বুধবার, ১৪ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

প্রবীণদের পুষ্টির দিকে নজর দিতে হবে

গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রবীণদের পুষ্টির দিকে নজর দিতে হবে

নবীনদের দিকনির্দেশনা দিয়ে সমাজ গঠনে বড় অবদান রাখেন প্রবীণরা। বটবৃক্ষের মতো ছায়া দিয়ে রাখেন পরিবারকে। অথচ এই জনগোষ্ঠী আজ ভয়াবহ অপুষ্টি ও অবহেলার শিকার। পরিবারের অন্য সদস্যদের কথা ভেবে তারা নিজেরাই কম খাবার খান। অনেক জায়গায় হন অবহেলিত। অপুষ্টির কারণে তারা আক্রান্ত হচ্ছেন নানা রোগব্যাধিতে। পরিণত হচ্ছেন পরিবারের বোঝায়। অথচ পর্যাপ্ত পুষ্টি নিশ্চিত করতে পারলে প্রবীণ এ জনগোষ্ঠীকে ভালো রাখার পাশাপাশি সম্পদে পরিণত করা সম্ভব। সরকারের পাশাপাশি পরিবারগুলোকে এ ব্যাপারে বিশেষ নজর দিতে হবে। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিন আয়োজিত প্রবীণ পুষ্টি বিষয়ক এক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব কথা বলেন।

জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেড (ইডব্লিউএমজিএল)-এর কনফারেন্স হলে আয়োজিত বৈঠকে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ। কালের কণ্ঠের প্রধান সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলনের সঞ্চালনায় ও জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক অধ্যাপক ডা. শাহ গোলাম নবীর সভাপতিত্বে বৈঠকে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পুষ্টিসেবার লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. মো. মিজানুর রহমান। প্রধান বক্তা ছিলেন আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মো. এখলাসুর রহমান। বক্তব্য দেন জাতীয় পুষ্টিসেবার প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. মো. এম ইসলাম বুলবুল, নিউট্রিশন ইন্টারন্যাশনালের ডেপুটি কান্ট্রি ডিরেক্টর আসফিয়া আজিম, সেভ দি চিলড্রেনের সূচনা প্রোগ্রামের চিফ অব পার্টি ডা. শেখ শাহেদ রহমান ও ব্র্যাকের এইচএনপিপির প্রোগ্রাম ম্যানেজার মিথুন গুপ্তা। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন তেজগাঁওয়ের উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. গাজী আহমেদ আহসান। ‘মজবুত হলে পুষ্টির ভিত স্মার্ট বাংলাদেশ হবে নিশ্চিত’ প্রতিপাদ্যে জাতীয় পুষ্টি সপ্তাহ ২০২৩ (৭-১৩ জুন)-এর শেষ দিনে এ গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে বাংলাদেশ প্রতিদিনের নির্বাহী সম্পাদক আবু তাহের বলেন, জাতীয় পুষ্টি সপ্তাহের শেষ দিনে আমরা এ আলোচনার আয়োজন করেছি। আমাদের পুষ্টিহীনতার সমস্যা যেমন আছে, আবার অতি পুষ্টির কারণে ডায়াবেটিস, হৃদরোগসহ নানা রোগে আক্রান্তের ঘটনাও আছে। তাই উপযুক্ত পুষ্টি কীভাবে আমরা গ্রহণ করতে পারি তা জানা জরুরি।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, বর্তমানে আমাদের দেশে ওয়েস্টার্ন কালচারের কারণে প্রবীণদের অনেক ধরনের অভ্যাসগত পরিবর্তন হচ্ছে। বিশেষ করে ঘুমের রুটিনের। বর্তমান সরকার প্রবীণদের জন্য অনেক ভালো কাজ করছে, তবে পরিবার যদি প্রবীণদের প্রতি সচেতন বা দায়িত্বশীল না হয় তাহলে লাভ হবে না। প্রবীণদের বোঝা মনে করা যাবে না। পশ্চিমা দেশে কেউ কারও ওপর নির্ভরশীল নয়। তবে সেখানে সামাজিক সুরক্ষা অনেক বেশি। রাষ্ট্র তাদের দায়িত্ব নেয়। কিন্তু আমাদের দেশের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। এখানে পরিবারকেই প্রবীণদের দায়িত্ব নিতে হবে। প্রবীণদের জন্য ওভার নিউট্রিশন ক্ষতিকর উল্লেখ করে অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, ওভার নিউট্রিশন এবং আন্ডার নিউট্রিশন এ দুই ধরনের কেস আমাদের দেশে পাওয়া যায়। বেশি পরিমাণে খাবার খেলে ওভার নিউট্রিশন হয়, যা স্বাস্থের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। বেশি খাবার না খেয়ে পরিমিত এবং পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। অন্য বক্তারা বলেন, দেশে মানুষের গড় আয়ু বাড়ছে। ফলে প্রবীণ বাড়ছে। এই প্রবীণরা বোঝা নয়, সম্পদ। তাদের যতেœ রাখতে হবে। তাদের পর্যাপ্ত পুষ্টি সরবরাহ করতে পারলে রোগব্যাধি কম হবে। তারা ভালো থাকবেন। মনে রাখতে হবে, বয়স বাড়লে শারীরিক সমস্যার পাশাপাশি মানসিক সমস্যাও বাড়ে। প্রবীণরা একাকিত্বে ভোগেন। নিজেকে অপ্রয়োজনীয় মনে করেন। আর মন খারাপ থাকলে খাবারেও অরুচি আসে। এভাবে দীর্ঘদিন থাকলে অপুষ্টি দেখা দেয়, রোগব্যাধি বাড়ে। তাই প্রবীণদের গুরুত্ব দিতে হবে। সম্মান দিতে হবে। তাদের আনন্দে রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে, যৌবনে এই প্রবীণরাই পরিবারের, সমাজের ও দেশের হাল ধরেছিলেন।

সর্বশেষ খবর