বুধবার, ১৪ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা
পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দুই দলের

দেশে কথা বলার অধিকার নেই : ফখরুল

বিএনপিকে বাধার অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশে কথা বলার অধিকার নেই : ফখরুল

পুলিশের বাধার মুখে ফরিদপুরসহ বিভিন্ন স্থানে পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি। রাজধানী ঢাকায় মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপিসহ সারা দেশে মোট ১০টি সাংগঠনিক মহানগরীতে গতকাল দলটি এ কর্মসূচি পালন করে। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘এ দেশটা কারও বাবার নয়। এটা আপনার-আমার সবার। সবাই মুক্তিযুদ্ধ করে এ দেশটাকে আমরা স্বাধীন করেছি। কিন্তু সেই দেশে কথা বলার কোনো অধিকার নেই। নিরাপত্তা  নেই। বিদ্যুৎ নেই, গ্যাস নেই। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির অসহনীয় খড়্গ মানুষের জীবনকে বিষিয়ে তুলেছে। এ অবস্থা চলতে পারে না।’

বিদ্যুতের অসহনীয় নজিরবিহীন লোডশেডিং, বিদ্যুৎ খাতে দুর্নীতি ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি মহানগরী পর্যায়ে এই পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করে।

মহাখালীতে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সমাবেশে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী একটি হারিকেন দেখিয়ে নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, এই হারিকেন বর্তমান সরকারের হাতে ধরিয়ে দিতে হবে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ পরাজিত হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগের নির্ভরশীলতা জনগণের ওপর নেই। তাদের নির্ভরশীলতা পুলিশ, র‌্যাব ও আনসারের একাংশের ওপর। এই অবৈধ ‘অনির্বাচিত’ সরকারকে ক্ষমতায় রাখার জন্য বেআইনিভাবে যারা কাজ করছেন, তাদের এ অন্যায় পথ থেকে সরে আসার জন্য তিনি অনুরোধ জানান। ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে পদযাত্রা কর্মসূচিতে অংশ নেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, আসাদুজ্জামান রিপন, আমিনুল হক, কেন্দ্রীয় নেতা তাবিথ আউয়াল, আবদুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল, শহিদুল ইসলাম বাবুল, কামরুজ্জামান রতন, মাহবুবুল হাসান ভূঁইয়া পিংকু, ফখরুল ইসলাম রবিন, রেজওয়ানুল হক রিয়াজ, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এম কফিল উদ্দিন আহমেদ, মহানগর উত্তর যুগ্ম-আহ্বায়ক আতাউর রহমান চেয়ারম্যান, দারুস সালাম থানা বিএনপির আহ্বায়ক এস এ সিদ্দিক সাজু, মিরপুর থানা বিএনপির আবদুল মতিন, দেলোয়ার হোসেন দুলু, দক্ষিণখান থানা বিএনপির মোতালেব হোসেন রতন, দেওয়ান মো. নাজিম উদ্দীনসহ ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কয়েক হাজার নেতা-কর্মী অংশ নেন।

মির্জা ফখরুল : ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির পদযাত্রাপূর্ব সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ভিসানীতির কারণে সরকার বেকায়দায় পড়ে গেছে। তাই তারা পাচার করা টাকা নিয়ে আসছে। আবার সেই টাকায় আড়াই পার্সেন্ট ইনসেনটিভ দিতে হচ্ছে। এখন টাকা পাচারকারীদের পুরস্কার দেওয়া শুরু করেছে সরকার। অর্থাৎ এখন চুরি করেও পুরস্কার পাওয়া যায়! তবু সরকারের গলাবাজি শেষ হয় না। মিডিয়ার ওপর খড়্গ বসে আছে। সাংবাদিকরা মন খুলে কিছু লিখতে পারেন না, বলতে পারেন না। গতকাল বিকালে রাজধানীর গোপীবাগে সাদেক হোসেন খোকা কমিউনিটি সেন্টারের সামনে অনুষ্ঠিত সভায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণের বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, বিএনপি নেতা মীর সরাফত আলী সপু, শিরিন সুলতানা, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাদেক খান, কৃষক দলের হাসান জারিফ তুহিন, ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু আশফাক, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক নবী উল্লাহ নবী, আ ন ম সাইফুল ইসলাম, তানভীর আহমেদ রবীন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য অ্যাডভোকেট মকবুল হোসেন সরদার, শ্রমিক দল ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক মো. সুমন ভূঁইয়া ও সদস্য সচিব বদরুল আলম সবুজ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সম্পূর্ণ মিথ্যা মামলা দিয়ে এই সরকার আমাদের বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে জেলে আটকে রেখেছিল। এখন ঘরে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে। আমাদের নেতা তারেক রহমানকে বিদেশে নির্বাসিত করে রেখেছে সরকার। আমাদের এমন কোনো নেতা নেই যার বিরুদ্ধে একের অধিক মামলা নেই।’ তিনি বলেন, ‘এই সরকারের একটাই মাত্র কাজ, জনগণের পকেট কাটা। গ্রামে, বাজারে দেখেন না, পকেট কাটা? বলেন না, পকেট কাটা ধর ধর? এখন সময় আসছে আসল পকেট কাটাকে ধরার। এমন একটা জিনিস নেই, যেখান থেকে সরকার পকেট কাটে না। মোবাইল থেকে তারা পকেট কেটে নেয়। বিদ্যুতের কার্ডে টাকা ঢোকালে দেখবেন ৩০০ টাকা নেই। কেটে নিয়ে গেছে শেখ হাসিনা সরকার। এক বছরে আমাদের ৭৮ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়। সরকার এখন বলে, কয়লা নাই, গ্যাস নাই। কেন ভাই? টাকা তো আগে নিয়ে নিছ। টাকা কই গেল? সব পাচার করেছ?’ বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী ফয়জুল করীমকে কেন্দ্র করে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দেওয়া বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন কি চেয়েছিলেন বরিশালে মেয়র প্রার্থী মারা যাক? ধিক্কার জানাই তার এমন কথায়!’ মির্জা ফখরুল বলেন, সিরাজুল আলম খান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ছিলেন। কিন্তু এই আওয়ামী লীগ তাঁকে মৃত্যুর পর সম্মান পর্যন্ত দিল না। একটি শোকবার্তাও দেয়নি এই সরকার। কারণ তিনি এদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন। এদের (সরকারের) তৈরি রক্ষীবাহিনীর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন। সে সময় এই রক্ষীবাহিনী ৪০ হাজার মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করেছিল।

এদিকে, দেশের বিভিন্ন্স্থানে পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি। প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য।

ফরিদপুর : বেলা ১১টার দিকে সিলেট শহরের কাঠপট্টি বিএনপির কার্যালয়ের সামনে থেকে পদযাত্রাটি বের হয়ে ব্যাংক এশিয়ার সামনে এলে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ধাক্কাধাক্কি হয়। পরে পুলিশের বাঁধা উপেক্ষা করে পদযাত্রাটি তিতুমীর মার্কেটের সামনে গিয়ে শেষ হয়। 

রাজশাহী : বিকালে রাজশাহী নগরীর ভুবনমোহন পার্কে পথসভার পর পদযাত্রা বের করে নগরীর মনিচত্বর, সাহেববাজার জিরোপয়েন্ট, গণকপাড়া, সোনাদীঘির মোড় হয়ে সদর হাসপাতাল মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। এতে বক্তব্য রাখেন সাবেক মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, দলের ত্রাণ ও পুনর্বাবস বিষয়ক সহ সম্পাদক শফিকুল হক মিলন, বিএনপির বিভাগীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক শাহিন শওকত। সভাপতিত্ব করেন মহানগর বিএনপির আহবায়ক এরশাদ আলী ঈশা।

গাজীপুর : মহানগর বিএনপির সভাপতি মো: শওকত হোসেন সরকারের নেতৃত্বে পদযাত্রাটি রাজবাড়ী রোড হয়ে গাজীপুর সিটির দলীয় কার্যালয় প্রাঙ্গনে গিয়ে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। বক্তব্য রাখেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা হাসান উদ্দিন সরকার, ডা: মাজহারুল আলম, মীর হালিমুজ্জামান ননি, রাকিব উদ্দিন সরকার পাপ্পুসহ মহানগর বিএনপি ও বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা।

কুমিল্লা : বিকালে নগরীর লিবার্টি মোড় থেকে পদযাত্রাটি শুরু হয়ে কুমিল্লার রাজগঞ্জে গিয়ে পৌঁছে। সেখানে পুলিশ রাস্তায় দাঁড়িয়ে বাধার সৃষ্টি করলে তারা পুনরায় লিবার্টি মোড়ে ফিরে আসে। পরে কান্দিরপাড় দলীয় অফিসের সামনে সংক্ষিপ্ত সভায় বক্তব্য রাখেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ মোস্তাক মিয়া, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক উদবাতুল বারী আবু, সদস্য সচিব ইউসুফ মোল্লা টিপু প্রমুখ।

সিলেট : বেলা ২টায় নগরীর রেজিস্ট্রারি মাঠ থেকে দলের নেতাকর্মীরা পদযাত্রা শুরু করে উপশহর পয়েন্টে গিয়ে শেষ হয়। এর আগে রেজিস্ট্রারি মাঠে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

সর্বশেষ খবর