শিরোনাম
শনিবার, ১০ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

স্বস্তির বৃষ্টিতে ভিজল রাজধানী

কমেছে তাপমাত্রা, নিয়ন্ত্রণে আসছে লোডশেডিংও

নিজস্ব প্রতিবেদক

স্বস্তির বৃষ্টিতে ভিজল রাজধানী

তীব্র দাবদাহে কাহিল রাজধানীবাসী বৃষ্টির অপেক্ষায় প্রহর গুনছিল বেশ কিছুদিন ধরেই। বৃহস্পতিবার কিছু এলাকায় গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি হলেও গরম খুব একটা কমেনি। এক ঘণ্টার মধ্যেই শুকিয়ে যায় পথঘাটের পানি। অবশেষে গতকাল বৃষ্টির অঝোরধারায় ভিজল রাজধানী। সকাল ১০টার পরই ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টির দেখা মেলে। দুপুরে ঢাকার বেশির ভাগ এলাকায়ই অঝোরধারায় বৃষ্টি নামে। এতে কমে আসে তাপমাত্রা। ঢাকাসহ আশপাশের এলাকায় বজ্রসহ বৃষ্টির পূর্বাভাসও দিয়ে রেখেছিল আবহাওয়া অফিস। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত রাজধানীর উত্তরা, খিলক্ষেত, বাড্ডা, রামপুরা, গুলশান, বারিধারা, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, শ্যামলী, মিরপুর, কারওয়ান বাজার, পল্টন, মতিঝিল, গুলিস্তান, মগবাজার, হাতিরঝিল, মুগদা, খিলগাঁও, বাসাবো, যাত্রাবাড়ী, মালিবাগ, মৌচাক এলাকা থেকে বৃষ্টির খবর পাওয়া গেছে। অনেকেই ফেসবুকে বৃষ্টির ছবি পোস্ট করে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। গতকাল দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয় টাঙ্গাইলে ৮৪ মি.মি.। ঢাকায় বৃষ্টিপাত হয়েছে ৪৭ মি.মি., যা ভারী বৃষ্টি হিসেবে বিবেচিত।

গতকাল দেশের সব বিভাগেই কমবেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। ফলে কমেছে তাপমাত্রা। গতকাল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল চুয়াডাঙ্গায় ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দুই দিন আগেও দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রির বেশি ছিল। গতকাল ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩২.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা আগের দিন ছিল ৩৩.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

এদিকে আজও দেশের সব বিভাগে বজ্রসহ বৃষ্টির আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। এরমধ্যে ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে বেশি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিয়েছে সরকারি সংস্থাটি। সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি ও রাতের তাপমাত্রা হ্রাস পেতে পারে। রাজশাহী, পাবনা ও চুয়াডাঙ্গার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া মৃদু তাপপ্রবাহ প্রশমিত হতে পারে।

কমেছে তাপমাত্রা, নিয়ন্ত্রণে আসছে লোডশেডিংও : কয়েক সপ্তাহে তীব্র তাপপ্রবাহ ও লোডশেডিংয়ের কারণে দেশব্যাপী জনদুর্ভোগ বেড়েছিল। একদিকে গরমে অস্বস্তি অন্যদিকে ঘণ্টায় ঘণ্টায় লোডশেডিংয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছিল বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ। এ অবস্থায় কিছুটা হলেও স্বস্তি দিয়েছে বৃষ্টি। বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়ে গতকাল দিনভর রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি ঝরেছে। এতে তাপমাত্রাও কমে এসেছে। বিদ্যুতের চাহিদাও কমে গেছে। এর ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে লোডশেডিংয়ে। এ দুই দিন বিদ্যুৎ লোডশেডিং তুলনামূলক কম হয়েছে। ন্যাশনাল লোড ডেসপাস সেন্টার বলছে, বৃহস্পতিবার রাত ৮টায় দেশের কোনো কোনো এলাকা লোডশেডিংয়ের আওতার বাইরে ছিল। এর মধ্যে ঢাকার দুই বিতরণ কোম্পানি কোনো লোডশেডিং করেনি। এ ছাড়া দেশের অন্যান্য এলাকায়ও বিদ্যুৎ পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত থেকে গতকাল পর্যন্ত অনেক এলাকায়ই বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক ছিল। পিডিবি সূত্রে জানা যায়, গতকাল দুপুর ১২টায় দেশে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা ছিল ১১ হাজার ৩০০ মেগাওয়াট। এর বিপরীতে সরবরাহ করা হয় ১১ হাজার ২৪ মেগাওয়াট। লোডশেডিং হয় ২৬৪ মেগাওয়াট। যা গত কয়েক দিনের চেয়ে অনেক কম। বৃষ্টিতে ঢাকার তাপমাত্রা ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে এসেছে। গত কয়েক দিন যা ছিল ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি। বৃষ্টির কারণে তাপমাত্রা অন্তত ৪ থেকে ৫ ডিগ্রি কমেছে। এতে বিদ্যুতের চাহিদা কমে গেছে। এর সঙ্গে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপে বিদ্যুতের উৎপাদনও কিছুটা বেড়েছে। ন্যাশনাল লোড ডেসপাস সেন্টার বলছে, বৃহস্পতিবার রাত ৮টায় ঢাকায় ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানির (ডেসকো) ১১৩০ মেগাওয়াট এবং ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) ১৫৬৪ মেগাওয়াট চাহিদার পুরোটাই সরবরাহ করা হয়েছে। ঢাকায় বাংলাদেশ রুরাল ইলেকট্রিফিকেশন বোর্ড (আরইবি) এলাকায় ২২৭৪ মেগাওয়াটের পুরোটাই সরবরাহ করা হয়েছে। চট্টগ্রামে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) চাহিদা ছিল ১০৭৫ মেগাওয়াট এবং আরইবির চাহিদা ছিল ৪০৯ মেগাওয়াট। চাহিদার পুরোটাই সরবরাহ ছিল। কোথাও লোডশেডিং হয়নি। লোডশেডিংয়ের বাইরে ছিল খুলনাও। ওয়েস্টজোন ৫৪৩ মেগাওয়াট এবং আরইবির ১৩৫১ মেগাওয়াট চাহিদার পুরোটা সরবরাহ করেছে। বরিশালে লোডশেডিং ছিল মাত্র ২ মেগাওয়াট। বরিশালে ওয়েস্টজোনে ১৩১ চাহিদার পুরোটাই সরবরাহ করা হয়েছে। এ ছাড়া আরইবির ৩৬৬ মেগাওয়াট চাহিদার মধ্যে সরবরাহ করা হয়েছে ৩৬৪ মেগাওয়াট। কুমিল্লায় পিডিবির ৩২৪ এবং আরইবির ১০৭৮ মেগাওয়াটের পুরোটা সরবরাহ করা হয়েছে। ময়মনসিংহে পিডিবির ৬৬৭ মেগাওয়াটের মধ্যে ৪২৭ মেগাওয়াট সরবরাহ ছিল। লোডশেডিং হয়েছে ৪০ মেগাওয়াট। আরইবির ৯৯৪ মেগাওয়াটের মধ্যে সরবরাহ হয়েছে ৭২১ মেগাওয়াট, লোডশেডিং ছিল ২৭৩ মেগাওয়াট। সিলেটে পিডিবির ১৯৯ মেগাওয়াটের মধ্যে সরবরাহ ছিল ১৯০ মেগাওয়াট। মাত্র ৯ মেগাওয়াট লোডশেডিং ছিল। আরইবির ১৩৫১ মেগাওয়াটের মধ্যে ১৩২৯ মেগাওয়াট সরবরাহ ছিল। লোডশেডিং ছিল ২২ মেগাওয়াট। রাজশাহীতে নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানির (নেসকো) ৪৮৫ মেগাওয়াট চাহিদার ৪৫৫ মেগাওয়াট সরবরাহ করা হয়েছে। মাত্র ৩০ মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়েছে। আরইবির ১১৭২ মেগাওয়াট চাহিদার মধ্যে ১০৪৫ মেগাওয়াট সরবরাহ করা হয়েছে। লোডশেডিং হয়েছে ১২৭ মেগাওয়াট। রংপুরে নেসকোর ৩৫১ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে ২৯৫ মেগাওয়াট সরবরাহ করা হয়েছে। এ ছাড়া আরইবির ৭২৫ মেগাওয়াটের স্থলে ৫৫২ মেগাওয়াট লোডশেডিং করা হয়েছে। পিডিবির পরিচালক (জনসংযোগ) মো. শামীম হাসান বলেন, তাপমাত্রা কমেছ, সেই সঙ্গে উৎপাদনও বেড়েছে। এতে বিদ্যুৎ পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর