সোমবার, ১২ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

ছাড় দেওয়া যাবে না ৩০ শতাংশের বেশি

শাহেদ আলী ইরশাদ

ছাড় দেওয়া যাবে না ৩০ শতাংশের বেশি

ক্যাশ ভাউচার, গিফট কার্ড, ক্যাশ কার্ড, রিওয়ার্ড কার্ড এবং ওয়ালেটের মতো বিভিন্ন প্রিপেইড পণ্য ইস্যু একটি আইনি কাঠামোর মধ্যে আসছে। এতে অবৈধ অনলাইন জুয়া, বাজি, ভার্চুয়াল মুদ্রা, হীরা, কয়েন ইত্যাদি নগদায়ন নিষিদ্ধ করার বিধানও থাকবে।

অনলাইনে ব্যবসা করতে ই-কর্মাস কোম্পানি, শপিং সেন্টার, শপিং মলগুলো কখনো কখনো অবাস্তব ছাড় ও ক্যাশব্যাক অফার দিয়ে অগ্রিম (প্রিপেইড) অর্থ গ্রহণ করছে, যার সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল নেই। এ ধরনের অগ্রিম লেনদেনই শৃঙ্খলার মধ্যে আনার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা নির্দেশিকা-২০২১ অনুসারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পূর্বানুমোদন ছাড়া ক্যাশ ভাউচার, গিফট কার্ড, ক্যাশ কার্ড, রিওয়ার্ড কাড ইস্যু করা, ব্যবহার, বিক্রয় এবং ক্রয় নিষিদ্ধ।

কিন্তু বিভিন্ন ই-কমার্স ফার্ম, শপিং সেন্টার, শপিং মলসহ অনেকেই বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নীতি লঙ্ঘন করে ২৫ শতাংশ থেকে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়ে বিভিন্ন ধরনের গিফট কার্ড, গিফট ভাউচার, ওয়ালেট এবং ক্যাশ ভাউচার অফার করে। এই ধরনের অফার বেশি ঘন ঘন দেওয়া হয়, বিশেষ করে ঈদ, বাংলা নববর্ষ, শারদীয় উৎসবসহ বিভিন্ন উৎসবের সময়। এ ধরনের লাগামহীন ছাড় বন্ধে একটি নীতিমালা তৈরি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে, নন পেমেন্ট সিস্টেমে বিভিন্ন প্রিপেইড পণ্য ইস্যু করার ক্ষেত্রে কঠোর বিধান রয়েছে। প্রিপেইড পণ্য ইস্যু করার নীতিমালায় বলা হয়েছে, নন পেমেন্ট সিস্টেম বেসরকারি সংস্থাগুলো দুই ধরনের প্রিপেইড পণ্য ইস্যু করতে পারবে। যেমন ক্লোজড প্রিপেইড পণ্য এবং সেমি ক্লোজড প্রিপেইড পণ্য। অপর দিকে প্রিপেইড পণ্য ইস্যু করার অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে ব্যাংক, মোবাইলে আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান (এমএফএস) ও পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডার ওপেন প্রিপেইড পণ্য ইস্যু করতে পারবে। যা হোক, ব্যাংক, এমএফএস ও পিএসপি ওপেন প্রিপেইড পণ্য ইস্যু করার ক্ষেত্রে জারি করা নির্দেশিকার আওতায় পড়বে না। খসড়া নিয়ম অনুসারে, ক্লোজড প্রিপেইড পণ্য এবং সেমি ক্লোজড প্রিপেইড পণ্য নামে ইস্যু করা কার্ডগুলো শুধু ইস্যুকারীদের কাছ থেকে পণ্য এবং পরিষেবা কেনার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। ইস্যুকারী এই দুটি পণ্য ফিজিক্যাল বা ডিজিটাল আকারে ইস্যু করার সুযোগ থাকলেও কোনোটিই রিচার্জ করা যাবে না। নীতিমালায় কার্ডের অর্থ অন্য কোনো ভার্চুয়াল মুদ্রায় রূপান্তর বা ক্রয় মুদ্রা যেমন ভার্চুয়াল হীরা, সোনা, এমআর পয়েন্ট, কয়েন, রত্ন ইত্যাদিতে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। ক্যাশ-আউট, ব্যাংকে ট্রান্সফার এবং এটিএম থেকে উত্তোলনসহ প্রিপেইড কার্ড বাংলাদেশি টাকায় রূপান্তর করা যাবে না। ক্লোজড প্রিপেইড কার্ড অথবা সেমি ক্লোজড প্রিপেইড কার্ড অনলাইন জুয়া, বাজি, গেমিং, ইত্যাদিসহ অবৈধ সামগ্রী ক্রয় বা সদস্য হওয়ার জন্য ব্যবহার করা যাবে না। এই কার্ড শুধুমাত্র বাংলাদেশে ব্যবহারের জন্য এবং বিদেশে ব্যবহার করা যাবে না। এ বিষয়ে মতামত চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক খসড়া নির্দেশিকাটি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। নির্দেশিকা অনুসারে, ইস্যুকারী প্রতিষ্ঠান কার্ডের গায়ে দেওয়া মূল্যের ওপর ৩০ শতাংশের বেশি ছাড় দিতে পারবে না। সব ধরনের কার্ডের অভিহিত মূল্য হবে বাংলাদেশি টাকায় এবং নির্দেশিত মূল্যের সমমান কেনাকাটার জন্য ব্যবহার করা যাবে। সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা নির্দেশিকা অনুসারে ক্লোজড প্রিপেইড কার্ড ইস্যু করতে পারেন এবং এই কার্ডের বৈধতা জুলাই থেকে জুন পর্যন্ত এক বছরের জন্য হবে। ইস্যুকারী প্রতিষ্ঠানকে প্রতি বছরের জুন মাসে কার্ড ইস্যু করার পরিকল্পনা জমা দিতে হবে।

তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে কোনো অনুমোদন নিতে হবে না। অন্যদিকে, জুলাই-জুন মেয়াদে কার্ড ইস্যু করতে ইচ্ছুক সংস্থাগুলোকে প্রতি বছরের এপ্রিল মাসে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আবেদন করতে হবে এবং বার্ষিক অনুমোদন পেতে হবে। ক্লোজড প্রিপেইড পণ্য ইস্যু করার জন্য, প্রতিষ্ঠানগুলোকে ন্যূনতম পরিশোধিত মূলধন থাকতে হবে ২০ কোটি টাকা, যেখানে সেমি ক্লোজড প্রিপেইড পণ্যের জন্য প্রয়োজন ৫ কোটি টাকা। তাদের অবশ্যই তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম প্রদর্শন করতে হবে এবং পাঁচ বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন জমা দিতে হবে। এ ছাড়াও, ইস্যুকারী সংস্থাকে অবশ্যই কোম্পানি আইন, ১৯৯৪, বা সমিতি নিবন্ধন আইন, ১৮৬০-এর অধীনে নিবন্ধিত হতে হবে।

সর্বশেষ খবর