মঙ্গলবার, ১৩ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

অতিরিক্ত করের চাপসহ সংকটে সিমেন্ট শিল্প

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশ সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএমএ)-এর সভাপতি ও ক্রাউন সিমেন্টের ভাইস-চেয়ারম্যান মো. আলমগীর কবির বলেছেন, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের বাজেটে ঘোষিত সিমেন্টের প্রধান কাঁচামাল ‘ক্লিংকার’-এর ওপর অতিরিক্ত আমদানি শুল্ক আরোপসহ অতিরিক্ত অগ্রিম আয়কর, অসমন্বয়যোগ্য অগ্রিম আয়কর, জ্বালানি সংকট, পরিবহন ভাড়া বৃদ্ধি, ডলারের সংকট ও মূল্য বৃদ্ধিসহ নানামুখী সমস্যার কারণে দেশের উদীয়মান খাতগুলোর মধ্যে অন্যতম সিমেন্ট শিল্প খাত বর্তমানে এক কঠিন সময় পার করছে।          

গতকাল স্থানীয় একটি হোটেলে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের বাজেটে ক্লিংকারের ওপর মাত্রাতিরিক্ত (প্রতি মেট্রিক টন ৭০০ টাকা) কাস্টমস ডিউটি আরোপ করা হয়েছে। সিমেন্ট উৎপাদনকারীরা দীর্ঘদিন সিমেন্ট শিল্পের প্রধান কাঁচামাল ‘ক্লিংকার’ ওপর কাস্টমস ডিউটি প্রতি মেট্রিক টন ৫০০ টাকা হতে হ্রাস করে প্রতি মেট্রিক টন ২০০ টাকা ধার্য করার জন্য যৌক্তিকভাবে অনুরোধ করে আসছে। কিন্তু বর্তমান বাজেটে কাস্টমস ডিউটি না কমিয়ে উল্টো প্রতি মেট্রিক টন ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭০০ টাকা ঘোষণা করা হয়েছে, যার ফলশ্রুতিতে সিমেন্ট উৎপাদনকারীরা অত্যন্ত হতাশাগ্রস্ত। কোনো শিল্পের প্রধান কাঁচামালের ওপর কাস্টমস ডিউটি সাধারণত আমদানি মূল্যের ওপর প্রায় ৫% হয়। কিন্তু ‘ক্লিংকার’-এর ওপর সম্প্রতি বাজেট ঘোষণা অনুযায়ী, প্রতি মেট্রিক টন ৭০০ টাকা কাস্টমস ডিউটি ধার্য করার ফলে কাস্টমস ডিউটি দাঁড়ায় আমদানি মূল্যের প্রায় ১২%-১৩%। এভাবে প্রধান কাঁচামালের আমদানি মূল্যের ওপর ১২%-১৩% কাস্টমস ডিউটি (ঈউ) সিমেন্ট শিল্প মালিকদের নিকট অসামঞ্জস্য বলে বিবেচিত হচ্ছে। এর ক্ষতিকর প্রভাব সিমেন্টের বাজারে ভোক্তা-সাধারণের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করতে পারে এবং সার্বিক নির্মাণ কার্যক্রমে গতি হারানোর উপক্রম হতে পারে। 

আলমগীর কবির বলেন, আমদানি পর্যায়ে অগ্রিম আয়কর ক্লিংকারে ২%, স্ল্যাগে ৩%, ফ্লাই এ্যাশে ৩%, লাইমস্টোনে ৫%, জিপসামে ৫% অগ্রিম আয়কর ধার্য এবং চূড়ান্ত দায় হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। আমরা দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছি, আমদানি পর্যায়ে অগ্রিম আয়কর প্রাথমিকভাবে সর্বোচ্চ ০.৫০% ধার্য করা যেতে পারে। কিন্তু অগ্রিম আয়করকে কোনো ক্রমেই চূড়ান্ত দায় হিসেবে বিবেচনা করা সমীচীন হবে না। তাই উক্ত অগ্রিম আয়করকে সমন্বয় করার সুযোগ রাখার জন্য আবেদন জানিয়ে আসছি। তিনি বলেন, আমদানি ছাড়া বর্তমানে বিক্রয় পর্যায়েও ২% হারে অগ্রিম আয়কর ধার্য করা হচ্ছে এবং অগ্রিম আয়করকে চূড়ান্ত দায় হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। সিমেন্ট উৎপাদনকারীরা দীর্ঘর্দিন দাবি করে আসছি যে, বিক্রয় পর্যায়েও অগ্রিম আয়কর প্রাথমিকভাবে সর্বোচ্চ ০.৫০% ধার্য করা যেতে পারে। কিন্তু অগ্রিম আয়করকে কোনো ক্রমে চূড়ান্ত দায় হিসেবে বিবেচনা করা সমীচীন হবে না। তাই এক্ষেত্রেও উক্ত অগ্রিম আয়করকে সমন্বয় করার সুযোগ রাখার জন্য আবেদন জানাচ্ছি। তাছড়া সিমেন্ট উৎপাদনকারীরা যেহেতু আমদানি পর্যায়ে কাঁচামালের ওপর অগ্রিম আয়কর ইতোমধ্যে দিয়ে দিয়েছে, বিক্রয় পর্যায়ের অগ্রিম আয়কর প্রদান করা, দ্বৈত করের শামিল।

আলমগীর কবির আরও বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকার যদি এ খাতটিকে ‘অগ্রাধিকার খাত’ হিসেবে ঘোষণা করে এবং ব্যাংকসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোক প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেয়; তাহলে সিমেন্ট উৎপাদনকারীদের এ দুরবস্থা কিছুটা হলেও কমবে এবং দেশের সিমেন্ট শিল্প খাত সুরক্ষিত হবে। তিনি বলেন, ডলার সংকটের কারণে সিমেন্টের কাঁচামাল আমদানিতে বিঘ্ন হচ্ছে এবং খরচ বেড়ে যাচ্ছে। এর ফলে  ‘এল সি’ খুলতে গিয়ে বিরাট বাধার সম্মুখীন হচ্ছে সিমেন্ট খাতের শিল্প মালিকরা। লোডশেডিংয়ের কারণে উৎপাদন বিঘ্ন হচ্ছে। একই সঙ্গে গ্যাস সংকটের কারণেও প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারছে না। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে সিমেন্টের স্থানীয় পরিবহন ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া সিমেন্ট রপ্তানির ওপর নগদ প্রণোদনার ব্যবস্থা না থাকাতেও এ শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তিনি উল্লেখ করেন, সিমেন্ট উৎপাদনকারীরা সরকারের নিকট আবারও বিনীতভাবে জোড় দাবি জানাচ্ছে যে, বিশেষ করে সিমেন্ট শিল্পের প্রধান কাঁচামাল ’ক্লিংকার’-এর ওপর কাস্টমস ডিউটি বর্তমানে ঘোষিত মেট্রিক টন ৭০০ টাকা থেকে কমিয়ে ২০০ টাকা ধার্য করার পদক্ষেপ নেওয়া হোক এবং অগ্রিম আয়কর  আমদানি ও বিক্রয় পর্যায়ে প্রাথমিকভাবে সর্বোচ্চ ০.৫০% ধার্য করার জন্য যথাযথ নির্দেশ প্রদান করা হোক। অগ্রিম আয়করকে চূড়ান্ত দায় হিসেবে বিবেচনা না করার জন্যও প্রয়োজনীয় নির্দেশাবলি প্রদান করা হোক।

 

 

 

সর্বশেষ খবর