বুধবার, ১৪ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

পাল্টে যাচ্ছে কাশ্মীর

মুহাম্মদ সেলিম, কাশ্মীর (ভারত) থেকে ফিরে

পাল্টে যাচ্ছে কাশ্মীর

‘ভূূ-স্বর্গ’ কাশ্মীরের জীবনযাত্রা পাল্টে যাচ্ছে। এক সময়ের রক্তাক্ত এই জনপদে বইছে শান্তির হাওয়া। নেই আগের মতো কথায় কথায় রক্তপাত। হানাহানি কিংবা হরতাল। চার বছরের ব্যবধানে বিরোধপূর্ণ এ অঞ্চলে সংঘাতের ঘটনা কমেছে ৪৫ শতাংশ। এর প্রভাব পড়েছে জীবনযাত্রায়; কমছে অর্থনৈতিক অস্থিরতা। কাশ্মীরিরা ফিরে পাচ্ছেন সচ্ছলতা।

সম্প্রতি ভারতীয় সংসদে এক প্রশ্নের উত্তরে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই জানান, গত চার বছরের ব্যবধানে জম্মু-কাশ্মীরে জঙ্গিদের দ্বারা পরিচালিত ঘটনা এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা কমেছে ৪৫ শতাংশ। জঙ্গি হামলায় স্থানীয়দের মৃত্যুর হার কমেছে ২৩ শতাংশ। নিরাপত্তা বাহিনীর শহীদের সংখ্যা কমেছে ৬৬ শতাংশ। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসায় সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের সংখ্যাও কমে এসেছে।

তিক্ত অতীতের বর্ণনা দিয়ে কাশ্মীরের পেহেলগামের হোটেল ডলফিন ইনের ম্যানেজার আজিজ ইয়ানি বলেন, ‘আগে একবার হরতাল বা বয়কট শুরু হলে তা চলত মাসের পর মাস। ঘর থেকে বের হওয়া যেত না। তাই পরিবার-পরিজন নিয়ে অল্প খেয়ে দিন অতিবাহিত করতে হতো। এখন পরিস্থিতি সম্পূর্ণ পাল্টে গেছে। বিভিন্ন দেশের পর্যটক আসছে। ব্যবসা বেড়েছে। অর্থনৈতিক অস্থিরতা কমেছে। সচ্ছলতা ফিরে পেয়েছি। এতে আমরা খুবই খুশি।’ জানা যায়, কাশ্মীরের বাতাসে এক সময় ছিল বারুদের গন্ধ। জঙ্গি কার্যকলাপ আর ভারতীয় সেনাবাহিনীর দ্বন্দ্বের কারণে লাগাতার হরতাল ও বয়কট ছিল স্থানীয়দের নিত্যসঙ্গী। ক্রমশ কমতে থাকে কাশ্মীরিদের আয়-রোজগার। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে উগ্রপন্থি সংগঠনগুলোর কাশ্মীরিদের ‘স্বাধীনতার’ স্বপ্ন দেখিয়ে টানতে থাকে নিজেদের দলে। ফলে ভূ-স্বর্গ পরিণত হয় রক্তাক্ত জনপদে। ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট ভারতের সংসদে সংবিধানের ৩৭০ ধারার পাশাপাশি ৩৫-এরও বিলোপ ঘটে। ফলে জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখ কেন্দ্রশাসিত দুটি অঞ্চলে পরিণত হয়। এরপর থেকে কাশ্মীরিদের জন্য নিশ্চিত করা হচ্ছে সরকারি বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা। প্রয়োগ হচ্ছে ভারতের ৮৯০টি কেন্দ্রীয় সরকারি আইন। সামাজিক-রাজনৈতিক সমতা, শিক্ষা, চাকরিসহ সব ক্ষেত্রে সুযোগ পাচ্ছেন কাশ্মীরিরা। দলিত, অনগ্রসররাও পাচ্ছেন প্রাপ্য অধিকার। ফলে কাশ্মীরের পরিস্থিতি ক্রমশ বদলাচ্ছে। ভারতীয় সেনাবাহিনী এবং সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা এখানে দেখার মতো। এক সময়ের জঙ্গিদের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত প্রত্যন্ত অঞ্চলে খোলা হচ্ছে স্কুল, কলেজ। হচ্ছে গ্রামপ্রধান নির্বাচন। সাধারণ মানুষ যুক্ত হচ্ছে মূল স্রোতের সঙ্গে। গ্রাম প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে সেনাবাহিনীর কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন গ্রামবাসী। পরিস্থিতি পাল্টে যাওয়ায় কাশ্মীরে বেড়েছে পর্যটকের পদচারণ। বেড়েছে ব্যবসা-বাণিজ্য। ফলে কাশ্মীরের অর্থনীতির পালে লেগেছে হাওয়া। চট্টগ্রাম থেকে কাশ্মীরে ভ্রমণে যাওয়া বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আবদুর রহিম বলেন, ‘এক দশক আগে থেকেই কাশ্মীরে ভ্রমণে যাওয়ার চিন্তা ছিল। কিন্তু রাজনৈতিক পরিস্থিতির কথা চিন্তা করে যাওয়ার সাহস হয়নি। এখন সম্পূর্ণরূপে পাল্টে গেছে কাশ্মীরের রাজনৈতিক চিত্র। নেই আগের মতো রক্তপাত ও হানাহানি। তাই এলাম ‘কাশ্মীরে ভ্রমণে।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর