা ও চাকরিচ্যুতির শিকার হয়ে বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি দেশে ফিরেছেন। ফেরার আগে অনেকেই নিজেদের সব সঞ্চয় দেশে পাঠিয়েছেন। আবার অনেকে দেশে থাকা স্বজনদের জন্য বাড়তি অর্থ পাঠিয়েছেন। যাতায়াত ব্যবস্থায় স্থবিরতার কারণে হুন্ডিসহ অবৈধ পথে অর্থ লেনদেনের পথগুলোও সংকুচিত ছিল। এসব কারণে ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স ব্যাংকের মাধ্যমে দেশে এসেছে। কিন্তু করোনা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে আসায় রেমিট্যান্স প্রবাহের চিত্র পুরোপুরি পাল্টে গেছে।  পরবর্তীতে ২০২২ সালের ১ জানুয়ারি অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে প্রণোদনা ৫০ পয়সা বাড়িয়ে আড়াই শতাংশ করা হয়। প্রবাসী বাংলাদেশিদের কষ্টার্জিত বৈদেশিক আয় বৈধ উপায়ে দেশে আনার লক্ষ্যেই এই প্রণোদনা দেওয়া হয়। প্রণোদনা ২ থেকে বাড়িয়ে আড়াই শতাংশ করা হলেও হুন্ডি ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্যে ব্যাংকিং চ্যানেলে বাড়ছে না প্রবাস আয়। প্রবাসে শ্রমিকদের কাছ থেকে রেমিট্যান্স সংগ্রহ করে সোনার বার ও অলংকার কিনে পাচার করছে চোরাকারবারিরা। বিদেশে শ্রমিকদের কাছ থেকে নেওয়া অর্থ মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে দেশে আত্মীয়স্বজনের কাছে পাঠিয়ে দিচ্ছে হুন্ডি ব্যবসায়ীরা।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে বেড়েছে ডলারের দাম। বৈশ্বিক মন্দা পরিস্থিতিতে রপ্তানিতেও বড় আয়ের সুযোগ কম। প্রবাসী আয়ও আসছে না কাক্সিক্ষত হারে। এতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের মজুদ দিন দিন কমে যাচ্ছে। এ অবস্থায় বৈধপথে প্রবাস আয় বাড়াতে এ খাতে দেওয়া আড়াই শতাংশ নগদ প্রণোদনা বাড়ানোর আলোচনাও আছে সরকারের নীতিনির্ধারকদের টেবিলে।

এ বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সাংবাদিকদের বলেন, প্রবাসী আয়ে নগদ প্রণোদনা আড়াই শতাংশ থেকে ৩ অথবা সাড়ে ৩ শতাংশ করার আলোচনা হচ্ছে বিভিন্ন মহলে আমাদের ভিতরে। তবে নিশ্চিত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে আর্থিক অভিঘাত কী হবে সেটা পরীক্ষা-নিরীক্ষা হচ্ছে। প্রবাসীদের সঙ্গে আমরা আছি। প্রবাসীরা প্রধান তিন পায়ের এক পা, এটা সরকার স্বীকার করে।

সর্বশেষ খবর