মনোহরদী পৌরসভা বাজার এলাকার বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষক মোক্তার উদ্দীন তালুকদারসহ তার পরিবারের সবাই আটরশির পীরের ভক্ত। স্ত্রী শামীমা সুলতানা নাজমা (৫৫), ৪ মেয়ে, দুই নাতি ও ১ নাতনি নিয়ে এ পরিবার। তারা কেউই বাসা থেকে খুব একটা বের হতেন না। নিজের বাড়িতে অনেকটা অবরুদ্ধ হয়ে থাকতেন। এসব নিয়ে প্রতিবেশীরা তাদের জিজ্ঞেস করলেও কোনো সদুত্তর দিতেন না।
তারা প্রতিদিন রাত ৩টা থেকে ভোর পর্যন্ত জিকির করতেন। জানা গেছে, গত সপ্তাহে স্ত্রী নাজমা মারা যান। এর আগে তিনি তার স্বামী ও পরিবারের সদস্যদের বলে রেখেছিলেন, যদি কোনো সময় তিনি মারা যান, তাহলে তার লাশ যেন ঘরে রেখে অপেক্ষা করা হয়। তিন থেকে চার দিন পর তিনি পুনরায় জীবিত হবেন। এরপর গত সোমবার (৫ জুন) শামীমা সুলতানা নাজমা জিকিররত অবস্থায় মারা যান। পরিবারের সদস্যরা তখন বিষয়টি অন্য কাউকে না জানিয়ে নাজমার লাশ খাটের নিচে রেখে দেন। কিন্তু চার দিন পেরিয়ে গেলেও তিনি জীবিত হননি। এরপরও জীবিত হওয়ার আশায় মোক্তার উদ্দীনসহ পরিবারের সদস্যরা অপেক্ষা করতে থাকেন। এরই মধ্যে লাশে পচন ধরে। ধীরে ধীরে দুর্গন্ধ বাইরে ছড়াতে থাকে। দুর্গন্ধ তীব্র হলে এলাকাবাসী পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ এসে তাদের ডাকাডাকি করলে কেউ কোনো সাড়া দেননি। এক পর্যায়ে ঘরের দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকতে বাধ্য হয় পুলিশ। তখন তারা পরিবারের সবাইকেই ঘরের মধ্যে অবস্থান করতে দেখে এবং খাটের নিচে নাজমার লাশ দেখতে পায়। পরে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতালে পাঠায়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পরিবারের সদস্যদের থানায় নিয়ে আসে। সেখান থেকে তাদের মনোহরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। মনোহরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার খন্দকার আনিসুর রহমান গতকাল বলেন, ‘থানা থেকে তাদের গত রাতে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছিল। প্রেশার বেশি থাকায় তাদের চিকিৎসা দিয়েছি। তাদের শারীরিকভাবে অন্য কোনো সমস্যা পাওয়া যায়নি।’ মনোহরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফরিদ উদ্দীন বলেন, ‘পরিবারটি এক পীরের মুরিদ। তারা জিকিররত অবস্থায় নাজমার মৃত্যু হয়েছে বলে আমাদের জানিয়েছেন। পুনরায় জীবিত হবেন- এই ধারণায় তারা লাশ খাটের নিচে রেখে দিয়েছিলেন। আমরা নিহতের স্বামী, চার মেয়ে, দুই নাতি ও এক নাতনিকে জিজ্ঞাসাবাদের পর হাসপাতালে ভর্তি করেছি। এটি স্বাভাবিক না অস্বাভাবিক মৃত্যু- তা ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসার পর বলা যাবে।’